ফুটবলের মাঠে তিনি 'অ্যাসিস্ট কিং'। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি 'অ্যাসিস্ট কিং'। মাঠে দলের গোল দরকার হলে সবসময় এগিয়ে এসেছে সাহায্যের পা, আর মাঠের বাইরে মানবতার জন্য এগিয়ে যায় সাহায্যের হাত। তিনি মেসুট ওজিল।
তুরস্ক বংশজাত জার্মান ফুটবলারের ফুটবল জীবন যতটা তারায় তারায় ভরা তার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল মাঠের বাইরে তাঁর মানবতামূলক কাজ এবং ব্যবহার। কয়েকটা ঘটনা তার প্রমাণ দেয়।
অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে প্রথম লেগে কর্নারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আর্সেনাল তারকা ওজিল। ঠিক তখনই গ্যালারি থেকে এক টুকরো রুটি ছুড়ে মারা হয় তাঁকে। জার্মান মিডফিল্ডারের কাণ্ডে অবাক হয়েছিল ফুটবল বিশ্ব। পায়ের সামনে থাকা রুটির টুকরোটি হাতে তুলে নিয়ে চুমু খান। এরপর কপাল ছুঁয়ে পাশে সরিয়ে রাখেন। পরে বলেছিলেন, অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছেন। ওই ছোট্ট রুটির টুকরোর দাম অনেক। তিনি জানেন ওই রুটিই কারোর সারাদিনের খাবার হয়ে যেতে পারে।
এখন তিনি তুরস্কের ক্লাবেই খেলছেন। সম্প্রতি তিনি দক্ষিন এশিয়ার ফুটবলের উন্নতির জন্য ব্র্যাডফোর্ডে ফুটবল সেন্টার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছেন। ওজিল এ নিয়ে বলেছেন,"আমি নিজেই জাতিগত বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এক পরিবেশ থেকে উঠে এসেছি এবং আমি তাদের চ্যালেঞ্জগুলো বুঝি।
মূলত দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলে তেমন কোনও প্রতিনিধি নেই। এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে উদ্যোগী হয়েছেন প্রাক্তন আর্সেনাল এবং জার্মানির তারকা ফুটবলার ।
এর আগে তিনি ১ হাজার অসুস্থ শিশুর অপারেশনের দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নও করেন। তাঁর আর্থিক সহায়তায় ২১৯ জন অ'সু'স্থ শিশুর অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।
‘বিগ শো চ্যারিটি’ নামের একটি সংস্থার মাধ্যমেই অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের জুনে তাঁর বিবাহের সময় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওজিল, সেটাই বাস্তবায়ন করেন।
জার্মানির হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপ জেতার পর পুরস্কার হিসেবে পাওয়া ২ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ডের পুরোটাই আয়োজক দেশ ব্রাজিলের ২৩ জন শিশুর অপারেশনের জন্য খরচ করেছিলেন ওজিল। তুরস্কের দরিদ্রদের মাঝে অর্থ-সম্পদ দান করতে দেখা গিয়েছে ওজিলকে। তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মানির এই মিডফিল্ডার এভাবেই নিজেকে বারবার মানব সেবায় নিয়োগ করেছেন।
মেসুট ওজিল ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ৮টি হ্যাট্রিক এসিস্ট করেছে...তাও আবার ৩টি ভিন্ন লিগে। বুন্দেসলিগাতে ওয়ের্ডার ব্রিমেন হয়ে, লা লিগাতে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এবং প্রিমিয়ার লীগে আর্সেনালের হয়ে। ওজিল তার সহজসুলভ খেলার ধরন ও তাৎক্ষণিক চাতুর্যের জন্যে পরিচিত। তাঁর ফুটবল শৈলী অন্য খেলোয়াড়কে গোল করতে সাহায্য করত। এই ক্ষমতার জন্য রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন ম্যানেজার হোসে মরিনহো তাঁকে জিনেদিন জিদানের সাথে তুলনা করেছিলেন।
২০১১ সালে ২৫টি গোলে সহায়তা করার মাধ্যমে তিনি সকল প্রধান ইউরোপিয়ান লিগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলে সহায়তা করেন। ২০১২ সালে লা লিগায় তিনি ১৭টি গোলে সহায়তা করেন। তিনি ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ ও ২০১২ উয়েফা ইউরোপিয়ান লিগে ৩টি করে গোলে সহায়তা করেন যা ছিল টুর্নামেন্টগুলির সর্বোচ্চ। এমন প্লেয়ারকেই তো বলা যায় 'অ্যাসিস্ট কিং'।
জার্মানির হয়ে ৯২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ওজিল। জার্মান ফুটবল ভক্তদের ভোটে ২০১১ সালের পর থেকে মোট পাঁচবার তিনি বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। দেশকে দিয়েছেন বিশ্বকাপ। এত কিছুর পরেও জার্মানিতেই 'বর্ণবাদ এবং অসম্মানের' শিকার হন। এই অভিযোগ তুলে তুর্কী বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবলার ওজিল আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে নেন।