বিস্ময় রমনী মায়া

কবি। লেখক। নাট্যকার। পরিচালক। সঙ্গীতকার। নৃত্যশিল্পী। সমাজকর্মী। শিক্ষাবিদ।কোনও একটা নির্দিষ্ট পরিচয়ে তাঁকে মাপা যায় না। এক কথায় তিনি এক বিস্ময় রমনী। মায়া অ্যাঞ্জেলো।

নিজেকে ‘পারফর্মার’ বলতে খুব ভালোবাসতেন। আসলে গোটা জীবনটাই ছিল তাঁর কাছে একটা ‘পারফরম্যান্সে’র মতো। তিনি শুধু ভূমিকা বদলে বদলে ‘শো’ করে চলেছেন।

maya-1

১৯৬৯-এ প্রকাশিত হয় আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘আই নো হোয়াই দ্য কেজড বার্ড সিংস’। তাঁর আট খন্ডের আত্মজীবনীর প্রথম খন্ড। তিনবছর থেকে ষোল বছর পর্যন্ত জীবনের কথা তিনি লিখেছিলেন বইটিতে। কলম তরবারির মতো ঝলসে উঠেছে শব্দে শব্দে। প্রতিটি লাইনে অকপট মায়া।

maya-3

ষোল বছর বয়সে প্রথম ‘মা’ হন মায়া। এই বই সেখানে এসেই শেষ। তিন বছর বয়সে মায়াকে তাঁর দাদার সঙ্গে আরাকানসে পাঠিয়ে দেন তাঁর মা। দিদার সঙ্গে থাকার জন্য।

বাবা-মা নাম দিয়েছিল মার্গারিটে এনি জনসন। বাবা বেইলি জনসন নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। মা ভিভিয়ান বাক্সটার জনসন সেবিকা।

ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, হিব্রু, ইতালিয়ান এবং ঘানার ভাশা ফ্যান্তে। এই ছয় ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন।

এহেন মায়া একেবারে ছোটবেলায় কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। টানা ৫ বছর তিনি নির্বাক।

মায়া তখন মার্গারেট। সবে আটে পা দিয়েছেন, মায়ের বন্ধুর ধর্ষণের শিকার হন। দাদাকে গিয়ে বলেন ঘটনার কথা। থানা,পুলিশ, আদালত সবই চলে। শাস্তি হিসেবে সেই ব্যক্তিকে ১ দিনের হাজতবাসের সাজা হয়।

৩ দিন পর যেল থেকে বাইরে আসতেই হত্যা করা হয় তাকে। মার্গারেট পরিবারের কাছে ধর্ষকের নাম বলে দিয়েছিল। পরিবারের কেউ তাকে হত্যা করে।

এই ঘটনার পর থেকেই চুপ হয়ে গিয়েছিলেন মায়া। পাঁচবছর এই ভাবেই। বারোবছর বয়সে আবার কথারা ফিরে আসে। কলম দিয়েই তাঁর ভাষায় ফেরা। 

maya-2

নাচ আর নাটকের জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। সেই পড়া থামিয়ে তিনি কেবল কার ড্রাইভারের কাজ নেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অ্যাফ্রো-আমেরিকান চালক।

প্রথম সন্তান গাই জনসনের জন্মের পর আবার পড়াশোনায় ফিরে আসেন তিনি। কোনও দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি, কিন্তু বিশ্বের ৩০ টি বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট পেয়েছিলেন।

কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ট্রাম কনডাক্টর হিসেবে। কখনও নাইট ক্লাবে নর্তকী কখন রেস্তোঁরায় বাবুর্চি আবার অটোমোবাইল কারখানায় গাড়ি রং করার কাজ করেছেন। এমনকি গণিকা বৃত্তিতেও বাধ্য হয়েছেন । সব কিছুই জীবনের জন্য। বেঁচে থাকার তাগিদে।

maya-5

পেশার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভাজন ভেঙ্গেছিলেন নিজের অজান্তেই।   

মায়া শুধু কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের নয়, বিশ্বব্যাপি শোষিত নির্যাতিত মহিলাদের নিজস্ব স্বর। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ আমার মনে আমি কখনও ভুল কিছু করিনি, কোনও ভুল লিখিনি আমার কুঠুরিতে কোনও কঙ্কাল নেই, আসলে আমার কোনও কুঠুরিই নেই’।

maya-4

মানবাধিকার কর্মী হয়ে কাজ করেছে মার্টিন লুথার ও ম্যালকম এক্সের সঙ্গে।  বর্ণ বিদ্বেষের জরুরী স্বর ছিলেন। প্রবলভাবে রাজনীতি সচেতন।

জীবনকে গ্রহণ করেছিলেন গভীর ভালোবাসায়। তাই বলতে পেরেছিলেন, 'আপনি যদি সব সময় সাধারণ মানুষ হতে চান, তাহলে আপনি টেরও পাবেন না কত মহৎ মানুষে আপনি রূপান্তরিত হয়েছেন।'

     

   

   

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...