মাসিমা ঘরে আছেন? পাড়ার দাদারা দুর্গাপুজোর চাঁদাচাইতে এলে তড়িঘড়ি করে বাড়ির বাবা কাকা কিংবা মা বেরিয়ে এসে চাঁদা মেটাতেন আর একটু চা আবদার চলতো একটু দর দস্তুরও। মধ্যবিত্ত সংসার। আর সেই শুরু হতো পাড়ার পুজো।
প্যান্ডেল এর বাঁশ কবে লাগবে , এবার পাড়ার প্রতিমা কেমন হবে, পুজোর সাজ কেমন হবে এই নিয়ে পাড়ার মোড়ে জোর আলোচনা । রোজ একটু একটু করে প্যান্ডেল তৈরি হতে দেখা। পড়তে পড়তে জানলা দিয়ে মন ফস্কে চলে যেত প্যান্ডেলে। একটু ঢাকের আওয়াজ পেলেই হাইয়াই চটি পরে প্যান্ডেল এ ছুট প্রতিমা দেখতে আর সেই শুরু পুজো।
পরের চারদিন এই প্যান্ডেল এই আড্ডা অঞ্জলী আর বাকি সব। চারদিকে ফটকা ফাটানোর বারুদের গন্ধের মাঝে প্যান্ডেল থেকে ভেসে আসা মাইক টেস্টিং কিংবা কিশোর কুমার আর কুমার শানুর গান এর রিপিট সারাবেলা জুড়ে। তার মাঝেই ঢাকের আওয়াজ আর অঞ্জলীর announcement।অঞ্জলী দিতে দিতে আর চোখে আসে পাশে দেখে নেওয়া উঠতি হৃত্বিক রোশন বা বিপাশা বসু কে।
প্রথম প্রেম এর প্রথম পাতা। পাড়ার পুজো মানে এই সব স্মৃতি গুলো একসাথে মাথায় ভিড় করে সন্ধি পুজোর ঘণ্টা র আওয়াজ আর ধুনুচি নাচের গন্ধ নাকে ফিরে আসে স্মৃতির গলি বেয়ে।পাড়ার পুজোয় সেই ভাব গম্ভীর কাকুর হাঁক ডাক হটাত যেনো সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে, কিম্বা সিরিজ অফ পলিটিক্যাল আলোচনা বা ক্রিকেট ফুটবল এর লেটেস্ট খবর আর সমালোচনা। এগুলো পাড়ার পুজোর ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিকের মত।দাদা দের চোখ বাঁচিয়ে একটু বন্ধু দের নিয়ে বেপরোয়া হওয়া সাহসী হবার গল্প ত সবার।
কারুর প্রথম সিগারেট,কারুর প্রথম হাতে হাত,কারুর প্রথম ঠোঁট ভেজানো এসব লুকোনো আলতো স্মৃতি তো আস্তে পিষ্ঠে জড়িয়ে। বাঙালির পাড়ার দুর্গা পুজো যেন এক মহোৎসব, পাড়ার সব দাদাদিদি কাকু কাকিমা মিলে যেনো একটা মস্ত পরিবার। দশমী তে সিঁদুর খেলা আর বিসর্জন এ ঝাপসা চোখে একসাথে সেই সমগ্র পরিবার মা এর আবার আসার প্রতীক্ষায় বাড়ি ফেরে।
পাড়ার পুজো যেন সেই সবার একাত্ম হওয়ার গল্প।
(Bengali Community of The Netherlands ' হৈ চৈ'-এর তরফে প্রবন্ধটি লিখেছেন এক প্রবাসী)
বিশদে জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্ক-