সাম্প্রদায়িক অচলায়তন ধ্বংস করতে নজির গড়ল ‘চাচা নেহেরু’ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান

ভারত সম্প্রীতি’র আরেক নাম, তা আরও একবার প্রমান করল আলিগড়ের চাচা নেহেরু’ নামক এক মাদ্রাসাসাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয় সম্প্রীতি-ভালোবাসাকে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে এই মাদ্রাসার তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাঁদের স্কুল প্রাঙ্গনের ভিতর একই সঙ্গে মন্দির এবং মসজিদ নির্মাণ করে ছাত্রদের প্রার্থনার জন্য সুরক্ষিত কক্ষ প্রস্তুত করা হবে। 

বর্তমানে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির স্ত্রী, সালমা আনসারির সেবা প্রতিষ্ঠান ‘ আল নুর’-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে স্কুলটি। শনিবার বিষয়টির আনুষ্ঠানিক ঘোষনা করা হয়। রবিবার কিছুক্ষণের জন্য সাংবাদিকদের স্কুল প্রাঙ্গনে প্রবেশ করার অনুমতি দেন সালমা আনসারি। সেখানে দেখা যায়, একটি বিভাগ হিন্দু ছাত্রদের জন্যে সংরক্ষিত রয়েছে, যেখানে সেই স্কুলের হিন্দু ছাত্রদের প্রার্থনা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং কক্ষটির অপর প্রান্ত সংরক্ষিত রয়েছে মুসলিম ছাত্রদের জন্য, যেখানে তাঁরা নামাজ পড়বে, প্রার্থনা করবে।

সালমা আনসারি জানিয়েছেন, “ছাত্রদের মধ্যে সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরী করতে এই পদক্ষেপটি গ্রহণ করা আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এতে প্রার্থনার জন্য ছাত্রদের বাইরে কোথাও যেতে হবে না। এখানে চার বছর বয়সী শিশুদের পাশাপাশি ‘স্পেশাল চাইল্ড’রাও রয়েছে। বুধ, শুক্র ও শনিবার প্রার্থনার জন্য, তাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে, শিশুদের মধ্যে নিপীড়নমূলক ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই প্রবণতা এড়াতে স্কুল প্রাঙ্গনের ভেতর মন্দির ও মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত আমাদের উপযোগী বলে মনে হয়েছে।“

ইউপি মাদ্রাসা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে স্কুলটি। প্রায় চার হাজার ছাত্র নিয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে চলে আসছে এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি। শুধু তাই নয়, বিনামূল্যে শহরের অবহেলিত (under privileged) শিশুদের দায়িত্ব গ্রহণ করে তাদের কাছে শিক্ষার বাহক হয়ে উঠেছে এই স্কুল।

“কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞান ও গণিতের পাশাপাশি পাঠ্যসূচিতে ধর্মপোদেশ নিযুক্ত করে মাদ্রাসার আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নিয়ে আসার অনেক আগে থেকেই ছাত্রদের আমরা আধুনিক শিক্ষা ও ব্রহ্মবিদ্যার পাঠ দিয়ে আসছি। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে, বস্তিবাসী বাচ্চারাও ইংরেজি মাধ্যমের গন্ডি অতিক্রম করার অধিকার রাখে,”  বলেন সালমা

কীভাবে তিনি পৌরাণিক ছবি দেখে বড় হয়ে উঠেছেন তাঁর স্মৃতিচারণ করতে করতে সালমা আরও বলেন, “একমাত্র এই ছবিগুলি দেখার অনুমতি পেতাম আমরা। আমি ছোটবেলায় শিব ও হনুমান কে  খুব ভালোবাসতাম। স্কুলে, পবিত্র কোরান পাঠ করে আমাদের দিন শুরু হত এবং তা শেষ হত গায়েত্রী মন্ত্র ও প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে।“

তাঁর এই উদ্যোগ নিয়ে ইসলাম গোষ্ঠীর পাশাপাশি কিছু হিন্দু গোষ্ঠীর মধ্যেও বিতর্ক সৃষ্টি হলে এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “অবহেলিত শিশুদের শিক্ষা দান করার জন্য সাহায্য চাইলে কেউ ঘুরেও তাকান নি সেই সময়। কিন্তু এখন এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে ছাড়ছেন না তাঁরা। কেবলমাত্র সঠিক শিক্ষাই পারে এ ধরণের অশিক্ষার অচলায়তন ধ্বংস করতে।“

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...