দিয়েগো মারাদোনা নামটা সারা পৃথিবীর একটা উন্মাদনার প্রতীক। এই নামের জন্যই এক হয়ে যেতে পারে সারা পৃথিবীর ফুটবল প্রেমী। হতে তো হবেই। নামটা যে খেলাধুলার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল রাজপুত্রের। বিশ শতকের ফিফা প্লেয়ার অফ দ্য সেঞ্চুরি পুরস্কারের দুই যৌথ বিজয়ীর একজন তিনি।
মারাদোনার দৃষ্টি, পাসিং, বল নিয়ন্ত্রণ এবং ড্রিবলিংদক্ষতা বাদ দিয়েই বলা যায় মাঠে তার উপস্থিতি এবং নেতৃত্ব দলের পারফরম্যান্সে দুর্দান্ত প্রভাব ফেলতো। সেই সময় মারাদোনাকে " এল পিবে ডি ওরো " বা "দ্য গোল্ডেন বয়" ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল।
৩০ অক্টোবর আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির ৬২ বছরের জন্মদিন ছিল। দিয়েগো মারাদোনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, সাসুওলোর বিপক্ষে ম্যাচের আগে নাপোলি তাদের স্টেডিয়ামে মারাদোনার একটি নতুন মূর্তি উন্মোচন করেছে। মূর্তি তো ঠিক আছে, কিন্তু নজর কারা বিষয় হল মূর্তির বাম পাটি সোনার। সত্যি বলতে ওই বাঁ পায়ের দাম সোনার পায়ের থেকেও অনেক অনেক বেশি।
ফুটবল লেখক সাচা পিসানি টুইট করেছেন: 'মাননীয়, ডিয়েগো ম্যারাডোনার ৬২তম জন্মদিনে নাপোলি অন্য একটি মাস্টারক্লাস রাখছে। এই পর্যায়ে, এটি আশ্চর্যজনক নয়। তবে প্রি-গেম ট্রিবিউটের পর দিয়েগো গর্বিত হবেন।'
ফুটবল অনুরাগীদের জন্য অবশ্য গন্তব্য বুয়েনোস আইরেসের বিখ্যাত অঞ্চল লা বোকার শিল্পমন্ডিত রঙিন পাড়াগুলো। ফুটবল আর মারাদোনার প্রতি ভালোবাসা এ পাড়ার মোড়ে মোড়ে, দেওয়ালে দেওয়ালে, দোকানের সজ্জায় ধরা। তার উপরে এখানেই রয়েছে সেই স্টেডিয়াম যেখানে শুধু একটু পা ফেলার জন্য কাতারে কাতারে মানুষের লাইন। ভালোবাসা, আবেগ, উন্মাদনা আর শিল্পবোধ এক হয়ে গেলে এমন এক একখানা নজির দেখা যায় বটে।
মারাদোনা নেপলসে প্রায় ঈশ্বরের মতো মর্যাদা পেয়েছেন। পাবেন নাইবা কেন? যেখানে তিনি ক্লাবটিকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৮৬-৮৭ সালে তাদের প্রথম সেরি এ শিরোপা জিতেছিলেন, সেইসাথে কোপা ইতালিয়া, সুপারকোপা ইতালিয়া এবং উয়েফা কাপ। ইতালির দক্ষিণে একমাত্র দল যারা সেরি এ শিরোপা জিতেছে।
১৯৯০ সালে আঁকা দিয়েগো ম্যারাডোনার একটি ম্যুরাল নেপলসের কেন্দ্রস্থলে আছে। একটি শ্রমজীবী জেলা কোয়ার্টিয়েরি স্পাগনোলিতে একটি ছোট পিয়াজার উপর দেখা যায় এটি। ফ্ল্যাট রঙের ব্লকে আঁকা। ফুটবলের রাজপুত্রকে আকাশ-নীল এসএসসি নাপোলি ফুটবল কিট পরা দেখানো হয়েছে ছবিতে। তার কালো চুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের টুফো পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তারকার ফটোগ্রাফ, পেইন্টিং এবং পোস্টারগুলি ম্যুরালের নীচে প্রদর্শিত হয়। তার মৃত্যুর পর থেকে, এই স্কোয়ারটি জাতীয় শোকের একটি অবিলম্বে স্থান হয়ে ওঠে।
এখানে ম্যারাডোনার কাল্টের প্রতিমূর্তি তার একটি বিজয়ী গোল করার গভীর শিকড় রয়েছে। নেপলসের বিশ্বাস, কুসংস্কার এবং ভক্তির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে - পুরো শহর জুড়ে কয়েকশ ছোট মন্দির রয়েছে। মারাদোনার মূর্তির উপাসনা এবং পরবর্তীকালে ঈশ্বরের মতো মর্যাদায় উন্নীত হওয়া এই ধরনের অভ্যাসগুলির সাথে খাপ খায়, যেগুলিকে নিজেরাই প্রাচীনকালের পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠান, অষ্টাদশ শতকের খ্রিস্টান ঐতিহ্য এবং সমসাময়িক সময়ের ধর্মনিরপেক্ষ বিপ্লবী প্রবণতার সাথে দেখা যায়।
