বাঘের বিয়ে

"শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে।

গঙ্গারামকে পাত্র পেলে? জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?..."

আজকের পাত্রের নাম স্নেহাশীষ বাবু হলেও ইনি যেমন তেমন পাত্র নন। যার জন্য পাত্রীর সন্ধান হচ্ছে সেই পাত্র অতি সজ্জন মহাশয়ও, সুদর্শন পুরুষ।পাত্রকে দেখতে কেমন? দাঁড়ান! তার রূপের তো কোনো তুলনাই হয়না- ইয়া বড়ো বড়ো গোঁফ, গায়ের রঙ হলুদ সাদা কম্বিনেশন এর উপর কালো কালো ডোরাকাটা দাগ।

এইরে, দাগ আছে বলে ভাববেন না যেন ইনি যে সে ব্যক্তি, ইনি হলেন আমাদের রাজামশাই-যার হাঁটাচলার ভঙ্গিতেই রাজকীয় ব্যাপার স্যাপার। 'স্বয়ং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার'|

   বাজারে সৎ পাত্রের সব সময়ই অভাব। মেয়ে পাওয়া গেলেও রাজা মশাই এর পছন্দ অপন্দের মূল্য দিতে হবে?  এদিকে রাজামশাই এর মনের মতন পাত্রী খুঁজে খুঁজে পাওয়া যায়না। রাজ্য জু অথরিটির সূত্রে খবর-রাজামশাই শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে প্রথম স্ত্রী শীলা ও ছানাদের নিয়ে সুখেই সংসার করছে। কিন্তু অভিভাবকেরা দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টায়। কারণ সৎ পাত্রের বড়োই অভাব।

   জু অথরিটির সদস্য সচিব বিনোদ কুমার যাদব বলেন - চিড়িয়াখানার অন্দরে বাঘ খুবই  প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নয়তো বাঘের সংখ্যা কমতে বসেছে। তাই রাজামশাইর দ্বিতীয় বিবাহের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু চেষ্টা করলেই তো আর হবেনা। মহারাজের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে বিশাল ভাবনায় জু অথরিটি। ১৭ ই মার্চ আলিপুর চিড়িয়াখানার এক দল প্রতিনিধি বেঙ্গল সাফারি পার্কে গিয়ে 'স্নেহাশিস' বাবুকে দেখতে যাওয়ার কথা। তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজামশাইকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসতে পারেন তাঁরা।

  আলিপুর চিড়িয়াখানায় যে পাত্রের অভাব তা নয় -চার চারটি বাঘ রয়েছে -সাদা বাঘ 'বিশাল' আর বাঘিনী 'রূপা' চিড়িয়াখানাতে জন্ম। বিশালের রূপা কে পছন্দ থাকলেও জীন গত বৈচিত্রের কারণে কাছে পেতে দেয়নি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ব্যাস আর কোনো বাঘিনীকে মনে ধরাতে পারেনি জু অথরিটি। ওদিকে ওড়িশার নন্দন কাননের বাঘ 'ঋষি'কে মনে ধরেনি রুপার। অন্য দিকে সুন্দরবনের বাঘ 'রাজা'ও প্রেমে পড়তে নারাজ। 

   অগত্যা প্রেমহীন আলিপুর উদ্যানে প্রেম আনতে জু অথরিটিদের পাড়ি দিতে হচ্ছে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস কুমার সামন্ত জানান স্নেহাশিস এখন তাগড়া জোয়ান। তাই প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পায়েল আর রূপা স্নেহাশিসের সমবয়সী বাঘিনী থাকলেও মহারাজের পছন্দ হবে কিনা সেটাই আসল ব্যাপার। চিড়িয়াখানার কর্তাদের মন্তব্য বাঘের বিয়ে দেওয়া কি আর চাট্টিখানি কথা? বাঘ আর বাঘিনীকে পাশাপাশি খাঁচায় রেখে পরীক্ষা করা হয় দুজন দুজনের মনে ধরে কিনা। পরস্পরের ভাব বিনিময় হলে তবেই এক খাঁচায় পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। মধুচন্দ্রিমার পরে দুজনকে আলাদা খাঁচায় আনা বিরাট ঝক্কির কাজ। এইসবের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সমস্যা হলো আজকালকার মডার্ন পাত্রীদের স্নেহাশিসকে মনে ধরে কিনা সেটাই এখন দেখার।

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...