উত্তরাখন্ডের চম্পাবত জেলা। পাইন-ফার-ওকের সবুজ আর নীল আকাশ ছোঁয়া পাহাড়, গভীর গিরিখাদ দর্শন বদলে দেয় মানুষের। পাহাড়প্রেমী মানুষ যেমন যায়, তেমনি এই জেলা তীর্থযাত্রীদের কাছেও সমান টান। চম্বাবতের আকর্ষণ দেবীধুরা বারাহী মন্দির।
পাহাড়ের শান্ত পরিবেশের মধে রক্ত, নরবলি আর এক রুদ্র দেবীর মিথ আলাদা শিহরণ জাগায়। মনে হয় পৃথিবী বদলে গেলেও এই স্থানে থেমে আছে সময়। মহাভারতের কাহিনীতে আছেন দেবী বারাহী। মন্দির দর্শন করেছিলেন পঞ্চপান্ডব।
দেবীধুরা প্রকৃতপক্ষে বারাহী দেবী। দেবীর মূল মূর্তি গুপ্ত অবস্থায় থাকে। মন্দিরে যে মূর্তিটি দেখা যায় সেই মূর্তির সঙ্গে অন্যান্য দেবদেবী আছেন।
বারাহী দেবী উগ্র স্বভাবের। বরাহ অবতারের শক্তি। এই দেবীর উদ্দ্যেশ্যে প্রাচীনকালে নরবলি দেওয়া হত। গাড়োয়াল, চামিয়া, বাল্মীক ও লালগড়ি- এই চার পাহাড়ি সম্প্রদায়ের দেবীর উদ্দ্যেশ্যে বলি দেওয়ার জন্য নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে কাউকে না কাউকে নির্বাচন করত। এটাই ছিল প্রথা। একবার এক সম্প্রদায়ের নেতার একজনই মাত্র উত্তরাধিকারী ছিল। তার মৃত্যু হলে বংশ নাশ ঘটত। তাই সেই গোষ্ঠীপতি দেবী বারাহীর কাছে আকুল হয়ে প্রার্থণা করেন। দেবী তাঁর প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে নরবলি বদলে অন্য পথের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী ঠিক হয় এই চার সম্প্রদায় দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে পাথর ছুঁড়ে যুদ্ধ করবে। যুদ্ধ দেখে দেবী তুষ্ট হবেন। দু পক্ষের মধ্যে পাথরের আঘাতে কারুর রক্তপাত যুদ্ধ থেমে যাবে। লোক বিশ্বাস, হলে ভক্তের রক্তদর্শনে শান্ত হন দেবী।
বর্তমানে বদলে ঘটেছে যুদ্ধের। এখন আর পাথর ছুঁড়ে যুদ্ধ হয় না। বদলে ফুল আর ফল ছুঁড়ে যুদ্ধ করা হয়। এই যুদ্ধ প্রথাকে ‘বাগোয়াল’ বা ‘বগিয়াল’ যুদ্ধ নামেও ডাকে স্থানীয়রা। ‘বাগোয়াল’ মানে যুদ্ধ। গোটা পৃথিবীর কাছে অবশ্য এই যুদ্ধ ‘বাগোয়াল ফেস্টিভ্যাল’ নামে চেনা। শ্রাবণ মাসে রাখী বন্ধন উৎসবের সময় অনুষ্ঠিত হয়।
কুমায়ন, নেপাল, ও উত্তরাঞ্চলের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ যোগ দেন উৎসবে। বাগোয়াল উৎসবে বাঁশের তৈরী ছাতার মতো একধরনের ঢাল ব্যবহার করেন যোদ্ধারা। এই ঢাল উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বারাহী দেবীর মন্দিরে আছে ভীমের হাতের ছাপ। বলা হয় পঞ্চপান্ডব এই স্থানে এসেছিলেন।
জিম করবেট তাঁর ‘টেম্পল টাইগার’ বইতেও এই মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছিলেন। দেবদারু আর ওক গাছের জঙ্গলঘেরা মন্দির। বরাহী দেবীকে খালি চোখে দেখা যায় না। মানুষের বিশ্বাস, খালি চোখে কেউ দেখলে দেবীর তেজে অন্ধ হয়ে যায়। দেবী তাই লাল কাপড়ে ঢাকা। উৎসবের সময় চোখে কালো কাপড় বেঁধে পুরোহিত অর্চনা করেন।
চৈত্র এবং আশ্বিন নবরাত্রিতে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়।