আমি শুধু নাটক করতাম। মঞ্চে অভিনয় নিয়েই আমি খুব খুশি ছিলাম। স্মিতা মায় সিনেমায় টেনে আনে। রবি চোপড়ার কাছে আমার নাম ‘রেকমেন্ড’ করে ‘আজ কি আওয়াজ’ ছবির জন্য।
স্মিতা ছিল আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। আজও আমি তাকে মিস করি।
কথাগুলো নানা পাটেকরের। ‘স্মিতা’ তাঁর বন্ধু বিখ্যাত অভিনেত্রী স্মিতা পাতিল। বন্ধুর অকালপ্রয়াণ আজও তাঁকে একইরকম কষ্ট দেয়। বন্ধু স্মিতা বদলে দিয়েছিলেন নানার জীবন। স্মিতার জন্যই ছবির জগতে পা রাখেন তিনি। নাহলে হয়ত মঞ্চের জীবন থেকে কখনও ক্যামেরার সামনবে আসার কথা ভাবতেন না।
‘অয়ম’, ‘গিদ্ধা’র মতো ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তাঁরা। শুধু নানা একা নন, স্মিতার বন্ধুরা ভুলতে পারেন না স্মিতাকে। বন্ধু হিসেবে স্মিতা ছিলেন তুলনাহীনা। ধারালো স্বভাবের মানুষ। খোলামেলা মন। দ্বিধাহীনভাবে কাছে টানতে পারতেন মানুষকে। সে সহপাঠী হোক বা সহকর্মী কখনও বদল ঘটেনি স্বভাবে।
তাঁর কলেজ সেন্ট জেভিয়ার্স। কেমন ছিলেন কলেজপড়ুয়া স্মিতা, বন্ধুদের ‘স্মি’?
ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর কথায়, ‘স্মিতার ব্যাপারে বেশ পজেসিভ ছিলেন তাঁরা’। যা কিছু ভাল সব পাক প্রিয় বন্ধু- স্মিতাকে নিয়ে এই ছিল বন্ধুদের চাহিদা। শুরু থেকে স্মিতা যে অন্যরকম। মন খারাপ হত নিজে কোথায় আছেন সেই ভেবে। অভিনয় জীবন নিয়ে অন্যরকম স্বপ্ন দেখেছিলেন। ‘নমক হালাল’ ছবিতে বৃষ্টিভেজা নাচের দৃশ্যতে নিজেকে কোনওদিন মেনে নিতে পারেননি। শোনা যায় সেদিন শুটিঙ্গ থেকে ফেরার পর আকুল হয়ে কেঁদেছিলেন। সারা রাত জেগে। স্মিতার মাও কিছুতে মানতে পারেননি।
‘ভূমিকা’র মতো শুধু আর্টহাউস ছবিতে নিজেকে আটকে রাখতে চাননি। বড়ো অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন। মূলধারার বলিউডে ছবিতে অভিনয় না করলে যে সেটা সম্ভব হবে না এই ভাবনা থেকেই নাচ-গান-অ্যাকশনের কর্মাশিয়াল হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সফলও হয়েছিলেন তুমুলভাবে। তবে সেই সাফল্যে নিজে হয়ত খুব সন্তুষ্ট ছিলেন না। ‘ভূমিকা’, ‘ভাবনি ভাবাই’, ‘আক্রোশ’ তাঁর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘গলিঁয় কি বাদশা’, ‘কসম প্যায়দা করনেওয়ালো কি’, ‘ইন্সানিওয়াত কি দুশমান’ জাতীয় ছবির তুলনায়।
চেনা পথে তিনি কখনও যেতে চাননি। সমালোচনায় কান পাততেও খুব ইচ্ছুক ছিলেন না।
তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অরুণা রাজে। স্মিতার থেকে নয় বছরের বড় বয়সে। কিন্তু বয়স কখনও অন্তরায় হয়নি বন্ধুত্বে। অরুণার কথায়, ‘আমাদের মধ্যে মিল ছিল অনেক। আমাদের দুজনেরই জন্ম পুণের লক্ষ্মী রোডে। দুজনেরই পদবী ‘পাতিল’, আর জন্মদিনও এক-১৭ অক্টোবর।
১৯৮৮তে অরুণার ‘রিহাই’ছবিতে অভিনয় করেছিলেন স্মিতা। স্মিতাকে খুব কাছ থেকে দীর্ঘদিন দেখেছিলেন বন্ধু অরুণা। স্মিতার ফ্রি স্পিরিট, আপোসহীন মানসিকতা, জোরে গাড়ি চালানোর অভ্যাস, খোলামেলা কথার স্বভাব আর ভালবাসার ক্ষমতা বন্ধুদের বেঁধে রাখত তাঁর সঙ্গে।
সেভাবেই আজও পর্দার বাইরের স্মিতাকে মনে রেখেছেন তাঁর বন্ধুরা। পর্দার স্মিতার থেকে বন্ধু স্মি অনেক বেশি উজ্জ্বল তাঁদের কাছে।