মায়ের সঙ্গে মেয়ে নয়, মেয়ের সঙ্গে মা! সব্বাই বলেন, 'কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা, এবার আসে মায়ের সঙ্গে একবার আসে এলকা'। কিন্তু দেবীর সব সন্তানই তো মায়ের সঙ্গে আসেন আবার একলাও আসেন। দোষ শুধু কার্তিকেয়র বেলা! তবে রাঢ় বাংলার একমাত্র একটি জায়গায় দেবী আসেন মেয়ের সঙ্গে। বাঁকুড়ার রতনপুরে বাগদেবীর সঙ্গে দুর্গা আসেন। সরস্বতী পুজো পান মুখ্য দেবী হিসেবে। চালায় মধ্যিখানে থাকেন সরস্বতী। ডান দিকে থাকেন লক্ষ্মী ও গনেশ আর বামে দুর্গা আর কার্তিক। পুজোর বয়স তিনশ বছরের বেশি।
মোটমাট পুজো হয় ৮ দিনের। রতনপুরের বিশ্বাস পাড়ার জনৈক বলাই চন্দ্র বিশ্বাস এই পুজো প্রচলন করেছিলেন। সরস্বতী পুজো হলেও দুর্গার সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। দুর্গাকে ভগবতী রূপে সরস্বতীর সঙ্গে পুজো করা হয়। গ্রামে দেবী অম্বিকার মূর্তি রয়েছে। শারদীয়ার সময় এই পুজো হয়। দেবীর স্বপ্নাদেশেই দুর্গাপুজো বন্ধ করা হয়।
বিশ্বাস পাড়ার দেখাদেখি দাস পাড়াতেও এ'ভাবে সরস্বতী পুজো হয়। আসলে দুর্গাপুজোর সময় গ্রাম থাকত উৎসবহীন। ফলে মানুষ নিজের তাগিদেই আনন্দ করার জন্য আরেকটা উৎসবের সৃষ্টি করে নিয়েছে। বাঁকুড়া জেলার রতনপুর গ্রামে ব্রাত শারদীয়া দুর্গাপূজো। শারদ উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের মানুষ সরস্বতী পুজোর দিন থেকে টানা ৮ দিন মেতে ওঠেন। দাস ও বিশ্বাস, গ্রামের দুই পাড়ায় চলে আট দিনের বাগ দেবীর আরাধনা। দুই পাড়াতেই দেবী সরস্বতী একা আসেন না। সাথে থাকেন দেবী দুর্গা এবং লক্ষ্মী, গনেশ ও কার্তিক। বিশ্বাস পাড়ায় আবার দেবীকে কাঁঠাল ভোগ নিবেদনের রেওয়াজ আছে। বিশালাকার কাঁঠাল মাথায় করে ঢাক বাজিয়ে চলে গ্রাম পরিক্রমা। দ্বাদশীর দিন কাঁঠাল ভেঙে নিবেদন করা হয় দেবীকে। অন্যদিকে, দাসপাড়ায় দ্বাদশীর দিন অন্ন বিতরণ করা হয়। বিসর্জনের অনুষ্ঠানকে বলা হয় ধুলোট। সরস্বতী পুজোর নাম দিয়ে দুর্গার সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়।