১৩৪ বছরের প্রাচীন এক গাছে ৩০০ রকম আম ফলিয়েছেন ভারতের ‘ম্যাঙ্গো ম্যান’

তাঁর সন্তানেরা কেউ ঐশ্বর্য কেউ শচীন। এভাবে প্রায় ৩০০ সন্তানের জন্মদাতা তিনি। পিতা অশীতিপর কলিমউল্লাহ খান। রাজধানী লখনউয়ের মালিহাবাদ শহর এক নামে চেনে তাঁকে। প্রায় ৩০০-র বেশি আমের প্রজাতির উদ্ভাবক তিনি। গোটা দেশের ম্যাঙ্গোম্যান।

প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙে প্রার্থনা সেরেই চলে আসেন নার্সারিতে। ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় প্রতিদিন। এখানেই সংরক্ষিত আছে সেই বিখ্যাত গাছ। তার গল্প শুনলে মনে হয় এ আসলে রূপকথা। এক গাছে ফলে ৩০০ রকমের আম। সংখ্যার বিচারে গাছের বয়স ১৩৪ পেরিয়েছে। কিন্তু ফলের ভার এবং গাছের উজ্জ্বল দেখে কে বলবে!

বছরের পর বছর ধরে কলিমউল্লাহের আদর-যত্নে বেড়ে উঠছে এই গাছ। গাছে যখন ফল ধরে তখন  তা ম্যাজিকের মতো মনে হয় আশেপাশের মানুষজনের। কোন আম গোল, কোনও আম লম্বা কারুর রং লাল, হলুদ কিংবা সিঁদুরে। স্বাদ গন্ধও আলাদা।

ফলের নানা রকম নামও দিয়েছেন কলিমউল্লাহ। বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং বিশেষ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে। সবচেয়ে জনপ্রিয় লাল আভার ঐশ্বর্য। অধুনা অভিনেত্রী ঐশ্বর্য ১৯৯৪ সালে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব পাওয়ার পর এই আমের নামকরণ করেন তিনি ঐশ্বর্য। শচীন তেন্ডুলকার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামেও নামকরণ করা হয়েছে আম।

 ১০ হাজার হেক্টর জমি নিয়ে কলিমউল্লাহের নিজস্ব আমবাগান। গাছ থেকে কলম তৈরী তাঁর নেশা। গাছের সঙ্গে গাছ মিলিয়ে সংকর প্রজাতির নতুন গাছ তৈরীতে তাঁর আনন্দ। সবে যখন কৈশোরে পা দিয়েছেন তখন থেকে চেপে বসে এই নেশা। স্কুল ছেড়েছিলেন। তা এই গাছের টানেই কিনা তা তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেন না। সব গাছই তাঁর কাছে সন্তান। আর ১৩৪ বছরের যে মহাবৃক্ষকে প্রতিদিন তিনি লালানপালন করেন সেই বনস্পতি তাঁর কাছে মহাপৃথিবীর ক্ষুদ্র সংস্করণ।

উত্তরপ্রদেশের মালিহাবাদ আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। গোটা দেশের মোট উৎপাদিত আমের ২৫ শতাংশ এখানের মাটিতেই উৎপাদিত হয়। বহু পরিবার আছে যাদের বংশপরম্পরায় আম চাষই মূল পেশা।মালিহাবাদের জনপ্রিয় আম ‘দশেরি’। কিন্তু জলবায়ুর বদলে যাওয়া বড় প্রভাব ফেলছে স্থানীয় উৎপাদনে।তাপপ্রবাহের কারণে ব্যাপকমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফলন। আমের বৈচিত্র্য কমছে।

প্রকৃতির বদলে যাওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন প্রবীণ কলিমউল্লাহও। কিন্তু প্রকৃতির রোষকে মেনে নিয়েও প্রিয় সন্তানদের কোনওভাবেই হারাতে চান না তিনি। তাদের আরও কাছাকাছি থাকতে বদলে নিয়েছেন নিজের বসত। কলিমউল্লাহ নিজের বস তকে সরিয়ে এনেছেন আম বাগানের কাছাকাছি। জীবনের শেষ নিঃশ্বাসও তাদের ছোঁয়াতেই ফেলতে চান। তাঁর চলে যাওয়ার সময়েও বাতাসে থাকুক আমের চেনা গন্ধ এই তাঁর একান্ত আকাঙ্খা...     

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...