কমলা বিক্রেতা থেকে পদ্মশ্রী বিজয়ী

৬৮ বছর বয়সী হরেকালা হাজাব্বা। পেশায় কমলা বিক্রেতা। হাজাব্বা কর্ণাটক রাজ্যের ম্যাঙ্গালোর  শহরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঝুড়ি হাতে কমলা বিক্রি করেন। আর পাঁচজন কমলা বিক্রেতার সঙ্গে তাঁকে খুব একটা আলাদা করা যায় না। কিন্তু তিনি যে আর পাঁচ জনের থেকে একেবারেই আলাদা তা বুঝিয়ে দেয় তাঁর কাজ।

২০২০-র সাধারণতন্ত্র দিবসে ভারত সরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত করেছেন  

 

 

রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন, এই খবরটি যখন হাজাব্বাকে জানানো হয়, তিনি তখন রেশন সংগ্রহ করার লাইনে দাঁড়িয়ে!

 

কিন্তু কেন মনোনয়ন পেলেন তিনি?

 

কর্ণাটকের নিউপাদাপু গ্রামে হাজ্জাবার বাস। জন্ম থেকেই সেখানে। কিন্তু প্রত্যন্ত এই গ্রামটি শিক্ষার আলো থেকে অনেকটাই দূরে।২০ বছর আগে কোনও স্কুল ছিল না সেখানে।

হাজাব্বাই গ্রামের প্রথম মানুষ যিনি নিউপাদাপু গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু বিষয়টি শুধুমাত্র ভাবনার পর্যায়ে রেখে থেমে থাকেননি তিনি।

 নিজের জমানো অর্থ দিয়ে ২০০০ সালে সম্পূর্ণ করে ফেলেন স্কুলের কাজ। আস্তে আস্তে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। নিজের স্কুলকে আরও বড় করার কথা ভাবতে থাকেন।

ঋণের টাকায় স্কুলের জন্য একখণ্ড জমিও কিনে ফেলেন তিনি। শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি, সেই স্কুলকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপ দিয়েছেন। অথচ কমলা বিক্রি করে হাজাব্বার দৈনিক গড় আয় মাত্র ১৫০ টাকা!

কখনো কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পাওয়া হাজাব্বা জানিয়েছেন, বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলার একটি ঘটনাই তাঁকে এই কাজে করতে অনুপ্রাণিত করেছে। সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে হাজাব্বা বলেন, ‘বিদেশি এক দম্পতি আমার কাছে কমলার দাম জানতে চাইছিল। কিন্তু আমি ওদের কথা বুঝতে পারছিলাম না। অনেক চেষ্টা করেও তুলু ও বিয়ারি ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় আমি কথা বলতে পারছিলাম না। ওই দম্পতি তখন কমলা না কিনেই চলে গেল। পুরো ঘটনাটি আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল। তখনই আমার মনে হয়, আমার গ্রামের ছেলেমেয়েদের যেন আমার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।’

পদ্মশ্রীর জন্য মনোনীত হওয়ার পর হাজাব্বা জানিয়েছেন, পুরস্কারের চেয়ে জরুরী গ্রামে একটি কলেজ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ। সরকার তিনি এ বিষয়ে আবেদনও জানিয়েছেন।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...