"হাওড়ার ব্রিজ চলে মস্ত সে বিছে,
হ্যারিসন রোড চলে তার পিছে পিছে।"
রবি ঠাকুরের স্বপ্নে যে রাস্তা হাওড়া ব্রিজের পিছনে চলতে শুরু করেছিল সেই রাস্তাই আজকের মধ্য কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তা মহাত্মা গান্ধী রোড বা চলতি কথার এম.জি রোড, আর বহু পূর্বের সেন্ট্রাল রোড।
কলকাতার পূর্ব-পশ্চিম এই দুই দিককে একসুতোয় গেঁথে রাখা এই রাস্তার ব্রিটিশ শাসনকালে নাম ছিল হ্যারিসন রোড। তবে কর্ণওয়ালিস, রিপন, ময়রা সাহেবের মত হ্যারিসন সাহেব গভর্নর ছিলেন না, ছিলেন তৎকালীন এক দাপুটে আমলা যিনি একসঙ্গে পুলিশ কমিশনার ও কলকাতা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এই দুটি পদেই আসীন ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতার মাঠ ময়দানে সভা করার জন্য অনুমতি নেওয়ার রীতি চালু করেছিলেন এই হ্যারিসন সাহেব। স্বাধীনতার পর গান্ধীজির নামানুসারে রাস্তাটি হয়ে ওঠে মহাত্মা গান্ধী রোড।
সালটা ১৮৮৯, গ্যাসের আলো ছেড়ে এই প্রথম কলকাতার কোনও রাস্তা সেজে উঠল বিদ্যুতের আলোয়, আর রাস্তাটি অবশ্যই তৎকালীন হ্যারিসন রোড। মহাত্মা গান্ধীর নামের এই এই রাস্তাই জুড়ে রেখেছে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দুই রেলস্টেশন হাওড়া আর শিয়ালদহকে। দার্জিলিং থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মরদেহ শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছলে এই পথ ধরেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্তিম সংস্কারের উদ্দেশ্যে। সেদিন ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তাঁর অন্তিমযাত্রার সাক্ষী হয়েছিল অগণিত দেশবাসী।
কলেজস্ট্রীট আর মহাত্মা গান্ধী রোডের সংযোগস্হলে স্হাপিত আছে ভিক্টোরিয় যুগের সাংবাদিক কৃষ্ণদাস পালের মর্মর মূর্তি। কোনও বিশিষ্ট সাংবাদিকের মূর্তি স্থাপন আজও বেশ বিরল। এই রাস্তা যেমন মনে রেখেছিল এক সরকারী আমলাকে তেমনই আজও মনে করানোর চেষ্টা করে সেই যুগের এক সাংবাদিককে।
কলকাতার এই রাস্তা বড় বৈচিত্র্যময়। বিদ্যা আর বাণিজ্য সহাবস্থান করে এখানে। সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, কলেজস্ট্রীটের বইয়ের দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পত্র, স্পোর্টসের প্রাইজ, রকমারি ব্যাগ-ছাতা, পোষাক সবই মেলে এই পথের দু-ধারে। ব্যান্ড পার্টির পোষাকের সম্ভারও এই রাস্তার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
বৈচিত্র্যে ভরা তিলোত্তমার এই পথ যেন তারই বিচিত্রতার এক নমুনা। ঐতিহ্য আর বৈচিত্র্যে ভরা কোলাহল মুখর এই পথ হয়ে উঠুক কলকাতার আরও নতুন নতুন গৌরবের সাক্ষী।
নিবন্ধকারঃ প্রদীপ্তা কুন্ডু