জাগো, তুমি জাগো,
জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী
অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো।
জাগো, তুমি জাগো..
এ গানের সুরে শুদ্ধ হয় মন। হাজার ক্লান্তির ভিড় সরিয়ে মনে জেগে ওঠে উৎসব। শারদীয়ার স্পর্শ ঘুম ভাঙিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় হঠাৎ খুশির প্লাবনে। এই গান বাঙালি জীবনে ভীষণ সত্যি। গায়ক আর গান একাত্ম। সেই টানে একাত্ম শ্রোতাও। দুর্গাপুজোর অন্যতম আগমনী সঙ্গীটিকে কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন এক ঋজু মানুষ।
সাদা কলার পাঞ্জাবি, সাদা ধুতি, ঋজু চেহারা। কণ্ঠটিও ঋজু, কিন্তু মোহ জাগায়। জাগো দুর্গা আর সেই মানুষটি এক হয়ে গিয়েছিলেন সারা জীবনের মতো। মানুষটি দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়।
রবি ঠাকুর, নজরুলের সঙ্গে অন্যান্য গানও গাইতেন। স্বপ্ন ছিল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে গাইবেন। হাজির হয়েছিলেন পঙ্কজ মল্লিকের কাছে। তিনি বললেন, ‘বাণীর কাছে যাও, ও যা বলবে তাই হবে’। পরের দিনই সোজা বোসপাড়ায়। বাণী কুমারের বাড়ি।
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ ...উনি বললেন, ‘আমি শুনেছি তোমার গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি ভালোই গাও’। আমি বললাম, ‘ আমি অন্য গানও গাই’।
শুনে বাণী কুমার বলেছিলেন, ‘আমার গান অন্য গান নয়’।
সারাজীবনেও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ভুলতে পারেননি বাণীকুমারের সেই কথা।
সুযোগ মিলেছিল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে। কোরাস আর ডুয়েটে শুরু করে একদিন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জায়গায়।
হঠাৎই জানা গেল ছবির ব্যস্ততায় ‘জাগো দুর্গা’ গাইতে পারবেন না নির্ধারিত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাহলে কোন শিল্পী গাইবেন সেই গান?
বদলি গায়ক হিসেবে আকাশবাণীর অন্দরে উঠে এলো শ্যামল গুপ্তের নাম। কিন্তু তিনি গাইতে পারবেন না। অসুস্থ। শেষ পর্যন্ত সেই গান এলো তরুণ শিল্পী দ্বিজেনের কাছে।
পঙ্কজ কুমার মল্লিক আর বাণীকুমারের প্রশিক্ষণে ‘জাগো দুর্গা’য় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছিলেন তিনি। আজও এই গানের সুরে তাঁকেই খোঁজে বাঙালি।