ক্যান্সার-আতঙ্কে কাটা পড়ল আফ্রিকান মেহগনি

পরিবেশ দূষণের ফলে লাগাম ছাড়া ভাবে বেড়েই চলেছে বিশ্ব উষ্ণায়ণ । এর মূল কারণ হল বৃক্ষচ্ছেদন। যেহেতু বায়ুদূষণ এবং বিশ্ব উষ্ণায়ণ রোধ করতে গাছের বিকল্প নেই, তাই পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার একমাত্র উপায় হল বিপুল পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আনুষ্ঠানিকভাবে চলছে বৃক্ষ রোপণ প্রক্রিয়া। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে তার তুলনায় কাটা পড়ছে অনেক বেশি গাছ। ফলস্বরূপ বাড়ছে দূষনের মাত্রা, ঘর ছাড়া হচ্ছে পাখিরা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ বাস্তুতন্ত্র। এর মধ্যেই গুজবের ফাঁদে পড়ে অজস্র গাছ কাটা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায়। কুসংস্কারের বশে নদিয়ার বুক থেকে ধ্বংস হচ্ছে আফ্রিকান মেহগনি গাছ। 

আফ্রিকান মেহগনি গাছ থেকে কর্কট রোগ ছড়াচ্ছে সর্বত্র, এমন গুজবই ছড়িয়েছে নদিয়ার বিভিন্ন স্থানে। এই ভুল ধারণাকে কেন্দ্র করেই নদিয়ার তেহেরপুরের জয়পুর গ্রামের এবং গাংনাপুর এলাকার মানুষ শতাধিক আফ্রিকান মেহগনি গাছ কেটে ফেলেছে। কর্কট রোগের আতঙ্কের ফলে কেউ আফ্রিকান মেহগনির চারা  কিনতে চাইছেন না। ফলত তীব্র লোকসানের মুখে পড়েছেন নদিয়ার নার্সারির মালিকরা। তারা জানিয়েছেন, চারিদিকে শোনা যাচ্ছে আফ্রিকান মেহগনি থেকে কর্কট রোগের জীবাণু ছড়াচ্ছে।

অন্য সময় বহু মূল্যে বিক্রি হয় এই আফ্রিকান মেহগনি। সূত্রের খবর, এ বছর গুজব রটার ফলে নার্সারির মালিকেরা প্রায় ৫০০ টিরও বেশি গাছ কেটে ফেলেছেন। পরবর্তীকালে বাকি গাছগুলিও কেটে ফেলবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও যারা বাগানে আফ্রিকান মেহগনির চাষ করেছিলেন তারা সকলেই বাগান থেকে প্রায় ১০০ মেহগনি গাছ কেটে ফেলেছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য করে তারা জানিয়েছেন, যে গাছ থেকে কর্কট রোগ ছড়াচ্ছে সেই গাছ বাগানে না রাখাই উচিত।   

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে আফ্রিকান মেহগনি গাছ থেকে কোনোভাবেই কর্কট রোগ বা অন্যান্য রোগ ছড়ানোর  আশঙ্কা নেই। বরং এই গাছের ছাল থেকে ঔষধ তৈরী হয়। শুধু তাই নয় আফ্রিকান মেহগনি আসবাব তৈরীর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয় এই গাছ। এই গাছ থেকে প্রাপ্ত কাঠ বহু মূল্যে বিক্রি হয় বাজারে। আফ্রিকান মেহগনি গাছ পরিবেশের একটি অঙ্গ হিসেবে পরিচিত। পরিবেশকে সুস্থ রাখতে সবুজ বাঁচানো আমাদের কর্তব্য। তাই একটি গাছ কাটলে তার বিকল্প হিসাবে ১০০ টি গাছ লাগানো দরকার। তাহলেই দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। আর বলাই বাহুল্য, কোনো রকম কুসংস্কারে মনোনিবেশ না করে গাছ কাটা বন্ধ করলেই জীবকূলের মঙ্গল।   

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...