পরিচালক সব্যসাচী ভৌমিক বানাচ্ছেন ‘তিন কন্যা’। তিন জন কন্যার জীবনের তিন রকমের গল্প বলা হবে ছবিতে। ছবির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও এক কন্যের গল্পও। কিন্তু তিনি রয়েছেন নেপথ্যে। আড়ালে থেকেও তাঁর ভূমিকা অনবদ্য। গল্পটা খোলসা করি তা হলে। এই ছবির প্রযোজক মণিদীপা মুখোপাধ্যায়। এই প্রথম প্রযোজনার কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। নিপাট গৃহবধূ মণিদীপা। তবে, কারো মেয়ে বা কারো স্ত্রী হিসেবে বেঁচে থাকার পাশাপাশি প্রায় সকল মহিলাই একদম নিজের একটা পরিচয় আশা করেন। যেখানে এর মেয়ে কিংবা ওর বউ নয়, তার নামেই তাকে চিনবে মানুষ। তেমনটা ঘটেছে মণিদীপার ক্ষেত্রেও। অনেকদিন থেকেই তাঁর ইচ্ছা যে তিনি ছবি প্রযোজনা করবেন। ভাল গল্প মিলছিল না। এরপর সব্যসাচী ভৌমিকের তিন কন্যার গল্প বেশ পছন্দ হয় মণিদীপার। তারপর আর দেরি করেননি তিনি। ‘তিন কন্যা’ তাঁরই প্রযোজিত ছবি। যেখানে তিন কন্যার ভূমিকায় থাকছেন ঋ সেন, অমৃতা চট্টোপাধ্যায় এবং সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা।
জিয়ো বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মণিদীপা জানান- “সব্যসাচী দা যখন তিন জন মেয়ের গল্প নিয়ে ছবি করার কথা বললেন তখন আর না বলতে পারিনি। আসলে আমি নিজে একজন মেয়ে তো, আমাদের অনেক কথা বলার থাকে। শোনার লোকের বড় অভাব। এই ছবি সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় আমার। আর একজন মেয়ে হয়ে প্রযোজক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রথম পদক্ষেপেই মেয়েদের গল্প বলব এটা ভেবে ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম!”
ছবি প্রযোজনা করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ আছে কিনা জানতে চাইলে মণিদীপা বলেন, ‘তিন কন্যা’র পর আমি পুরুষদের গল্প নিয়ে ছবি আনতে চাই দর্শক দরবারে। যাতে আমাকে কেউ নারীবাদী বলতে না পারে (সহাস্যে)। পাশাপাশি শিশুদের জন্যও ছবি আনতে চাই। কিন্তু গল্প ভাল লাগলেই আমি এগোব। নচেৎ নয়।...
একজন গৃহবধূ হয়ে প্রযোজনার মতো একটি ঝুঁকি নেওয়ার সময় পরিবার থেকে কোনও আপত্তি উঠেছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান- “আমার সবথেকে বড় শক্তি আমার স্বামী। তিনিই আমাকে এই পথে পা বাড়াতে সাহায্য করেছেন। সব সময় আমাকে এগিয়ে যেতে বলেন। শুধু তাই-ই নয়, আমার না করতে পারা কাজগুলোও করে দেন তিনি। আর কী চাই?”
এই মুহূর্তে বাংলা ছবির প্রযোজকের অভাব নেই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নতুনদের জন্য লড়াইটা খুব একটা সহজ নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান- “লড়াইটা কঠিন আমিও জানি। কিন্তু চ্যালেঞ্জ না নিলে তো কিছুই করতে পারব না কোনওদিন। ভাল ছবি দেখতে নিজেও ভালবাসি। বাংলায় আমার হাত ধরে কোনও ভাল ছবি আসলে আমার তো ভাল লাগারই কথা। প্রযোজক হওয়ার স্বপ্ন আমার অনেকদিনের। তাই চ্যালেঞ্জটা নিলাম।“
এহেন মণিদীপার অভিনয় করার কোনও ইচ্ছা নেই। সচরাচর এরকম মানুষের খোঁজ মেলে না, যে অভিনয়ের সুযোগ হাতের সামনে থাকলেও সেদিকে পা না বাড়িয়ে প্রযোজনার মতো কঠিন পথে যাত্রা শুরু করে। তেমনই একজন এই মণিদীপা। মণিদীপার প্রযোজনা সংস্থার নাম ‘সাঁই প্রোডাকশন’। আগামী দিনে এই প্রযোজনা সংস্থাটি বাঙালি দর্শকের খিদে মেটাতে সক্ষম হবে এমন আশা করাই যায়।