পৃথিবীর প্রাচীনতম গুহা রূপে পরিচিত ইলোরা। এই ইলোরা গুহার মধ্যেই অবস্থিত প্রাচীন কৈলাসনাথ মন্দির। প্রাচীনকালের মন্দিরগুলো সাধারণত পাথরের টুকরো জুড়ে বানানো হত কিন্তু কৈলাসনাথ মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল সম্পূর্ণ একটি পাহাড় কেটে। তাই জন্য মন্দিরটি নির্মাণ করতে একশো বছর সময় লেগেছিল। যদিও মন্দিরটি কত বছর পুরোনো তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বহু মানুষের। কিছু ইতিহাসবিদের ধারণা অনুযায়ী প্রায় অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রকূটদের রাজত্বকালে এই মন্দিরটি নির্মিত হয় এবং হিন্দু দেবতা শিবের নামে উৎসর্গ করা হয়। এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টন পাথর কেটে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যেহেতু মন্দিরটির আকার অনেকটা কৈলাস পর্বতের মতো তাই মন্দিরের নাম রাখা হয়েছে কৈলাসনাথ মন্দির বা কৈলাস মন্দির।
বর্তমানে ইলোরায় মোট ৩৪টি গুহা রয়েছে যার মধ্যে ১৬ নম্বর গুহায় অবস্থিত কৈলাসনাথ মন্দিরটি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মত অনুযায়ী পৃথিবীর বৃহত্তম মনোলিথিক ভাস্কর্য হল কৈলশনাথ মন্দির। মন্দিরটির নকশা শৈলী ও ভাস্কর্য মুগ্ধ করবে যে কোনও মানুষকে। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে সিংহ, হাতি, নটরাজের মূর্তি ও হিন্দু দেব-দেবীর ছবি দেখতে পাওয়া যাবে। মন্দিরটি মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায় যার মধ্যে রয়েছে গোপুর, অর্ধমণ্ডপ, মণ্ডপ বা নাটমন্দির, জগমোহন, গর্ভগৃহ। যেহেতু এটি একটি শিব মন্দির তাই প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় ও শিবের অনুচর 'নন্দী'র মূর্তি আছে। প্রধান শিব মন্দিরটির সামনেই রয়েছে নন্দী মন্ডপ যার উচ্চতা প্রায় ২৯.৩ মিটার।
ভারতে মোঘলদের শাসনকালে মন্দিরটি বহুবার ভাঙার চেষ্টাও করা হয়েছিল। ১৬৮২ সালে মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব নির্দেশ দিয়েছিলেন এই মন্দিরটি ভেঙে ফেলার। সেই জন্য হাজার জন সৈনিকদের একটি দল পাঠিয়েছিলেন ঔরঙ্গজেব। কিন্তু তিন বছর চেষ্টার পরেও মন্দিরটি ধ্বংস করা সম্ভব হয়েনি। তাই বাধ্য হয়ে মন্দির ধ্বংসের কাজ বন্ধ করতে হয়েছিল তাদের।
মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলায় মন্দিরটি অবস্থিত। রাজধানী মুম্বাই থেকে ঔরঙ্গাবাদের দূরত্ব প্রায় ৩৩৬ কিলোমিটার। তাই মুম্বই থেকে এখানে বহু পর্যটক আসেন।