কথায় বলে ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’। মানে বাণিজ্যে লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান। কিন্তু বাণিজ্যের দুনিয়ায় ধরার লক্ষ্মীদের প্রবেশ করতে দিতে পদে পদে বাধা। ব্যবসার স্ট্র্যাটেজি থেকে লাভক্ষতির হিসেবনিকেশ, কাজের পরিবেশ সব জায়গাতেই বৈষম্য। তবে ঝড়ঝাপটা-অবরোধ ভেঙ্গে তাঁরা এগিয়ে চলেন। নতুন ইতিহাস লেখা হয় তাঁদের নামে। ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতির চেহারাকে বদলে দেওয়া রক্তমাংসের ‘লক্ষ্মী’দের সংখ্যা কম নয়। নানাভাবে নানা ক্ষেত্রে তাঁরা সাফল্যের মুখ। মেধায়-মননে তৈরি করেছেন সাফল্যের নতুন সংজ্ঞা। চমকে দেওয়া তাঁদের সিঁড়ি তৈরির কাহিনী।
তেমনি এক নাম শেহনাজ হুসেন। দেশ তো বটেই আন্তর্জাতিক প্রসাধন দুনিয়াতে এক আলাদা ‘সেনসেশন’। শেহনাজের বিয়ে হয়ে যায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী শেহনাজ কখনই চাননি একজন গৃহবধূ হিসেবে জীবন কাটিয়ে দিতে। তাই কসমেটোলজি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ধীরে ধীরে ব্যবসার জগতে এবং অগ্রগন্যা হয়ে ওঠা।
মেয়েদের রূপসজ্জা যে কতবড় বাণিজ্য পরিসর হয়ে উঠতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আর এক ফরাসিকন্যে। বিবাহসূত্রে ভারতবধূ। সিমোন টাটা। ভারতের ‘বিউটি ইন্ড্রাস্ট্রির ফার্স্ট লেডি’। প্রথম ভারতীয় মেকআপ ব্র্যান্ডের জন্মদাত্রী। ‘ল্যাকমে’র চেয়ারপার্সন।
শূন্য থেকে শুরু করার করার গল্প সব সময়ই রোমাঞ্চকর। ভাড়াবাড়ির গ্যারেজে এক চিলতে ছোট্ট উদ্যোগ, সেখান থেকেই আকাশ ছুঁয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের এক কন্যে। কিরণ মজুমদার শ। বায়োকন লিমিটেডের চেয়ারম্যান জন্ম তাঁর হাতেই।
দেশ তো বটেই বিদেশের মাটিতেও বারবার প্রমাণ করেছে বারবার। স্ট্র্যাটেজি মেকিং থেকে বিজনেস প্ল্যান দুনিয়ার টপ ব্র্যান্ডে ভারতীয় মেয়েদের মুখ বারবার দেখেছে দুনিয়া। যেমন ইন্দ্রা নুগিকেই দেখুন। প্রথমে পেপসিকোর সিইও তারপর একেএকে অ্যামেজন লিঙ্কডিন যে সংস্থারই দায়িত্ব নিয়েছেন সর্বত্রই তিনি উজ্জ্বল।
মিডিয়া ইন্ড্রাস্টিতেও বানিজ্যিক মেধার ছাপ রেখেছে মেয়েরা। আজ বলে নয়, বহু আগে থেকেই।
ইন্দু জৈন এমন এক অসামান্যা। ৭৫ বসন্ত পেরিয়েও তিনি অনুপ্রেরণা। দেশের বৃহত্তম সংবাদ সংস্থার শীর্ষনেত্রী। দেশের সেরা ১০ ধনী তালিকায় তাঁর নাম। এসব পরিচয় পার হয়েও তিনি একজন কবি এবং শিক্ষাবিদও। বিশ্ব জুড়ে তাঁর কর্মকান্ড। মেয়েদের অধিকার রক্ষায় সবসময় সবাক।
মেধায়-মননে উজ্জ্বল এই নারীরাই যে প্রাচীন ভারতের গার্গী, মৈত্রেয়ী, লোপামুদ্রা, ঘোষার যোগ্য উত্তরসূরী তাতে কোনও সন্দেহ আছে কী!