ছোট থেকে নাচ করতেন। আঁকতেনও। ঝোঁক ছিল লেখালেখির প্রতিও। বরাবরই অঙ্কে কাঁচা। সুতরাং ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার কোনওটাই হওয়ার চান্স নেই জানতেন মধুরা পালিত। তাই যা করার তা করতে হবে ক্রিয়েটিভ লাইনেই।
উৎসাহী মধুরার বাবা-মায়ের দেখাদেখি মাঝে মাঝেই চলত ক্যামেরায় ঘিচিক ঘিচিক। কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফার হবেন এমনটা ভাবেননি কখনও। বরং কোনও মিডিয়া হাউসের হয়ে কাজ করা যেতে পারে এমনটা পরিকল্পনা করেছিলেন একবার। বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন কিছু সংবাদ মাধ্যম এবং বিনোদন চ্যানেলের জন্য। হঠাৎই জীবনটা গেল পালটে। মধুরা পালিতের আজকের পরিচয় ‘সিনেমাটোগ্রাফার মধুরা পালিত’। এহেন মধুরা কান চলচ্চিত্র উৎসবে পেতে চলেছেন এক বিশেষ পুরস্কার। এই সময়ের বাংলা বিনোদনজগতের কনিষ্ঠতম এবং সম্ভাবনাময় সিনেমাটোগ্রাফারদের মধ্যে অন্যতম মধুরা কান চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে মেসেজ পেয়ে ব্যাপারটাকে মজা হিসেবেই নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন ভুয়ো মেইল এসেছে বোধ হয়। এই নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে হাসি ঠাট্টাও করেছিলেন তিনি। এরপর ‘আই ডব্লু সি সি’র পক্ষ থেকে ফোন পেয়ে বিশ্বাস করেন যে সত্যিই একটা স্বীকৃতি মিলতে চলেছে এবার। বিশ্বের নানা প্রান্তের সদ্য সিনেমাটোগ্রাফিতে স্নাতক এবং যাঁদের দু-তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আছে তাঁদের মধ্য থেকেই সেরাকে বেছে নেওয়া এবং তাঁকে ট্রেনিং দেওয়া এই পুরস্কারের অন্যতম লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে জায়গা করে নিলেন মধুরা পালিত। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে বাংলা বিনোদনজগতের কাছে গর্বের। ২৪ মে কান উৎসবে পাড়ি দেবেন মধুরা। মধুরাই প্রথম যিনি ভারত থেকে এই পুরস্কারটি পাচ্ছেন।
সিনেমাটোগ্রাফার হয়ে ওঠা কী ভাবে? মধুরা জানান-
সিনেমাটোগ্রাফির জার্নিটা শুরু হয় কলেজে পড়াকালীন। সেখানে ছোট্ট একটা স্টুডিও ছিল। বেসিক লাইটিং, ক্যামেরা চালাতাম। তখন দেখলাম এটা করতে তো আমার বেশ ভাল লাগছে। তা হলে এটাই করব। সেই শুরু।
‘বাংলা ফার্স্ট’ নামের একটি ওয়েব সিরিজের ক্যামেরার দায়িত্বে থাকাকালীন পরিচয় হয় অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধায়্যায়ের সঙ্গে। সেই সময় অ্যান্টিলজিক ফিল্ম ‘ওয়াচমেকার’ বানানোর পরিকল্পনায় ছিলেন অনিন্দ্য পুলক। ‘ওয়াচমেকার’-এ ক্যামেরার দায়িত্ব সামলানোর অনুরোধ জানান মধুরাকে। মধুরার ক্যামেরার জাদুতেই বাজিমাত করে ‘ওয়াচমেকার’।
ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম আমি ও মনোহর, সম্পূরক, পেপার বয় (শর্ট ফিল্ম), আড্ডা টাইমসের ওয়েব সিরিজ বৃত্ত, আতর (শর্ট ফিল্ম), লাস্ট রেইন সহ একাধিক অ্যাড ফিল্ম বানিয়েছেন মধুরা। চলছে আরও বেশ কিছু কাজের কথা।
মহিলারা সব কাজের জন্য নয়—এই কথায় সায় নেই মধুরার। আজ অবধি কেউ তাঁকে বলে উঠতে পারেননি ক্যামেরার কাজটা তিনি ঠিকমতো করতে পারবেন কিনা। তবে, মাঝে মধ্যে একটু আধটু বাঁকা কথা শুনতে হয়নি তা নয়, সামলে নিয়েছেন। সেই সব লোকেদের আর কাছেই ঘেঁষতে দেন না মধুরা।
লো বাজেটের ছবির জন্য কাজ করতে বেশি ভালবাসেন মধুরা। কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর কাজের যে পোর্টফোলিওটি বানানো হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ ছবিই ছিল কম বাজেটের। কিন্তু বিষয়বস্তুর নিরিখে যে কোনও বড় বাজেটের ছবির থেকে গুণমানে অতুলনীয় সেই সব ছবি।