বাঙালি কন্যের বিশ্বজয়

'পিয়ের অঁজেনিউ এক্সেলেন্স ইন সিনেমাটোগ্রাফি স্পেশাল এনকারেজমেন্ট আওয়ার্ড'- গাল ভরা এই পুরস্কারটির সঙ্গে আমরা বাঙালিরা কি পরিচিত ছিলাম এতদিন? এবারে, বলা ভালো সম্প্রতি আমরা জেনেছি পুরস্কারটি সম্পর্কে এবং লাফাচ্ছি যথেষ্ট। ২০১৩ সাল থেকে এই পুরস্কার চালু করেছে 'কান চলচিত্র উৎসব কমিটি'। তবে মহিলা বিভাগটি চালু হয়েছে গত বছর থেকে।ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফি-তে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলে 'কান' এই পুরস্কার দেয়। আমরা মিডিয়ার দৌলতে এতদিন শুধু চিত্রতারকাদের ঝাঁ চকচকে পোশাকে রেড কার্পেটে হাঁটাচলা মানেই কান চলচ্চিত্র উৎসব জানতাম। এবারে একটু নড়েচড়ে বসা গেল। আরে, বাড়ির মেয়েটাই একটা পুরস্কার বাগিয়ে ফেলল, তাও আবার 'কান' থেকে!!!

                                                                            

ঠিক তাই। আমাদের ভারতবর্ষের গর্বের মুখ হয়ে উঠেছেন মধুরা পালিত। বাংলার নাম উজ্জ্বল করেছেন বিশ্বের আঙিনায়।

    সিনেমাটোগ্রাফার মধুরা কিন্তু একদিনে এতটা পথ অতিক্রম করেননি। ক্যামেরাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল সেন্ট জেভিয়ার্স। সেখানেই মাস কম নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। যদিও মা-বাবা ফটোগ্রাফার হওয়ার সুবাদে ছোট থেকেই ছবি তোলা ব্যাপারটা জীবনযাপনের মধ্যেই ছিল। পরবর্তীতে আরো একটু হাত পরিষ্কার করার জন্য এবং খুঁটিয়ে শেখার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় ফিল্মস এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এ। সেখানে পড়াকালীন তিনি ফিচার ফিল্মের ক্যামেরার দায়িত্বে ছিলেন। শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি, এড ফিল্মে কাজ করেছেন মধুরা।

২০১৭ থেকে পেশাদার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। অনিন্দপুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় 'ওয়াচ মেকার', অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় 'আমি ও মনোহর', এবং অর্ঘ্যদীপ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত 'রডোডেনড্রন'-এ ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফির দায়িত্ব সামলেছেন মধুরা। অর্ঘ্যদীপের 'পরিযায়ী' ছবির কাজও তিনি সামলেছেন। তবুও মধুরার নিজের কথায় ব্যস্ত সমাজের চিত্রটা কিন্তু অন্যরকম। মহিলা ডিওপি মেনে নিতে অনেকেরই অসুবিধে হয়। ভরসা করতে ভয় পায় লোকজন। একজন মহিলা ক্যামেরা করবে, সেটা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাই বর্তমানে মধুরার চ্যালেঞ্জ

তবে বাধা পেলে আরও ভালো কাজ করার জেদ চেপে যায় তাঁর। কনফিডেন্স বেড়ে যায়, পুরুষ শাসিত সমাজে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার খিদেটা যেন আরও জাঁকিয়ে বসে।

      

     দ্য পেপার বয়- যে ছবিটির জন্য মধুরা পুরস্কৃত হয়েছেন, ছবিটির বিষয়বস্তু হল, কলকাতা শহরের ফুটপাথে বেড়ে ওঠা একটি ছেলের গল্প। ফুটপাথই তার পৃথিবী। সকালে জায়গায় জায়গায় পেপার বিলি করা থেকে দুপুরে চায়ের দোকান হয়ে শোওয়ার জায়গায় ফেরার মধ্যেও যে স্বপ্নের অনাবিল বুনোট, তাকেই সাদা- কালোয় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

রবিবার সকালেই পুরস্কার নিয়ে দেশে ফিরেছেন মধুরা, ফিরেই সোজা শুটিং ফ্লোরে পৌঁছে গিয়েছেন। অঞ্জন কাঞ্জিলালের 'সহবাসে' ছবির শুটিং শুরু হচ্ছে, ছবিটির ক্যামেরার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মধুরা। এই পুরস্কার তাঁকে ভবিষ্যতে আরো আরো ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে তা বলাই যায়।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...