ঐতিহাসিক কেন্দ্রে বার নিলোতে মারাদোনার মাজারের চেয়ে আইকনের প্রতি শহরের পৌত্তলিক ভক্তির উদাহরণ আর কোথাও নেই। প্লাস্টার থেকে ঢালাই করা এবং ক্লাবের রঙে আঁকা, বেদীটি মারাদোনার স্মৃতিচিহ্নে আচ্ছাদিত। এর কেন্দ্রে, একটি ক্ষুদ্রাকৃতির পেডিমেন্টেড মন্দিরের ভিতরে, মারাদোনার চুলের একটি তাল একটি কাঁচের ফিয়ালে রাখা আছে। ১৯৯১ সালে বারের মালিক একটি ফ্লাইটে চুলের দাগ খুঁজে পাওয়ার পরে নির্মিত মাজারটি সারা বিশ্বে স্থানীয়দের এবং মারাদোনার ভক্তদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। নেপোলিটানদের চোখে মারাদোনার এই আবেগ আর ভালোবাসার বিষয়ে ইতিহাসবিদ আমেডিও কোলেলা বলেছেন, 'মারাদোনা সেই ব্যক্তি যিনি বাস্তবিকই বাস্তব অলৌকিক কাজ করেছেন।'
এর আগে দিয়েগো মারাদোনার স্মরণে আস্ত একটি বিমান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো আর্জেন্তিনার একটি সংস্থা। বিমানের চারপাশে মারাদোনার ছবি তো রয়েছেই, ভিতরে তৈরি করা হয়েছে আস্ত একটি সংগ্রহশালাও। সেখানে রয়েছে মারাদোনার ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র এবং তাঁর অজস্র ছবি।
আর্জেন্টিনায় বুয়েনোস আইরেসে প্রয়াত মারাদোনাকে স্মরণ করে এমনই একটি উড়ন্ত সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে 'ট্যাঙ্গো ডি১০এস'। আর্জেন্টিনার একটি সংস্থা তৈরি করেছে এই সংগ্রহশালা। দেশকে ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন মারাদোনা। ২০২০-র নভেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তিনি।
বিমানের গায়ে মারাদোনার একটি মস্ত ছবি রয়েছে, যেখানে তিনি বিশ্বকাপে চুমু খাচ্ছেন। তার দু'টি ডানায় ওই বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মারাদোনার করা দু'টি গোলের ছবি রয়েছে, যার মধ্যে একটি গোলকে 'হ্যান্ড অব গড' বলা হয়। বিমানের লেজেও রয়েছে মারাদোনার মুখ। বিমানের ভিতরে রয়েছে ১২টি আসন।
যে সংস্থা এটি তৈরি করেছে তার প্রধান কর্তা বলেছেন, "আমি মারাদোনাকে নিয়ে পাগল। এমন একজন মানুষ যে রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মারাদোনার ভিডিয়ো দেখে। মারাদোনা চলে যাওয়ার পর এটাই প্রথম বিশ্বকাপ হতে চলেছে। হয়তো লিয়োনেল মেসিরও এটাই শেষ বিশ্বকাপ। তাই দিয়েগোর জন্যেই আমি এই বিমান তৈরি করালাম। ১৯৮৬ সালে মারাদোনার বিশ্বকাপজয়ী দলের সতীর্থরা এই বিমান দেখে চমকে গিয়েছেন। এই বিমানটি আর্জেন্টিনার বিভিন্ন শহরে ঘুরবে। এর পর বিশ্বকাপের আগে সেটি কাতার পৌঁছে যাবে। সেখানে গিয়ে আলাদা করে মারাদোনার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।
আর্জেন্টিনার শিল্পী ম্যাক্সিমিলিয়ানো ব্যাগনাস্কো ওই প্লেনে ম্যুরালটি আঁকেন। ব্যাগনাস্কো বলেছেন, "তাঁর মৃত্যুর পর থেকে সবাই আমাকে দিয়েগো আঁকতে বলছে। আমি তার ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে মারাদোনার অভয়ারণ্য এঁকেছিলাম এবং তারপরে আমি ম্যুরাল আঁকতাম যা ভাইরাল হয়েছিল। তারপর আমি দিয়েগোর ছবি এই প্রদর্শনীতে রাখলাম এবং সারা বিশ্বের মিডিয়া এটি কভার করেছে। তারপরে আমি বিমানটি এঁকেছিলাম এবং সবাই এটি সম্পর্কে কথা বলেছিল। "
দিয়েগো মারাদোনার মৃত্যুর পর তাঁকে সম্মান জানায় আর্জেন্তিনা ফুটবল দলও। গতবছর জুনে চিলির বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচের আগে নতুন করে তৈরি মাদ্রেস দে সিউদাদ স্টেডিয়ামের বাইরে মারাদোনার পূর্ণাবয়ব মূর্তির উদ্বোধন করা হয়। ছিলেন লিয়োনেল মেসি-সহ আর্জেন্তিনার সমস্ত ফুটবলার এবং কর্মীরা। মারাদোনার মৃত্যুর পর সেই প্রথম মাঠে নামে আর্জেন্তিনা। লম্বা ওই মূর্তিতে মারাদোনার পায়ে একটি ফুটবলও রাখা হয়েছে।
