সবুজ ঘেরা পাহাড়। ছোট ছোট কাঠের বাড়ি। বাড়ির পিছনে বাগান। ফলে ঝুঁকে আছে গাছ। সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে লাল টুকটুকে ফল। আপেল! চকচক করছে রোদ পড়ে। দেখলেই মনে হবে সিনেমা দেখছি যেন! পাশে কেউ থাকলে ডেকে দেখাতে ইচ্ছে হয় বারবার।
তখন কোথায় অফিসের কাজ, বাড়ির চাপ আর স্ট্রেসের যাঁতাকল। আর আপনি যদি সদ্যবিবাহিত হন বা সঙ্গে প্রেমিক-প্রেমিকা বা তেমন সঙ্গী থাকে তাহলে তো কথাই নেই! লাইফটাইম অভিজ্ঞতা স্বাদ...
এমন ছবি হামেসাই দেখা যায় টিভি, সিনেমা, ভিডিয়োতে, কিন্তু সে যতই দেখা যায় চোখের সামনে দেখা গেলে তার আবেদনই আলাদা।
ইচ্ছে করলেই ছুঁয়ে দেখা যায়। চেখে দেখা যায় পৃথিবীর সেরা আপেলের রয়্যাল স্বাদ! এমন জায়গা আছে আমাদের দেশের মধ্যেই। আপেলের জন্য আসতে হবে বিয়াস উপত্যকায়। মানালিতে।
মানালির আপেল পৃথিবী বিখ্যাত।। এই উপত্যকায় প্রথম আপেলের চাষ শুরু করে ইংরেজরা।
ঋষি মনুর নাম থেকেই 'মানালি'র নামকরণ হয়েছিল। আর এই 'মানালি' শব্দটির অর্থ হল 'ঋষি মনুর বাসভূমি'। হিন্দুদের বিশ্বাস, প্রাচীনকালে পৃথিবীতে এক প্রবল বন্যা হয়েছিল। তখন এই স্থানেই নৌকা থেকে নেমে ছিলেন 'ঋষি মনু'। সেই কারণেই 'মানালি'তে 'ঋষি মনু'র একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। মানালিতে প্রথম কৃষি কাজ শুরু করেছিল কাংরা উপত্যকা থেকে আসা মেষপালকরা। তবে মানালিতে মানালির আপেল পৃথিবী বিখ্যাত। বলা পৃথিবীর সেরা আপেলের স্বাদ মেলে বিয়াস নদীর উপত্যকাতেই। আজকের মানালি ভারতীয় দম্পতিদের কাছে সেরা হানিমুন স্পট নামেই বেশি পরিচিত। রোহতাং পাস, সোলাং ভ্যালী, মণিকরণ, বন বিহার, রেহালা জলপ্রপাত, গুলাবা, কুলু, মান্ডি ছাড়াও বেশ কিছু জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র রয়েছে এখানে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত মানালি শহরে যেমন রয়েছে প্রাচীন হিন্দু মন্দির ও বৌদ্ধ মঠ তেমনি এখানে দেখা মিলবে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের। বছরে মে, জুন, ডিসেম্বর আর জানুয়ারি মাসে এখানে পর্যটকদের ভিড় দেখতে পাওয়া যায়। মানালির বৌদ্ধ মঠগুলিতে তিব্বতী সংস্কৃতির ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে প্রাচীন হিন্দু মন্দির 'হিড়িম্বা দেবীর মন্দির'। পান্ডব রাজপুত্র ভীমের স্ত্রী হিড়িম্বার নামেই নামাঙ্কিত হয়েছে এই মন্দির। ১৫৫৩ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাচীন হিন্দু স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় এই মন্দিরটিতে। মন্দিরটির বিভিন্ন অংশে কাঠের সুন্দর কাজ দেখতে পাওয়া যায়। পাল রাজাদের তৈরি করা নাগর দুর্গের দেখা মিলবে। এই দূর্গ মাবেল পাথর ও কাঠ দিয়ে নির্মান করা হয়েছিল।
মানালিতে বৌদ্ধ স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হল 'মানালি গুম্ফা'। 'ওল্ড মানালি'তে অবস্থিত এই সৌধটি ১৯৬০ সালে তিব্বতীরা তৈরি করেছিলেন। তিব্বতী সংস্কৃতির ছোঁয়া রয়েছে এই সৌধে। এছাড়াও রয়েছে জনপ্রিয় 'নিয়াঙ্গমাপা বৌদ্ধ মন্দির'।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য মানালিতে বহু হিন্দি ছবির শুটিং হয়েছে। লিস্টে নাম রয়েছে 'ক্রিশ', 'এ জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি', 'জব উই মেট', 'ফানা', 'পাপ'-এর মতো জনপ্রিয় ছবির।
হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত মানালি শহরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১,৯৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। রেলপথ, বিমান ও সড়ক পথে বাসের ব্যবস্থা রয়েছে মানালি পৌঁছনোর। তবে বিমানে মানালি কলকাতা থেকে কুলু-মানালি বিমান বন্দর। দিল্লি থেকে সড়ক পথেও মানালি আসা যায়। দূরত্ব প্রায় ২৫৫ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে ট্রেনেও মানালি আসা যায়।