কালীকথা: হিলির কালী মায়েরা

ভারত বাংলাদেশ সীমন্তে রয়েছে দিনাজপুরের হিলি। ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তে যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ হিলি। এখানকার চৌদ্দো হাতের কালী পুজো এবং সেই উপলক্ষ্যে বসা মেলা খুবই বিখ্যাত। এই পুজো ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের স্মৃতি বহন করে চলেছে। হিলি সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায়ার কারণে সেখানে যুদ্ধে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই যুদ্ধে মৃত সৈনিকদের হিলির পশ্চিম আপ্তইর এলাকায় কবর দেওয়া হয়েছিল। কবরের কারণে ওই এলাকায় অনেকেই রাতে ভয় পেতেন। সেই ভয় দুর করতে এই এলাকার মানুষ শুরু করেন ১৪ হাত কালীর পুজো শুরু করেন। প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের অমাবস্যা তিথিতে মায়ের পুজো হয়। এখানে মা বৈষ্ণব মতে পুজিতা হন, সেই কারণেই এখানে বলিপ্রথা নেই। মাকে অন্ন ভোগ নিবেদন করা হয়।

বিএসএফের ক্যাম্প, প্রান্তর বরাবর চলে গিয়েছে কাঁটাতার। ভারতের হিলি সীমান্ত, আর ওপারে বাংলাদেশ। সীমান্তের ওপারে থাকা হাঁড়িপুকুর গ্রাম। প্রতিবেশী দেশের বাসিন্দাদের সঙ্গেই মিলেমিশেই চলে হাঁড়িপুকুরের দিন যাপন। এখানেই সীমান্ত কালীর আরাধনায় মেতে ওঠেন বাসিন্দারা। সীমান্ত কালীর পুজোতে যত না হিলির লোক যায়, তার থেকে অনেক বেশি বাংলাদেশের মানুষ আসে। 

দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম হাঁড়িপুকুর। এই হাঁড়িপুকুর গ্রামেই রয়েছে সীমান্ত কালীর থান। প্রতিবছর সেখানে ধুমধামের সঙ্গে মায়ের আরাধনা হয়। সারা বছর ধরে মন্দিরের দেখাশোনা করে বাংলাদেশের মুসলমানরাও। পুজোর সময় তাই শুধু হিন্দুরা নয়, তারাও সামিল হয়। দুই সম্প্রদায়ের উদ্যোগেই সীমান্ত কালীর আরাধনা চলে।

এখানে মূর্তিতে পুজো হয় না, থানকে জাগ্রত মানেন স্থানীয়রা। আবার হিলির আরেক বিখ্যাত কালী পুজো হল বিকট কালী পুজো, রীতি মেনে চৈত্র সংক্রান্তিতে বিকট কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয় হিলিতে। হিলি ব্লকের প্রাচীন বিকট কালী মন্দিরে চৈত্র সংক্রান্তি তিথিতে বাৎসরিক পুজো হয়। পুজোর নয়দিন আগে গর্ভগৃহে মঙ্গলঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়। নয়দিনের সূচি মেনে পুজো সম্পন্ন হয়। 

হিলিতে আরও এক প্রাচীন মন্দির রয়েছে বিদ্যেশ্বরী মন্দির, বালুরঘাট থানার পতিরামের বহুকাল প্রাচীন এই কালী মন্দির আছে। এখানেও কোনও মূর্তি নেই। একটি বেদীতে লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা দেওয়া রয়েছে। লোকবিশ্বাস দেবী ভূগর্ভে অন্তর্নিহত আছে। কথিত আছে, ভবানী পাঠক নাকি এই মন্দিরে নিত্য পূজা দিতে আসতেন। এই স্থান দেবীর একান্নতম শক্তিপীঠ হিসেবে পূজিত হয়। 

হিলি চামুণ্ডা মন্দিরটি খুব বিখ্যাত। মা চামুণ্ডা এখানে পূজিতা, প্রায় ২০০ বছর আগে হিলির জমিদার রমণ ধর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চামুণ্ডা দেবীর এই মন্দির ঘিরে এক কাহিনী রয়েছে। জমিদারের একটি হাতি একদিন স্থানীয় নদীর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে শত চেষ্টার পরও আর উঠতে পারছিল না। সেই রাতে জমিদারের স্বপ্নাদেশ পান, দেবী চামুণ্ডা দুটি শিলাখণ্ডের উপর ওই স্নানের ঘাটে আবির্ভূতা হয়েছেন। পরদিন সকালে ঘাটে গিয়ে দুটি শিলাখণ্ডের উপর একটি নিম কাঠের খণ্ড দেখতে পান জমিদার।

জমিদার কাঠ খণ্ডটি দিয়ে চামুণ্ডার মুখ তৈরি করিয়ে কাছারিবাড়ির অনতিদূরে ফুল বাগানে মন্দির নির্মাণ করে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন।পরবর্তীতে ওই স্থানে আরও কয়েকজন দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপন করে তিনি একটি মন্দির তৈরি করেন। এখন আর সেখানে ফুলবাগান নেই, ওই মন্দিরটি এখন ফুলতলার মণ্ডপ নামে পরিচিত। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শনিবার মহাড়ম্বরে মা চামুণ্ডার আরাধনা হয় এখানে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...