স্বাধীনতা’ শব্দটির ব্যাপ্তি বিশাল। তা কিন্তু শুধুমাত্র ১৫ই অগাস্ট পতাকা উত্তোলন বা দেশাত্মবোধ প্রকাশের জন্য একটা ছুটির দিন নয় বা অত্যাধুনিকতার মেকি আস্তরণে মোড়া স্বেচ্ছাচারীতার প্রকাশ নয়। এর অর্থ হলো মানসিক, মানবিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, অন্নের, মতপ্রকাশের, সর্বোপরি বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। বহু বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের এক নিদর্শন হিসেবে ভারত যে এক স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, তা পরিচালনার জন্য ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে নির্দেশিকা আছে তা কি আদৌ সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে? সেখানে ‘সমতা’ শর্ত আজ উপেক্ষিত।
এখনো নারী পুরুষের যোগ্যতার বিভাজন হয়, সংরক্ষণের নামে এক অদ্ভুত প্রহসন চলে- কারণ শিক্ষার বৈষম্য। সর্বস্তরে তার বিস্তার ঘটলে চিন্তা, মনোনে স্বাধীন হওয়া সম্ভব হতো। আর এসবের ফল বঞ্চনা, দুর্নীতির অবাধ বিস্তার। মানুষ কি নিরপেক্ষভাবে নিজের মত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারে? না- তার প্রমান নির্বাচন উৎসব। যে দেশে মানুষ ন্যূনতম খাদ্য, চিকিৎসা এক কথায় বাঁচার জন্য নাকাল হয়- এর থেকে পরাধীনতা আর আছে কিসে? এসব তো অশিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত রাজনৈতিক সত্ত্বার প্রকাশের ফল।
রাজনীতির অর্থ হলো রাজার নীতি। আজ তো রাজার নীতির অর্থই ভুলুন্ঠিত, কারণ রাজাই তো এই নীতি সম্পর্কে অজ্ঞ। দেশ শুধু ভূখণ্ড নয়, তার অস্তিত্ব মানুষ নিয়ে। সেই অস্তিত্বই অস্বীকার হওয়ার উপক্রম, তার স্বার্থই যেখানে প্রতি মুহূর্তে বিঘ্নিত হচ্ছে- সেখানে স্বাধীন হলাম বলা চলে কি !
যে দিন কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য থাকবে না , চিকিৎিসার জন্য থাকবে মানবিকতা– ব্যবসায়িক মনোভাব নয় ,শিক্ষান্তে থাকবে পর্যাপ্ত কর্মস্থানের সুযোগ, অর্থাভাবে, খাদ্যাভাবে হবেনা আত্মহত্যা, বধূ হত্যা থাকবে না – যে দিন সবাই টিকে নয় ভালো থাকবে,– সেদিন আমরা স্বাধীন হবো। সর্বোপরি যেদিন রাজনীতিতে সততা ও স্বচ্ছতার যথার্থ প্রকাশ হবে সেদিন স্বাধীনতা মহিমান্বিত হবে। না হলে তা শুধু একটা শব্দ বন্ধ হয়েই থাকবে।