ম্যাচের আগে মারাদোনার ছবি দেওয়া বিশেষ জার্সি পরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিলেন মেসিরা। মারাদোনার ছবির উপরে জন্মসাল দেওয়া থাকলেও ছিল না মৃত্যুর বছর। প্রত্যেকের জার্সির পিছনেই ১০ সংখ্যা লেখা ছিল, যা ছিল মারাদোনার জার্সির নম্বর। তবে যেহেতু এটি ফিফার প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ ছিল, তাই এই জার্সি পরে ম্যাচে নামতে দেওয়া হয়নি মেসিদের।
কখনও মূর্তি বানিয়ে, কখনও আস্ত বিমানকে মিউজিয়াম বানিয়ে, কখনও স্টেডিয়ামের নাম বদল করে আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তির প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে। এবছরে মহাকাশেও অভিনব উপায়ে সম্মান জানানো হতে চলেছে মারাদোনাকে।
আর্জেন্টিনীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এক বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে মহাকাশে মারাদোনার ব্যবহৃত সামগ্রী পাঠানো হবে। প্রয়াত তারকার এক জোড়া জুতো এবং একটি হার্ড ড্রাইভ ওই কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে বিশেষ ভাবে জুড়ে দেওয়া হবে। সেই হার্ড ড্রাইভে আর্জেন্টিনা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মারাদোনার সমর্থক এবং অনুরাগীদের ভিডিয়ো এবং অডিয়ো বার্তা বন্দি করা থাকবে।
কৃত্রিম উপগ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে 'কসমিক কাইট'। মারাদোনাকে প্রথম বার ওই নামে ডেকেছিলেন উরুগুয়ের এক সাংবাদিক। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতাব্দীর সেরা গোলের পর সেই নাম সর্বত্র প্রচলিত হয়ে যায়। দেশের মানুষও তাঁকে ওই নামে ডাকতেন। কবে সেই উপগ্রহ আকাশে পাঠানো হবে তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি।
এবছরের আগষ্ট মাসে ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ ফাইনালে দিয়েগো মারাদোনা যে জার্সি পরে খেলেছিলেন, তা ফিরিয়ে দিয়েছেন লোথার ম্যাথাউস। মাদ্রিদে আর্জেন্টিনার দূতাবাসে হাজির হয়ে জার্সি ফেরান জার্মানির প্রাক্তন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। মাদ্রিদে নতুন ফুটবল সংগ্রহশালায় এই জার্সিটি থাকবে। ফুটবলজীবনে অবদানের জন্য আর্জেন্টিনার দূতাবাসের তরফে তাঁকে একটি ফলক দেওয়া হয়।
পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে দু'অর্ধে দু'টি জার্সি পরে খেলেছিলেন মারাদোনা। বিরতির সময় ম্যাথাউসের সঙ্গে জার্সি বদল করেন তিনি। তার পর থেকে জার্মান ফুটবলারের কাছেই জার্সিটি ছিল। অবশেষে তা ফেরত এল আর্জেন্টিনার হাতে। ম্যাথাউস বলেছেন, "ওর বিরুদ্ধে খেলা বিরাট সম্মানের। খেলোয়াড় এবং মানুষ হিসাবে সারাজীবন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে থেকে যাবে। সারাজীবন আমাদের হৃদয়ে থাকবে।"
প্রসঙ্গত, ১৯৯০-এর ফাইনালেও পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে খেলেছিল আর্জেন্টিনা। সে বারও মারাদোনার সঙ্গে জার্সি বদল করেছিলেন ম্যাথাউস। তিনি জানিয়েছেন, সেই জার্সি জার্মানির একটি সংগ্রহশালায় রাখা আছে।
এবছর নিলামে উঠছে দিয়েগো মারাদোনার 'ঈশ্বরের হাত' গোলের সেই বল। ওই বলেই খেলা হয়েছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। আশা করা হচ্ছে বিপুল দাম উঠতে পারে বলটির।
