মা-বাবা, সংসার নিরাশ্রয় করেছিল বছর কুড়ির মেয়েটিকে। ঠাঁই হয়েছিল রাস্তায়, রেলস্টেশনে। ভিখারীদের মধ্যে। কতদিন খাওয়া জুটত না। রাস্তার সেইসব অনাত্মীয় মানুষগুলোই নিজেদের ভাগের খাবার দিত তাকে। এভাবেই কেটেছে জীবনের বহু বছর।
নিজের লোকের থেকে যে ভালোবাসা তিনি পাননি, তাই ফিরিয়ে দিয়েছেন বহু মানুষের মাঝে। হয়ে উঠেছেন বট গাছের আশ্রয়।
আজ প্রায় ২ হাজার শিশুর একমাত্র অবলম্বন সিন্ধুতাই সপকাল। মহারাষ্ট্র তাঁকে চেনে ' অনাথের মা' হিসেবে।
জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর। মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা জেলায়। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তে পড়তে বাল্য বিবাহের অভিশাপ নেমে আসে জীবনে। ১০ বছরের সিন্ধুর বিয়ে হয় ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে।
গোবর সংগ্রহের কাজ করতেন। সহজ ছিল না, পদে পদে বিপদ বাঁধা। একদিন ঘর ছাড়তে হল। সঙ্গে ৪ সন্তান। এলেন বাবা মার কাছে। তারাও মুখ ফিরিয়েছেন। অন্ধকার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। আঁকড়ে ধরার খড়কুটোও ভেসে গেছে।
শেষ পর্যন্ত রেল স্টেশনে আশ্রয় নিলেন। বাধ্য হলেন ভিক্ষা বৃত্তিতে। দেখলেন তিনি একা নন, তাঁর মতো অনেকেই। অনেকেই তারা শিশু। সেই সব শিশুরা খুব আপন হয়ে উঠল সিন্ধুর। সন্তান স্নেহে কাছে টেনে নিলেন ঘরহীন, পরিজন হীন অসহায় ওই সব শিশুদের।
তাঁর শূন্যতা ভরে উঠল তাদের পেয়ে। তারাও অদেখা 'মা'কে খুঁজে পেল সিন্ধু তাই- এর মধ্যে। তাদের 'মাই' তিনি। অনাথ শিশুদের মধ্যেই খুঁজে পেলেন নিজের ভুবন।
বহু শিশু তাঁর ছায়াতেই আজ গাছ হয়ে উঠেছে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তারা বড় হয়েও ফিরে ফিরে আসে 'মাই' এর কাছে।
অজস্র পুরস্কার পেয়েছেন সিন্ধুতাই। পুরস্কারের সমস্ত অর্থ ব্যয় করেছেন এইসব সন্তানদের গড়ে তুলতে।
২০১০ সালে তা
'মি সিন্ধুতাই সপকাল' নামে তাঁকে নিয়ে একটি হিন্দি ছবিও তৈরি হয়। ৫৪ তম লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।