মার্ভেল কমিকসের প্রচণ্ড ভক্ত ছিলেন । স্বপ্ন দেখতেন একদিন মার্ভেল সিরিজে অভিনয় করবেন। স্পাইডার ম্যানের ভূমিকায়। শুধু মাত্র সেই কারনেই কিনে নিতে চেয়েছিলেন গোটা কোম্পানিটাই। চার্লস জেভিয়ারের চরিত্রে অভিনয় করার কথা ভেবেছিলেন। শোনা যায় কথাবার্তাও নাকি শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরে কাস্টিং চেঞ্জ হয়ে যায়। কাস্টিং ডিরেক্টর সেই রোলে প্যাট্রিক স্টিউয়ার্টকে আনেন।
হাজার এক ক্ষ্যাপামি ছিল তাঁর। বহু রকম পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালিয়েছেন নিজেকে নিয়ে। নিজের জীবন নিয়ে। তাই তিনি শিল্পী। তাই তিনি ‘ কিং অফ পপ ’। মাইকেল জ্যাকসন।
ভারতের বিখ্যাত ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রার থেকে শেরওয়ানি কিনেছিলেন মাইকেল। এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে উল্লেখ করেছিলেন ভারতীয় পোশাক প্রীতির কথা। ডিজাইনারের নাম উল্লেখ করতেও ভোলেননি।
নব্বই এর দশকে ভারতে এসেছিলেন কনসার্ট করতে। আন্ধেরি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠান করেন। মাইকেল জ্যাকসনের মুম্বই কনসার্ট ভারতের বিনোদন জগতে ইতিহাস হয়ে আছে। আজ পৃথিবীর কোনও কোনও রেডিও স্টেশন তাঁর গান বন্ধ করে দিলেও এমজে এমজে-ই।
মৃত্যুর পরেও পিছু ছাড়েনি বিতর্ক। কিন্তু তাঁর ফ্যানেরা তাঁকে ভোলেনি। বেঁচে থাকলে বয়স হত ৬১ বছর। পপ মিউজিকের ইতিহাসে তাঁর মতো আইকন আর কেউ আসেনি। গানের জগতে আজও তিনি কিং। মিউজিক স্টোরথেকে শুরু করে ডিজিটাল মিডিয়ার রেটিং সব জায়গাতেই আজও তিনি টপ লিস্টে।
সম্প্রতি বিতর্কের জেরে এম টিভির ভিডিও ভ্যাংগার্ড অ্যাওয়ার্ড থেকে নাম ছেঁটে ফেলা হয়েছে জ্যাকসনকে। তাঁর নামেই ছিল এই পুরস্কার। একদিন তাঁর গানের জন্যই জনপ্রিয় হয় এমটিভি।
১৯৫৮ সালের ৫ আগস্ট আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় তাঁর জন্ম হয়। এক অ্যাফ্রো-আমেরিকান পরিবারে। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। মাত্র ৫ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন গানের কেরিয়ার। তাঁর দাদাদের সঙ্গে। জ্যাকস- ফাইভ নামে গানের দলে। জ্যাকসন আর তাঁর চার দাদা মিলে স্টেজে গান করতেন।
১৯৬৯এ অ্যালবাম রিলিজ করে। ১৯৭১ সালে নিজে একক ভাবে পথ চলা শুরু করেন গানের জগতে। ১৯৭৯ তে তাঁর প্রথম সোলো অ্যালবাম রিলিজ করে। ২০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল।
পাঁচটি সংগীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে। সেগুলো হলো ‘অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টরি (১৯৯৫)। পপ অ্যালবাম ‘থ্রিলার’ টপ লিস্টে ছিল ৩৭ সপ্তাহ।
গোটা কেরিয়ারে ৩৮ বার গ্রামির জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। জিতেছিলেন ১৩ বার। ১৯৮৪তে একরাএ এক্সঙ্গে আটটা গ্রামি জিতেছিলেন ।গানের জগতের আর কোনও তারকা এমন সম্মান পাননি। ১৯৯৩ তে গ্র্যামি লেজেন্ড অ্যাওয়ার্ড। ২০১০-এ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। এত বছর হয়ে গিয়েছে আজও কেউ তাঁর গ্র্যামির রেকর্ড ভাঙতে পারেনি।
এক দশক আগে চিরদিনের মত থেমে যায় তাঁর কন্ঠ। গান থামিয়ে বিদায় নেন ‘কিং অফ পপ’ মাইকেল জ্যাকসন। কিন্ত সারা পৃথিবীর শ্রোতাদের কাছে আজও তিনি ‘সেনশেসন’। উন্মাদনা অটুট তাঁর জন্য। তাঁর গানের জন্য। হাজার বিতর্কের রেশ স্পর্শ করতে পারে না সেই ভালবাসাকে।