বলটি এত দিন ছিল তিউনিশিয়ার রেফারি আলি বিন নাসেরের কাছে। আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ডের সেই ম্যাচটি তিনিই খেলিয়েছিলেন। নাসের বলেছেন, "এই বলটা ইতিহাসের অংশ। বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার এটাই সেরা সময়।" আগামী ১৬ নভেম্বর কাতার বিশ্বকাপের বিশেষ অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে নিলাম হবে বলটিকে। আগ্রহীরা ২৮ অক্টোবর থেকে অনলাইনে দর দিতে পারবেন। আশা করা হচ্ছে, বলটির দাম উঠতে পারে ২.৫ থেকে ৩ মিলিয়ন পাউন্ড, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৩ কোটি ১৪ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা থেকে প্রায় ২৭ কোটি ৭৬ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা।
বলটি নিলাম করা হবে গ্রাহাম বাড নিলাম ঘরের মাধ্যমে। সংস্থার প্রধান গ্রাহাম বাড বলেছেন, "ম্যাচের সময় দু'দলের মধ্যের ইতিহাস এবং হ্যান্ডবলের জন্য ম্যাচটি ফুটবল ইতিহাসের সব থেকে বিখ্যাত এবং আবেগপূর্ণ ম্যাচগুলির অন্যতম হয়ে গিয়েছে। বলটির এই ইতিহাসের জন্যই আমাদের আশা নিলামে উঠলে দারুণ সাড়া পাওয়া যাবে।''
ইংল্যান্ডের গোলের সামনে হাওয়ায় ভেসে আসা বল আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন পিটার শিলটন। হেড দিয়ে গোল করার জন্য লাফান মারাদোনা। শিলটনকে ধোঁকা দিয়ে গোল করার সময় বল মারাদোনার হাতে লেগেছিল। তা বুঝতে পারেননি নাসের। তিনি আর্জেন্টিনার পক্ষে গোলের বাঁশি বাজান। গোলটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় মারাদোনা ম্যাচের পর বলেছিলেন, ''কিছুটা মারাদোনার হেড ছিল আর কিছুটা ঈশ্বরের হাত ছিল।'' এই কথা থেকেই বোঝা গিয়েছিল বল তাঁর হাতে লেগেছে।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে দু'টি গোল করেন মারাদোনা। দ্বিতীয় গোলটিকে বিগত শতাব্দীর অন্যতম সেরা গোল বলা হয়। ইংল্যান্ডের পাঁচ ফুটবলারকে কাটিয়ে অনবদ্য গোল করেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক। ম্যাচটি ২-১ ব্যবধানে জেতে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ডের সেই ম্যাচটি মারাদোনা যে জার্সি পরে খেলেন, সেটি কিছু দিন আগে নিলামে ওঠে। শেষ পর্যন্ত মারাদোনার জার্সিটি ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬৮ কোটি ৬০ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেছিলেন মারাদোনা। ম্যাচের প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা গোল পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধের ছয় মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেন মারাদোনা। পরে দেখা যায় হাত দিয়ে বলটা জালে ঢুকিয়েছিলেন তিনি। যা পরে হ্যান্ড অফ গড হয়ে যায়। প্রথম গোলের চার মিনিট পর তিনি ফের গোল করেন। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন মিড ফিল্ডার স্টিভ হজ। ম্যাচের পর তিনি মারাদোনার জার্সিটা নিয়ে নেন। সাধারণত প্লেয়াররা যেটা করে থাকেন। এতদিন সযত্নে সেই জার্সিটা তিনি রেখেছিলেন নিজের কাছে। তারপর ১৯ বছর ধরে সেটা ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল ফুটবল মিউজিয়ামে ছিল।
তবে মারাদোনার প্রাক্তন স্ত্রী ও কন্যা দাবি করেছিলেন যেই জার্সিটা নিলামে তোলা হয়েছে সেটা আসলে মারাদোনা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথমার্ধে পরেছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি অন্য জার্সি পরেছিলেন। ফলে, যে জার্সিটার নিলাম হয়েছে সেটার কোনও ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকবে না। তাঁর কন্যা ডালমা মারাদোনা বলেন, "আমার বাবা দ্বিতীয়ার্ধে ওই জার্সিটা পরেননি। আমি জানি কারণ সেই জার্সিটা বাবার কাছেই ছিল না।"
নিবন্ধকারঃ ঋদ্ধি রিত