শান্তি। স্বস্তি। আনন্দ। আর জ্ঞানদর্শন। এই চার লক্ষ্য নিয়ে তীর্থে যায় মানুষ। অস্থির মনকে স্থির করে তীর্থ ভ্রমণ। এই মহাপৃথিবীর পাঠ দেয়। মনের বন্ধ দরজাগুলো যেন খুলে যায় পূণ্যভূমির আলো পেয়ে।
এমনই এক জৈন তীর্থভূমি মণিলক্ষ্মী তীর্থ। চেনা নামে মণিলক্ষ্মী মন্দির। গুজরাটের ভদোদরা শহর থেকে ষাট কিলোমিটার দূরত্বে। আনন্দ জেলায়। ৮, নম্বর জাতীয় সড়কের কাছেই। গুজরাট বেড়াতে গেলে এই মন্দির অবশ্য গন্তব্য। দেশের সেরা জৈন তীর্থক্ষেত্রগুলির একটি।
শ্বেতশুভ্র পাথরের মন্দির। ২১ হাজার স্কোয়ার ফিট জায়গা নিয়ে তৈরি। গোটা মন্দিরের গায়েই পাথর খোদাইয়ের কাজ। চব্বিশতম জৈন তীর্থঙ্করের বাস্তুশাস্ত্র ভাবনা অনুযায়ী, গড়ে উঠেছে মন্দির স্থাপত্য। ২০০৯ সালে শুরু হয় মন্দির তৈরির কাজ। শেষ হয় ২০১৭ সালে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারীতে সাধারণের প্রবেশের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে খুলে দেওয়া হয় মণিলক্ষ্মী তীর্থ।নানা মাপের দুশোটি স্তম্ভ ধারণ করে রয়েছে মণিলক্ষ্মী তীর্থকে। প্রতিটি স্তম্ভের অলংকরণের সূক্ষতা ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর প্রতি শ্রদ্ধা জাগাবে। মন্দিরে একটি ভোজনশালা আছে। দর্শনার্থীরা স্বাদ নিতে পারেন সেই হেঁশেলের।
প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা একটি লাইট শো হয়। কৃত্রিমভাবে তৈরি ঝর্ণার জলে রঙিন আলোর খেলা। প্রতি সাত সেকেন্ডে আট রঙে বদলে যায় আলো। দুধ সাদা মন্দিরের গায়ে তার ছায়া পড়ে। মন্দির দর্শন ছাড়াও এই আলোক সন্ধ্যের সাক্ষী হওয়া দর্শনার্থীদের কাছে একটা বড় আকর্ষণ। করোনা কালে অবশ্য বন্ধ ছিল মন্দিরের আলোর খেলা। মন্দিরের লাগোয়া বাগান। গোটা মন্দির চত্বর ঘুরে দেখতে ১-২ ঘন্টা সময় লাগে।
কালো পোশাক, স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং চামড়ার বস্তু সঙ্গে নিয়ে মন্দির প্রবেশ নিষেধ।
করোনা পরিস্থিতিতেও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এই মন্দিরের দ্বার। এন্ট্রি ফ্রি নেই।
ভদোদরা এবং আমেদাবাদ এয়ারপোর্ট হয়ে সরাসরি যাওয়া যায় মণিলক্ষ্মী তীর্থ মন্দিরে। ট্রেনে গেলে নামতে হবে আনন্দ স্টেশনে। পাবলিক এবং প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট তো আছেই। বছরের যে কোনও সময়ে যাওয়া যায়। বিশেষ করে জৈন উৎসবের সময়।
লেখা ও ছবিঃ হেমন্ত শেঠ, ভদোদরা