মহারাষ্ট্রের বালভারতী বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হল সমকামীতার প্রসঙ্গ। বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠ্যসূচী থেকেই লিঙ্গসাম্যতা প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, সিলেবাস পুনঃমার্জিত করে তাতে চিত্র সহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যে, পুরুষ ও নারী উভয়ই গেরস্তের দৈনন্দিন টুকিটাকি কাজ সহ একত্রে সবজি কাটছে। অন্য আরেকটি ছবিতে নারীদের ডাক্তার ও ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি আরেকটি ছবি বলছে পুরুষদের রান্না ও জামা-কাপড় ইস্ত্রী করার গল্প। চলতি বছরের একাদশ শ্রেণীর পাঠ্যসূচি অন্তর্গত সমাজবিজ্ঞান বিষয়টিতেও আমুল পরিবর্তন এনেছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বৈষম্যমূলক বার্তা পিছনে ফেলে শিক্ষাঙ্গনে সাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন বালভারতী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরিবার সংক্রান্ত একটি অধ্যায়ে সমকামী পরিবার সহ সিঙ্গেল পেরেন্টস, লিভ-ইন রিলেশনশিপ সম্বন্ধীয় বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাঁরা। আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের মানসিক উন্নতির স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি অভিনব উদ্যোগ।
এশিয়া তথা ভারতবর্ষের বিবিধ অঞ্চলগুলিতে সমকামী সম্পর্কগুলিকে এখনও সেভাবে মান্যতা দেওয়া হয় না, শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের মানুষ হিসেবেও গণ্য করা হয় না। এই পরিস্থিতিতে, পাঠ্যসূচির একটি অধ্যায়ে মুদ্রিত করা হয়েছে, “২০১৮ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের সুবাদে ৩৭৭ ধারাকে অনপরাধ স্বীকৃত দেওয়া হয় এবং প্রকাশ্য সমকামীতাকে মান্যতা দেওয়া হয়।“
এই অভিনব বৈপ্লবিক উদ্যোগের পিছনে রয়েছেন স্কুলটির বিষয় সমিতির চেয়ারপার্সন বৈশালী দিবাকর। উক্ত বিষয় সমিতির নির্দেশ দ্বারাই পাঠ্যসূচি সম্পাদিত করা হয়। বৈশালী ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, পড়ুয়াদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সে ব্যাপারে কোনোরকম সীমাবদ্ধতার বিষয়ে নারাজ তিনি।
২০১৩-য়, সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করে, লিভ-ইন রিলেশনশিপ কোনো ‘অপরাধ বা পাপ’ নয় এবং ২০১৮-তে পুনরাবৃত্তি করা হয়, চাইলে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হয়েও একসাথে থাকতে পারেন প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতিরা। কিন্তু কে মানে এই সংবিধান? সুপ্রিম কোর্টকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ‘লিভ-ইন রিলেশনশিপ’ নিয়ে পাড়ার দাদা-কাকাদের নীতিপুলিশির ঘটনা আকছার ঘটে থাকে।
এ অবস্থায়, বালভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদক্ষেপ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিঙ্গসাম্যতা প্রতিষ্ঠা করতে আগামীদিনে নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে শিশুদের এ বিষয়ে শিক্ষিত করতে পারলে লিঙ্গবৈষম্যের ব্যাপারগুলি অনেকটাই কমে আসবে। তারা বুঝতে পারবে, যে কেউ নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী জীবনসঙ্গী বা পার্টনার বেছে নিতে পারেন আর এটা কোনো পাপ নয়, এই অধিকার তাঁদের দিয়েছে সংবিধান, দিয়েছে প্রকৃতি।