লোভনীয় চাকরি ছেড়ে অনাথ শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন হায়দ্রাবাদের এমবিএ গ্র্যাজুয়েট মঈনউদ্দিন

সুখী জীবনযাপন সহ লোভনীয় চাকরির সুযোগ ছিল সামনে, মোহ কাটিয়ে সেই জায়গায় অনাথ শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন হায়দ্রাবাদের খাজা মঈনউদ্দিন‘হাঙ্গার ফ্রি ইন্ডিয়া’ পরিকল্পনাটিকে বাস্তব রূপ দিতে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে বিলাসবহুল চাকরির সুযোগ পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, আর এখন প্রতি মাসে শহরের ১২০০ অনাথ শিশুর মুখে অন্নের জোগান দিয়ে থাকেন এমবিএ গ্রাজুয়েট মঈনউদ্দিন।

তাকে খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, মুখে সর্বক্ষণ হাসি ও এক বুক প্রত্যাশা নিয়ে নীচু হয়ে ঝুঁকে বাচ্চাদের জন্য রান্নার আয়োজন করছেন। সহস্র অনাথ শিশুর স্বার্থে বিলাস পরিত্যাগ করতে একটুকুও কুন্ঠা বোধ করেননি, কারণ তাদের অন্তর্নিহিত হাসিতে এক অপূর্ব আনন্দে ভরে ওঠে মঈনের হৃদয়। তাই নিজেই উদ্যোগ নিয়ে প্রায় সহস্রাধিক অনাথ শিশুর দায়িত্ব নিঃসঙ্কোচে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।  

প্রকল্পের শুরুটা হয়েছিল ২০১৭তে, দুই বন্ধু শ্রীনাথ রেড্ডি ও ভগত রেড্ডিকে সঙ্গে নিয়ে। তিন বন্ধু মিলে একটি খাদ্যমূলক ইউটিউব চ্যানেল প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন, নাম রাখা হয় ‘সমস্ত অনাথদের জন্য নবাবের রান্না’। কিছু দিনের মধ্যেই গ্রাহক সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যায়। ভিডিওগুলিতে মঈনউদ্দিনকে যখন পরিপাটি করে রান্না করতে দেখা যায়, তখন ক্যামেরার পিছনে থেকে তা দর্শকদের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন শ্রীনাথ ও ভগত।

FotoJet - 2019-08-26T201616.074

একটি সাধারণ রান্নাঘরে বৃহৎ আয়তনের কিছু গামলা ও টাটকা খাদ্য সাথে নিয়ে এই মহান উদ্যোগ শুরু করেছিলেন তিন বন্ধু। হায়দ্রাবাদ শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র অনাথ শিশুকে তাদের প্রয়োজনীয় ও সুস্বাদু খাবার পৌঁছে দেওয়ার সাথে সাথে রূপায়িত হতে শুরু করে এই প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে শুধু পথশিশুদের সেবা প্রদানের পরিকল্পনা থাকলেও, উদ্যোগটির গগনচুম্বী সাফল্য তাদের ক্ষুদ্র পরিসরের আয়তন আরও বিস্তৃত করে বৃহৎ পরিসরের দিকে নিয়ে যায়; এবং তারপর থেকে স্থির করা হয়, শুধু পথশিশুরাই নয়, যাদের খাদ্যের প্রয়োজন তারা সকলেই খাবার পাবে

FotoJet - 2019-08-26T201421.742

একটা সময়ে এই প্রকল্পটিতে সংকট দেখা গিয়েছিল। অর্থের অভাবে তাদের ইউটিউব চ্যনেলটিও প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল। যে প্রবল প্রত্যাশা নিয়ে উদ্যোগটি শুরু করেছিলেন তিন মধ্যবয়সী ব্যক্তি, পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে হঠাতই তাঁর ছন্দপতন ঘটে। একদিন চ্যানেলটির এক গ্রাহক নতুন ভিডিওর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে, অন্দরের আসল চিত্রটি ক্রমেই সামনে এসে পড়ে। তখন তিনিই তাদের 'ক্রাউড ফান্ডিং' তথা গণ চাঁদা তোলার পরামর্শ দেন।

FotoJet - 2019-08-26T202210.762

উদ্যোগটি জীবিত রাখতে শেষ চেষ্টা করেন মঈন, আর বলাই বাহুল্য পুনরায় সফলতার মাধ্যমে জীবন ফিরে পায় এই প্রকল্প। তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। মঈনউদ্দিন, শ্রীনাথ, ভগবতের মত মানুষদের আরও বেশী করে প্রয়োজন আমাদের সমাজে, যারা লোভের মায়া কাটিয়ে মহান উদ্দেশ্যে আত্মনিয়োগ করার জন্য নিজেদের স্বপ্নকেই শুধু অনুসরণ করছেন এবং তাদের চিন্তা-ভাবনা শুধু পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ রাখছেন না, কাজের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত করছেন, যা অসংখ্য মানুষকে একই সঙ্গে উপকৃত ও অনুপ্রাণিত করছে। 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...