মায়াদর্পণ: একটি অ-স্থিরচিত্রপ্রদর্শনী

এই শহরে এখনও ভাষা আছে, সুর আছে, প্রাণ আছে, ভাইব্রেশন আছে, তা নন্দনচত্বরে যাওয়ার ইচ্ছে অথবা অভ্যেস থাকলে একবার গগনেন্দ্র প্রদর্শশালার ভিতর ঢুকলেই টের পেতে পারেন। কারণ সেখানে ‘মায়াদর্পণ’ আছে। মায়াদর্পণ, একটি অ-স্থিরচিত্রপ্রদর্শনী, ফটোস্কেপ

আপাতদৃষ্টিতে কিছু স্থির মনে হলেও, তা নয়। তাই মায়াদর্পণ অ-স্থির। এই নিয়ে অষ্টমবার মায়াদর্পণ নেমে এল শহরে। এটি তদের ১২তম প্রদর্শনী হতে পারতো, হয়নি কারণ মধ্যবর্তী কিছু বছর তারা স্বেচ্ছায় ছুটি কাটিয়েছেন। তারা ছুটি কাটিয়েছেন সময়ের পথে পথে। স্পষ্ট তার ছাপ পড়েছে গগনেন্দ্রের প্রতিটি দেওয়ালে।

FotoJet (243)

এছাড়াও তুলে ধরতে পারি তাদের স্বতঃস্ফুর্ত বিবৃতি- “ফিরে এসেছে ‘মায়াদর্পণ’, হলুদপাহাড়ে এক দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে। ফিরে আসছে আবার সেই অনির্বচনীয় ভারতীয় রোদ্দুর যা শেষবার ধরা পড়েছিল এক নিখাদ ক্লোজ আপে। আর স্থবির হয়ে পড়েছিলাম আমরা, ব্যক্তিনির্বিশেষে...

হেঁটেছিলাম অবিশ্রান্ত তিন মাইল...নাকি কোনও এক অফিসে বসে ধরেই নিয়েছিলাম উনি তবে ঐশ্বরিক, বেদনা বিরহিত। আমরা চলি পোষ্যের মর্জি অনুযায়ী, আর উনি খনিকটা রথে। বাকী পথ আদ্যন্ত ভিজে গেছে দেখি দেশীয় পায়রাটির মত। বজ্রপাতে খানিক আগে গোলাপী বর্ণের চেহারা হয়েছিল তার।”

 যাঁরা ‘মায়াদর্পণ’ প্রদর্শন করছেন, যাঁদের অ-স্থির চিত্র দেওয়ালে ঝুলন্ত, তাঁরা হলেন অরূপরতন ঘোষ(কবি-ভ্রাম্যমান), সোমনাথ গোস্বামী(এমনিতে অ্যাকাউটেন্ট, বাদবাকি প্রকৃতিকে ডিটেইল-এ ধরতে বনে-বাদারে ঘুরে বেড়ান), বিশ্বজিৎ বসু(অদৃশ্য মহাজাগতিক-কে ইমেজে রূপান্তরিত করেন), দিপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়(প্রান্তিক দূরবীন), দেবরূপ সরকার(তড়িৎ- নব্যপরাবাস্তববাদী), প্রতিতি ঘোষ(ফটোগ্রাফি ইজ জাস্ট ইন্সটিংক্ট টু হার), ব্রতীন বন্দোপাধ্যায়(জীবনযাপন যার ছবি), অভিষেক দে(ছবি যার জীবনযাপন), জয়দীপ বোস(সিনেমাটোগ্রাফার, মায়াদর্পণ-এ যিনি ফটোগ্রাফার), অত্রি বন্দ্যোপাধ্যায়(রং-সুর-চলচ্চিত্রের নির্যাস) ফয়জুল আনম(গনগনে রোদে ফোটা ফুল, মায়াদর্পণের সবুজ)।

আর যা উল্লেখ্য, তা মায়াদর্পণের অষ্টম অ-স্থিরতায় স্থান পেয়েছে, দু’টি ভাস্কর্য। যেগুলির সামনে দাঁড়ালেই বুঝবেন, তা আপনাকে অর্থাৎ সময়কে ছাপিয়ে সটান দাঁড়িয়ে আছে। স্রষ্টা-আশীষ সাহা।   

FotoJet (244)   

১৬ অক্টোবর দুপুর তিনটে থেকেই খুলে দেওয়া হয়েছে প্রদর্শশালার রুদ্ধদ্বার। সন্ধ্যা যখন ঘনালো, সেখানে গিয়ে পৌঁছালাম যখন, তখন থেকেই নিজেকে বেশ টকটকে লাগছিল, মনে হচ্ছিল এখনই উদিত হব কারণ হিসেবে অবশ্যই বলব একটি ‘মায়াদর্পণ’-এর কথা, যেখানে আপনি চাইলেই দেখতে পারেন কীভাবে হঠাৎই একদিন বাসে উঠে পড়েছিলেন আর আপনি হাঁটছেন না এবং কোথাও পৌঁছাতে গেলে কীভাবে আপনার গুলিয়ে যায়। মায়াদর্পণ। একটি নির্ভরযোগ্য ব্রহ্মাণ্ড। নিজস্ব।


 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...