পশ্চিম ইম্ফলের উরিপোক খাইদেম লেইকাই অঞ্চলের বাসিন্দা মইরাংথেম লোইয়া ঘটিয়ে ফেলেছেন এক অভাবনীয় ঘটনা। টানা ১৮ বছর ধরে একটু একটু করে মণিপুরের লাঙ্গল উপত্যকায় ৩০০ একর জমি জুড়ে তিনি তৈরী করে ফলেছেন গোটা একটা অভয়ারণ্য। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে বাস্তব রূপ দিতে নির্দ্বিধায় ছেড়েছেন চাকরি। বাকি জীবন প্রকৃতির সেবায় নিয়োগ করতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।
‘পানশিলোক’ নামে পরিচিত এই অভয়ারণ্যটি বর্তমানে ২৫০টিরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ-আশ্রয়স্থল। ২৫টি ভিন্ন প্রজাতির বাঁশ এখানে উৎপন্ন হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সাপ ও বন্য জন্তুর বাসস্থান এই অরণ্য।
“গত ১৮ বছর ধরে এই কাজ করে আসছি আমি। শৈশব থেকেই প্রকান্ড বৃক্ষ ও জঙ্গল আমাকে ভীষণভাবে টানতো। কলেজ পাশ করার পর এখানে এসে দেখলাম আমার অঞ্চলের গোটা অরণ্যটাই আর নেই, শুধু কিছু মটর গাছ পড়ে আছে। গোটা ঘটনাটি আমাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল, আমি ভেঙ্গে পড়েছিলাম। এই ঘটনাটা আমাকে প্রকৃতির জন্য কিছু করার ক্ষেত্রে চালিত করেছিল। গাছ কাটা কতটা ক্ষতিকর তা মানুষকে বোঝাতে আমার কালঘাম ছুটে গিয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রানীর উপস্থিতি থাকায় কিছু মানুষ তো আবার শিকারও করতে আসতেন। তবে এটা ভালো ব্যাপার যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টির যথাযথ সমাধান হয়েছে।” বলেন লোইয়া।
বনসংরক্ষণ দফতর প্রধান কেরেইলহৌভি অঙ্গমি বিষয়টি নিয়ে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ওনার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাচ্ছি আমরা। প্রকৃতি রক্ষার্থে যারা অরণ্যায়ন করে চলেছেন এবং এই ধরণের প্রয়াস জারি রেখেছেন তাঁদের প্রত্যেককেই আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। অরণ্যকে পুনরজ্জীবিত ও রক্ষা করতে আমরা অন্যদেরও সমানভাবে উৎসাহিত করার প্রক্রিয়া জারি রাখবো।”
লোইয়ার এই প্রয়াস বনসংরক্ষন দফতরের নজরে আসতেই তাঁরা তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। কিছু বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় বর্তমানে একটি স্বেচ্ছেসেবী গোষ্ঠী গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন লোইয়া, যাঁরা তাঁর মতোই প্রকৃতির এই অনন্ত সৃষ্টি রক্ষার্থে নিজেদের জীবন নিয়োজিত করেছেন।