নাইনটি নট আউট !
সবসময় একটা না একটা ভুল করেই চলেছে। আবার শুধরেও নিচ্ছে-
লাল শর্টস, হলুদ জুতো। সাদা গ্লাভস পরা চার আঙুলের এক ইঁদুর। প্রথমে তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মর্টিমার’। কিন্তু পরে নাম বদলে হয়ে গেল ‘মিকি’। পদবী তার নিজস্ব স্বভাবের, মাউস।
সেই শুরু। তারপরে আরও কত ফিচার, ভিডিয়ো গেম, হাতঘ়ড়ি-জামাকাপড়-পেনসিল বক্স থেকে শুরু করে সবরকম প্রিয় জিনিসে দেখা গিয়েছে তাকে। মিকির অবিরাম যাত্রা উদ্যাপিত হয় মিকি উৎসবে।ইঁদুরের জন্মদিনে।
আজকের দিনেই সেলুলয়েড থেকে কমিকসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছিল সে। পৃথিবীর কাছে সে তখনই আইকন।১৯২৮ এ ‘স্টিমবোট উইলি’ নামের শর্ট ফিল্মের হাত ধরেই প্রথম সকলের চোখ ধাঁধানো।
আকশে যুদ্ধের মেঘ।সময়টা অস্থির। এক দশক হয়েছে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ তার মারণ খেলা শেষ করেছে। মানুষের দরকার ছিল অন্য আবহাওয়া। সরল আনন্দের রাস্তা খুঁজছিল সকলে। সেসময় কার্টুন বালিশ হয়ে ঘুম পারিয়েছিল অনেক অশান্ত মনকে।
নিউ ইয়র্ক থেকে ট্রেনে লস এঞ্জেলেস শহরে যাচ্ছিলেন ওয়াল্ট ডিজনি ৷ সেই সময়েই ফিগারটা তাঁর মাথায় আসে৷ অবশেষে ১৯২৮ সালে অ্যানিমেটেড এই কার্টুন চরিত্রটি তৈরি করেন ওয়াল্ট ডিজনি ও আব আইওয়ের্কস৷
মিকি একা থেমে থাকেনি। ‘ওসওয়াল্ড দ্য লাকি র্যাবিট’-এর পরিবর্তে মিকি সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে মিনি, প্লুটো, ডোনাল্ড-গুফিকে নিয়ে। দীর্ঘ যাত্রায় মিকির পাশাপাশি তৈরি হয়েছে নতুন চরিত্ররা। তারা কি মিকির প্রতিদ্বন্দ্বী?এ প্রশ্ন স্বপ্নে কল্পনা করাও অসম্ভব। ১৯২৯ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যেই মিকি মাউসের ফ্যানক্লাবের সদস্য হয় ১০ লক্ষ শিশু।
আপনি জানেন কি, এই প্রেমিক যুগলের জন্মদিন একই দিনে?মানে মিকি, মিনি। কীভাবে? ১৯৩৩ সালে ওয়াল্ট ডিজনি ঘোষণা করেন ১ অক্টোবর মিকি মাউসের জন্মদিন, কারণ ১৯২৮ এ এদিনই প্রথম তার ফিল্ম বেরোয়। যদিও ওই বছরই ডিজনি আর্কাইভসের প্রতিষ্ঠাতা ডেভ স্মিথ এই দিনটি পাল্টে মিকির জন্মদিন করেন ১৮ নভেম্বর, ‘স্টিমবোট উইলি’র প্রিমিয়ারের দিন। আবার এই একই দিনে মিকি ও মিনিকে একসাথে বিশ্বের সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তার মানে এটি ছিল মিনিরও জন্মদিন।
১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বর ‘ওয়াক অফ ফেমে’র স্টার পাওয়া প্রথম ডিজনি চরিত্রই ছিল না শুধু, ছিল প্রথম স্টার পাওয়া কার্টুন চরিত্র,মিকি মাউস। এরপর আরো ছয়টি ডিজনি চরিত্র এ সম্মানের ভাগীদার । তারা হলো- স্নো হোয়াইট (১৯৮৭), কার্মিট দ্য ফ্রগ (২০০২), ডোনাল্ড ডাক (২০০৪), উইনি দ্য পুহ (২০০৬), টিংকার বেল (২০১০) এবং দ্য মাপেটস (২০১২)।
কার্টুনে মিকি’র জীবন ১৯৯৪ সালে শেষ হয়ে গেলেও তার প্রভাব এখনও একটুও কমেনি। রাজনৈতিক জগতে আজও বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে মিকি।
১৯৬৯ সালের প্যারোডি কমিক ‘মিকি মাউস ইন ভিয়েতনাম’।ভিয়েতনাম যুদ্ধকে ঘিরে মার্কিনী হঠকারিতার জবাব।৮০-র দশকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার ইউরোপিয়ান সরকার কে কটাক্ষ করেছিলেন ‘মিকি মাউস পার্লামেন্ট’ বলে।
শুধু তাই নয়, একটা সময় অভিনেত্রী মেরি পিকফোর্ড কিংবা প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামের সঙ্গে মিকি মাউসও মার্কিনিদের কাছে হয়ে ওঠে প্রিয় একটি নাম৷ আর আজ তো দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির আইকন সে৷
মিকির বয়স বেড়েছে৷ তবুও খুব একটা বদলায়নি সে। ভুঁড়ি হয়েছে মিকির৷ মজার মজার সব কান্ড কীর্তি করে ৯২ বছর ধরে বিশ্ববাসীকে নির্ভেজাল আনন্দ দিয়ে আসছে মিকি ৷
স্কুল ছুটির দুপুর, বা স্কুল শেষে ছুটে পালিয়ে সটান টিভিতে কার্টুন নেটওয়ার্ক।এই ছিল ডেইলি রুটিন। অঙ্কের খাতার ভাঁজে মিকির স্তিকার। আর পাতায় পাতায় অঙ্ক- জ্যামিতি-নামতার ফাঁকে কাঁচা হাতের বাঁকা রেখায় মিকি-মিনির অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। স্বপ্নের নৌকা পাড়ি দিত ডিজনিল্যান্ডের আজব দুনিয়ায়। সেখানে না ছিল প্রথম হওয়ার তাড়া না ট্র্যাফিক জ্যাম। রোজের ইঁদুর দৌড়ে যারা নিজেদের সামিল করতে ব্যস্ত- সেই ভিড়ে মিকি-মিনি-র জায়গা আছে কি? কার্টুন কি শুধুই কার্টুন, সে আসলে জীবন শেখায়।