চোদ্দ শতকের এক নাইটের গল্প। তাঁর নাম আন্তনিয়স ব্ল্যাকক। ক্রুসেড থেকে ঘরে ফিরছেন। সঙ্গে এক সহচর। ঘরে ফেরার পথে যে দিকে চোখ যায় শুধুই মৃত্যুর হাহাকার। প্লেগ। মহামারী। তার কালো ছায়ায় দশ দিশা অন্ধকার।
এক সময় তার পথ আগলে দাঁড়ায় মৃত্যু। জানায় তার সময় শেষ কিন্তু আন্তনিয়স যোদ্ধা। বিনা যুদ্ধে সে জমি ছাড়তে নারাজ। উদ্যত মৃত্যুকে সে চ্যালেঞ্জ করে বসে। আহ্বান জানায় দাবা খেলায়। খেলা চলতে থাকে। যতক্ষণ খেলা চলবে ততক্ষণ আন্তনিয়সের মৃত্যু নেই।
সেই প্রথম পর্দায় আসা। লম্বা, রোগা, সোনালী চুলের অভিনেতা। ধারালো নাক আর লম্বা মুখ। সোজাসুজি তাকালেই চোখ টেনে নেয় বসা চোখের দৃষ্টি।
মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলতে বসেছিলেন তিনি। গোটা বিশ্বের সিনেমা প্রেমিদের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন, এই দৃশ্য দিয়েই।
ইঙ্গমার বার্গম্যানের প্রিয় অভিনেতা। তাঁর একাধিক সিনেমাতে তাঁকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ‘দ্য সেভেন্থ সিল’ একটি মাত্র দৃশ্য সিনেমা শিল্পে এপিক দৃশ্য হয়ে আছে।
মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলতে বসা সেই বলিষ্ঠ অভিনেতা ম্যাক্স ভন সিডো প্রয়াত হলেন।
তাঁর পরিবার জানিয়েছেন, রবিবার বার্ধক্যজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে তাঁর। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
অভিনয় করেছিলেন একশো’র বেশি ছবিতে। ডেনীয়, জার্মান, ফরাসি, ইতালীয় ও স্পেনীয় ভাষার বিভিন্ন ইউরোপীয় এবং মার্কিন বহু ভাষায়। নান বর্ণের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কখনও টাইপ কাস্ট হয়ে যেতে দেখা যায় নি।
‘পেলে দ্য কনকারার’-এর লাসেফার চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার একাডেমি সম্মান। এক্সট্রিমলি লাউড অ্যান্ড ইনক্রেডিবলি ক্লোজ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
পরিবারের দেওয়া নাম ছিল কার্ল অ্যাডলফ ভ্যান সিডো। পরে নাম বদলে হয়ে যান ম্যাক্স। দক্ষিণ সুইডেনের উচ্চবিত্ত পরিবার। ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। বাড়িতে পুরদস্তুর অ্যাকাডেমিক পরিবেশ। বাবা কার্ল উইলিয়ম। পেশায় অধ্যাপক এবং অ্যাথনোলজিস্ট। লন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক-সংস্কৃতির অধ্যাপক। মা মারিয়া মার্গারিটা স্কুলে পড়াতেন।
পড়াশোনা এবং মস্তিষ্ক চর্চার এই দুই প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল নিজস্ব পড়াশোনা আর থিয়েটারের ক্লাস।
মিলিটারি সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন একসময়।স্টকহমের থিয়েটার স্কুলে পড়ার পাশাপাশি ছিলেন নিয়মিত মঞ্চাভিনেতা।
থিয়েটার করতে করতেই আলাপ হয় বার্গম্যানের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই ছবির জগতে আসা। তবে একেবারে আনকোরা ছিলেন না।
বার্গম্যানের সেভেন্থ সিলের আগেও দুটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
তিনি ইঙ্গমার বার্গম্যানের আবিষ্কার। বিশ্বের সেরা সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম দ্য সেভেন্থ সিল। বার্গম্যানের হাফ ডজন ছবিতে দেখা গিয়েছিল ম্যাক্স ভনকে।
লম্বা, পুরুষালী চেহারার ম্যাক্সকে কোনদিনই ‘রোমান্টিক’ ইমেজে দেখতে পাননি দর্শকরা। বরং তিনি ছিলেন পরিচালকের ‘ব্যাড বয় গাই’। তাঁর অভিনীত জিসেস ক্রাইস্টও তাই খানিক অন্য ধারার।
অনর্গল বলতে পারতেন সুইস, ড্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, ইংরেজি।
তিনি ১৯৫৪ সালে সুইডেনের সাংস্কৃতিক পুরস্কার অর্জন করেন, ২০০৫ সালে কমান্দোর দে আর্ত এ দে লেত্রে উপাধিতে ভূষিত হন এবং ২০১২ সালে লেজিওঁ দনরের শ্যভালিয়ে উপাধি পান।
‘গেম অফ থ্রোনস’ সিরিজের সিক্সথ সিজনে তাঁকে তিনচক্ষু রাভিন- এর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল।
তিনি অনস্ক্রিনে, মানেই মিনিট কাউন্ট শুরু করে দিতেন দর্শকরা। যতদিন সিলভার স্ক্রিনে ছিলেন ততদিন এই ধারার কোনও ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে...