একটি গ্রামে মোট ৭৫টি পরিবারের বাস। অথচ সেই ৭৫টি পরিবারের মধ্যে ৪৭ জনই রয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ সরকারীকর্মী। উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর জেলার গদ্দিপুর গ্রামসভার অধীনে মাধোপট্টি গ্রামে আইএএস এবং আইপিএস মিলিয়ে রয়েছেন ৪৭ জন।
শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯১৪ সালে। এই গ্রামের প্রথম আইএএস অফিসার হয়েছিলেন স্বনামধন্য কবি ওয়ামিক জৌনপুরির বাবা মুস্তাফা হুসেন। তার পরে ছিল বেশ খানিকটা বিরতি। ১৯৫২ সালে আইএএস হয়েছিলেন ইন্দু প্রকাশ। তার পর থেকেই এলাকার যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ কর্মী হওয়ার বাসনা জেগে ওঠে। ইচ্ছে এবং প্রচেষ্টা একসঙ্গে যখন মিলে যায়, তখন সাফল্য কেউ আটকাতে পারেনা। এক্ষেত্রেও হয়েছিল তাই। গ্রামের নবীন প্রজন্মের মধ্যে যে জেদ এবং কঠিন পরিশ্রমের বীজ বপন করে দিয়েছিলেন ইন্দু প্রকাশ, তার স্ফুরণ ঘটেছিল একের পর এক সাফল্যের মাধ্যমে। গ্রামে এমন নজিরও আছে, একই পরিবারের চার ভাই আইএএস। ১৯৫৫ সালে আইএএস পাশ করেন বিনয়কুমার সিং। তিনি নানা দায়িত্ব পালনের শেষে বিহারের মুখ্যসচিব হন। তাঁর দুই ভাই ছত্রপাল সিং এবং অজয়কুমার সিং ১৯৬৪ সালে আইএএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৮ সালে তাঁদের চতুর্থ ভাই শশীকান্ত সিং-ও আইএএস হয়ে যান। এই চার আইএএস ভাইয়ের মধ্যে ছত্রপাল সিং দীর্ঘ সময় তামিলনাড়ুর মুখ্যসচিব পদের দায়িত্বে ছিলেন।
এখান থেকে রাজ্য প্রশাসনেও বহু মানুষ গিয়েছেন। ঘরে ঘরে রয়েছেন পিসিএস অফিসার। প্রায় ৩০ জন পিসিএস রয়েছেন এই গ্রামে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক ক্ষেত্রেই নয়, সাফল্যের উদাহরণ রয়েছে অন্যান্য ক্ষেত্রেও। এই গ্রামেরই জন্মজেয় সিং বিশ্বব্যাঙ্কে উচ্চপদে চাকরি করেন। লালেন্দ্রপ্রতাপ সিং, ডক্টর নিরু সিং ভাবা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী। এই গ্রামেরই সন্তান জানু মিশ্র রয়েছেন ইসরোতে।
এতকিছুর পরও জানলে অবাক লাগে যে গ্রামে প্রায় সব বাড়িতেই সরকারি পদস্থ কর্মীর বাস, সেখানে গ্রামটির উন্নয়নের জন্য তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি সরকারি তরফে। গ্রামের পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, স্কুল, হাসপাতাল প্রভৃতি প্রাথমিক সুবিধাগুলিও পর্যন্ত উপলব্ধ নয়। গোটা এলাকায় একটিও এটিএম নেই। হাসপাতালের জন্য গ্রাম থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। ইলেক্ট্রিসিটিও তথৈবচ। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল গ্রামের আশপাশে কোথাও সিভিল সার্ভিসদের কোচিং নেবার জন্য কোনও রকম কোচিং সেন্টার নেই। আসলে সাধারণত কলেজে পড়ার সময় থেকেই এখানকার ছাত্রেরা সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি নেন। গ্রামের এক শিক্ষক কার্তিকেয় সিং এই সাফল্যের পেছনে জেলার 'তিলকধারী সিংহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ'কেই কান্ডারি হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর মতে কলেজ থেকেই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসার পাঠ নেওয়া শুরু হয়ে যায়, তারপর ছাত্ররা আরও ভাল করে নিজেদের তৈরী করে মূল পরীক্ষায় বসেন।