সালটা ১৯৩১। ওই বছরই আকাশবাণীতে প্রথম সম্প্রচারিত হয় ‘মহালয়া’। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র’র কণ্ঠের সেই চণ্ডীপাঠ আজও ঘরে ঘরে বাজে দেবীর বোধনের দিন ভোরবেলায়। বাঙালির মহালয়াকেন্দ্রিক সেন্টিমেন্টকে স্যালুট জানিয়ে টেলিভিশনের পর্দাতেও আজ বহু বছর ধরে চলছে মহালয়ার অনুষ্ঠান। ১৯৩১ সাল থেকে ২০১৯- পেরিয়ে গিয়েছে অনেকটা সময়। তবু পালটে যায়নি মানুষের মন, মানুষের সেন্টিমেন্ট। কেউ টিভি কেউ আবার রেডিওর মহালয়াকে আঁকড়ে ধরেছে। কিন্তু পাল্লা ভারি কোন দিকে? আজ লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের ব্যস্ততাময় জীবনে কারা ভোর চারটেয় উঠে মহালয়া শুনতে আর দেখতে ভোলেন না তাঁদের কয়েকজনের কথা এই কলমে।
তনিমা সেন- মহালয়া মানেই রেডিও। অন্য কোনও উপায়ে শোনার কথা মাথাতেই আসে না। আমি আজও রেডিওতেই শুনি। আর প্রতিবার শুনি। মিস করি না একবারও।
প্রিয়াঙ্কা সরকার- একদম সত্যি কথা বলছি শোনা হয় না এখন আর। ছোটবেলায় মিস করতাম না। তবে, এখন ভোর চারটেয় ওঠাটা খুব সমস্যার। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় রেডিও নাকি টিভির মহালয়া? তা হলে বলব রেডিওর মহালয়া। রেডিওর মহালয়ার বিকল্প কিছু তৈরি হয়নি হবেও না কখনও।
অনুরাধা মুখোপাধ্যায়- রেডিও আর টিভি দুটোতেই মহালয়া শুনি আর দেখি। বাঙালি, আর মহালয়া উপভোগ করব না তা হয় নাকি? তবে, টিভি নাকি রেডিওর মহালয়া বেশি পছন্দ সেটা জানতে চাইলে বলব রেডিওর মহালয়াই বেশি ভাল লাগে। কারণ চোখ বন্ধ রেখেও উপভোগ করা যায় ভোর বেলা। টিভিতে দেখতে হলে চোখ খুলতে হয়। ওটা বেলার দিকে দেখি। কারণ মহালয়ার দিন সারাদিন ধরে সম্প্রচারিত হয় মহালয়ার অনুষ্ঠান। রেডিওতে একবারই শোনায়। তাই মিস করি না।
জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়- রেডিওতে মহালয়া শোনার মজাই আলাদা। কবে থেকে এই একই রেকর্ড বাজছে। তবুও প্রতিবার ভোরবেলা মনে হয় যেন এই প্রথম শুনছি! এর বিকল্প নেই।
শ্রুতি দাস- রেডিওর মহালয়াই শুনি। তবে, ইউটিউবে চালিয়ে শুনি ভোরবেলাতেই। টিভির গুলোও দেখি। তবে চালিয়ে ভাল না লাগলে বন্ধ করে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। মা এদিন ভোরবেলা ধূপ ধুনো দেয়। শঙ্খ বাজায়। তখনই আগমনীর আবেশ পেয়ে যাই। মনে হয়, মা এসে গিয়েছেন!
সুদীপ্তা চক্রবর্তী- মহালয়া মানেই পুজো চলে আসা। আমার মামাবাড়িতে পুজো হয়। পুজোর কটা দিন আমি সেখানেই থাকি। প্রতিবছর মহালয়া শুনি। দেখতে ভাল লাগে না। শুনতেই বেশি ভাল লাগে মহালয়া। রেডিওর মহালয়ার আভিজাত্যই আলাদা। নিজেও টিভির মহালয়ায় অংশ নিয়েছি। তবু বলব রেডিওতে শুনতেই বেশি ভাল লাগে।
শন বন্দ্যোপাধ্যায়- মহালয়া বাঙালির ঐতিহ্য। ছোটবেলা থেকেই শুনি। আর এখনও শুনলে রেডিওতেই শুনি। টিভিতে দেখি না। মজা পাই না। রেডিওতে মহালয়া শোনার আমেজটাই আলাদা। শুনলেই মনে হয় পুজো আর বেশি দেরি নেই।
পূজারিণী ঘোষ- রেডিও রেডিও রেডিও। মহালয়া না শুনে পুজো শুরু হয় নাকি? আমি তো সারা রাত প্রায় জেগেই থাকি যদি ভোর চারটেয় উঠতে না পারি! অপেক্ষা করি কখন চারতে বাজবে।
ঐশ্বর্য সেন- রেডিওয় মহালয়া শুনিনি এমন একটি বছরও হয়নি আজ অবধি। এবারও শুনব। ভাই-বোনেরা একসঙ্গে শুয়ে শুয়ে শুনি। মহালয়া শুনলেই মনে হয় পুজো এসে গেছে। মহালয়ার গোটা দিনটাকেই মনে হয় আজই পুজো!
গৌরব রায়চৌধুরী- রেডিওর মহালয়া চিরনতুন। এর বিকল্প কোনওদিন তৈরি হবে না। প্রতিবারই মনে হয় নতুন শুনছি। এবারও শুনব। পাড়ার পুজোয় আমি ভীষণ ব্যস্ত থাকি। সুতরাং পুজোর ওই কটা দিন আমার কাছে খুব স্পেশাল। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পাড়া আর এদের সকলের সঙ্গে আড্ডাই আমার একমাত্র কাজ। আর পুজোর দায়িত্বটাও সামলাতে হয়। আর এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি শুরু হয় মহালয়ার দিন থেকেই।
দেবযানী চট্টোপাধ্যায়- রেডিওতে শুনতেই ভাল লাগে। আর রেডিওতেই শুনি। মহালয়া শব্দটার শুনলেই এক লহমায় রেডিওর কথাই মনে পড়ে যায়। অন্য কোনও মাধ্যমের কথা কিছুতেই মনে পড়ে না। তাই এবারও রেডিওতেই শুনব।