মান্টোর ‘কাছের মানুষ’

তিনি শব্দ লিখতেন না। তাঁর শব্দগুলো আসলে চিৎকার। কখনও একক মানবের আবার কখন ও দেশ বা জাতির। কানের মধ্যে ঢুকে হারিয়ে যায় না। ঘুমিয়ে পড়ে না। ঘুমাতে দেয় না। জাগিয়ে রাখে।

যেভাবে জেগে থাকত টোবা টেক সিং। টোবা টেক সিং-কে ভুলতে পারে না পাঠকরা। দেশভাগের দগদগে ক্ষত হয়ে সে চিৎকার করে যায়। স্রষ্টা সাদাত হুসেন মান্টো। দেশভাগ আর দাঙ্গা আর বিক্ষত হওয়ার কাহিনীকে রক্তলিপিতে ধারণ করেছিলেন তিনি।

মান্টোর কলম জীবনের শুরুয়াতই হয়েছিল রক্তপাতের কাহিনী দিয়ে। ১৯ বছরের সদ্য তরুণ গল্প লিখেছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড নিয়ে।
১৯১৯ থেকে ১৯৪৭ সময় বদলেছে। বছর বদলেছে কিন্তু রক্তপাত, হিংসা বদলায়নি। সমাজ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে শুধু তার আঙ্গিক বদলেছে।

শুধু গল্প নয়, মান্টোর লেখা প্রবন্ধতেও এসেছে অস্থির সময়ের কথা। তিনি লিখেছেন, ‘আমি অমৃতসরের নোংরা অলিগলিবাজার থেকে পালিয়ে বোম্বাই এলাম। ভেবেছিলাম অমৃতসরে যে সাম্প্রদায়িক বিরোধ দেখেছিলাম, বোম্বাইয়ের উদারতায় তা থেকে মুক্ত থাকতে পারব। কিন্তু ভুল ভেবেছিলাম।’

দেশভাগ মান্টোর সাহিত্যকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল। কলমকে করে তুলেছিল শানিত এবং সাহসী।
তাঁর লেখা বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছে। ব্রাত্য হতে হয়েছে সময়-সময়। আদলতে দাঁড় করিয়েছে। অশ্লীলতার অভিযোগে আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু কলম কখনও ধারা বদলায়নি তার। একই পথে, একই গতিতে চলেছে।

সমাজের যে ছবি সমাজ লুকিয়ে রাখে, সামনে আনতে চায় না, যে দৃশ্যের চরিত্ররা বাতিল তারাই চরিত্র হয়ে উঠেছে মান্টোর গল্পে।
নিজের লেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘চাকায় গম পেষাইকারী যে মহিলা দিনরাত পরিশ্রম করেন আর রাতে সুখের ঘুম ঘুমান তাঁরা আমার কাহিনীর নায়িকা হতে পারেন না। আমার গল্পের নায়িকা হচ্ছে পতিতালয়ের বেশ্যা, যে সারারাত জেগে থাকে আর দিনে ঘুমায়। আর ঘুমের মধ্যে কখনো ভয়ানক স্বপ্ন দেখে শিউরে উঠে, যেন সে বুড়িয়ে গিয়েছে। আর বৃদ্ধবয়সের দিনগুলো যেন তার ঘরের বন্ধ দরজায় টোকা দিচ্ছে। তার ভারী চোখের পাতায় বহু বছরের জমাট বাঁধা ঘুম। এরাই আমার গল্পের বিষয়বস্তু।’

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...