ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির সময় স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা যজ্ঞ করেছিলেন এলাহাবাদে তিন নদীর সঙ্গমে। সেই স্থানের নাম প্রয়াগ। প্র-প্রকৃষ্ট, যাগ-যজ্ঞ। যজ্ঞ অনুষ্ঠানের প্রকৃত স্থান হল প্রয়াগ। সেই সূত্রেই মাঘের পূর্নিমা তিথিতে যজ্ঞ ও পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা। প্রতিবছর মাঘমাসেএলাহাবাদের প্রয়াগে অনুষ্ঠিত হয় মাঘ মেলা। প্রয়াগে গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর ত্রিবেণী সঙ্গমে মাঘ স্নানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মহাভারত ও অন্যান্য হিন্দু পুরাণেও এই স্নানের বর্ণনা পাওয়া যায়। অনেকে আবার হিন্দু পঞ্চাঙ্গ পঞ্জিকা মতে প্রয়াগের মাঘ স্নানকে মিনি কুম্ভ বলে থাকেন।
শাস্ত্র মতে প্রয়াগরাজ তীর্থের রাজা।লোকশ্রুতি মতে, দেবতা ও অসুরের তুলকালাম যুদ্ধে অমৃতের কলস থেকে বারো ফোঁটা অমৃতবারি গড়িয়ে পড়েছিল প্রয়াগ, নাসিক, হরিদ্বার ও উজ্জ্বয়িনীতে। গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গম প্রয়াগ তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ মিলনক্ষেত্র।
২০২৩-এ ৬ জানুয়ারি, পৌষ পূর্ণিমা থেকে মাঘ মেলার সূচনা হয়েছে। শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রির দিনে। ৪৫ দিন ধরে চলে মেলা। আয়োজনের দায়িত্বে থাকে উত্তর প্রদেশ পর্যটন দফতর।
মাঘ মাস 'মাধ' অর্থাৎ কৃষ্ণের মাধব স্বরূপের সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই মাসে কল্পবাস, কৃষ্ণ আরাধনার মাহাত্ম্য মেনে চলেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। গোটা মাঘ মাস জুড়ে প্রয়াগে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্নানের যোগ আছে। পৌষ পূর্ণিমা, মকর সংক্রান্তি, মৌনী অমাবস্যা, মাঘী পূর্ণিমা এবং মহাশিবরাত্রি।
প্রয়াগ মাঘমেলায় কল্পবাস করেন ভক্তরা। বন্ধনহীন সাধু সন্ন্যাসী এবং গৃহী মানুষ উভয়েই কল্পবাস করে থাকে। বহু প্রাচীন এই প্রথা। মাঘ মেলা গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর তীরে ত্যাগ, তপস্যা ও বৈরাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। কল্পবাসে সঙ্গম তীরে কিছু বিশেষ সময়ের জন্য বাস করা হয়। যাঁরা কল্পবাস করেন তাঁদের কল্পবাসী বলা হয়। এই বসবাসকালে সৎসঙ্গ, নদীতে স্নান ও স্বাধ্যায় করা হয়ে থাকে। লোক বিশ্বাস অনুযায়ী নিয়ম মেনে কল্পবাস করলে জীবনে সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। যে কল্পবাসী তপস্যা ও একাগ্রতার সঙ্গে কল্পবাস করেন, তিনি নিজের মন ও ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা জন্মায়। এক মাসের কল্পবাসের মাধ্যমে ব্যক্তি একটি কল্প অর্থাৎ ব্রহ্মার এক দিনের পুণ্য লাভ করতে পারেন। ৪৫ দিনকে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগের প্রতীক মানা হয়। গত জীবনের পাপ থেকে মুক্তি পেতে সঙ্গম তীরে প্রায়শ্চিত করেন বহু ভক্ত।