কলকাতার উন্নতিকল্পে বিভিন্ন কাজের সম্প্রসারণের জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থার ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় মিনিবাসের নতুন পারমিটের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন করে কোনো পারমিটের আবেদন জমা পড়ছেনা বেশ কিছুদিন হল। বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় ৩০টি রুটের মিনিবাস। বিজয়গড়-হাওড়া, কুঁদঘাট-বিবাদ বাগ, সিঁথির মোড়, বেকবাগান সহ আরও কয়েকটি রুটে মিনিবাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে বিলাসবহুল যাত্রী পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে মিনিবাস চালু করেছিল কংগ্রেস সরকার। সেই সময় আইন করে বলা হয়েছিল মিনিবাসে কেউ দাঁড়িয়ে যেতে পারবেনা। তৎকালীন সময়ে মিনি বাসের ভাড়া ছিল ন্যূনতম ৫০ পয়সা। সাধারণ বাসের ভাড়া সেই সময় ছিল মাত্র ১০ পয়সা। পরবর্তীতে যদিও বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া এবং আসন সংখ্যা বেড়েছিল। শুরুর ১৬ আসনের জায়গায় বর্তমানে মিনিবাসের আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১। শুরুর আইনের পরিবর্তন ঘটিয়ে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যাওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। ২০১০ এ রদবদলের ফলে সাধারণ বাসের সঙ্গে মিনিবাসের ফারাক দাঁড়ায় ১ টাকা।
পরিবহনের উন্নতির জন্য গোটা কলকাতা মুড়ে দেওয়া হবে মেট্রো রেলের মাধ্যমে। সেই কারণে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য বিবাদী বাগ মিনিবাস স্ট্যান্ড বন্ধ হয়ে রয়েছে। সেখানে আগে ১৮টি রুটের বাস দাঁড়াত। এছাড়া ডানলপ-বিবাদী বাগ, গড়িয়া-বিবাদী বাগের মতো কয়েকটি রুটের বাস নিয়মিত বিবাদী বাগ গেলেও তাদের স্ট্যান্ড নেই। সেই কারনে এই রুটগুলিতে বাসের সংখ্যা দিনের পর দিন কমে আসছে। কিছু রুটের স্ট্যান্ড হাওড়া অথবা করুণাময়ীতে সরানো হয়েছে। কলকাতার পাবলিক ভেহিকেলস ডিপার্টমেন্টের হিসেবে বলছে, কলকাতা কেন্দ্রিক মিনিবাস রুটের সংখ্যা ১৪০। রুটগুলিতে প্রায় ৩০০০ এরও বেশি বাসের পারমিট দেওয়া হয়েছে, অথচ দৈনিক ৮০০ রও কম বাস পথে নামছে বলে দাবি করছেন মিনিবাস মালিকদের সংগঠন মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি। শনি-রবিবার সংখ্যাটা আরো কম থাকে। তাঁদের মতে মিনিবাসের জন্য দেড় বছরে কোনও আবেদনই জমা পড়েনি।
পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আগামী দশকের শেষ দিকে হয়ত কলকাতার পথে মিনিবাস অবলুপ্তই হয়ে যাবে। মিনিবাস অপারেটার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপ নারায়ন বসু আশঙ্কা করছেন, ২০২৪ সালের পর হয়ত আর কোনও মিনিবাস কলকাতার রাস্তায় দেখা যাবেনা। কারণ বর্তমানে যে বাসগুলি চলছে, সেগুলির ১৫ বছরের মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে ওই সময়ের মধ্যে। জ্বালানি থেকে যন্ত্রাংশ সবকিছুরই দাম বাড়ছে তুলনায় ভাড়া সেভাবে বাড়ছেনা। তাছাড়া রয়েছে চালক ও কন্ডাক্টরের অভাব।
তবে কলকাতার মানুষের কাছে খুশির খবর হল শহরের রাস্তায় বেশ কিছুদিন ধরে এসি বাস এবং ইলেকট্রিক এসি বাস চলছে রমরমিয়ে। পরিবহন দফতর থেকে ওই বাসগুলি আরো বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, পুজোর আগেই ৩০/৪০ টা আরো নতুন বাস ছাড়া হবে বেশ কিছু নতুন রুটে। এই বাসগুলির ভাড়া একটু বেশি হলেও যাতায়াতের সুবিধার জন্য যাত্রীরা বাসগুলিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাই বলা যায়, প্রতিযোগিতার বাজারে মিনিবাস হয়তো এঁটে উঠতে পারছেনা। সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ঝাঁ চকচকে এসি বাস এবং ইলেকট্রিক বাস।