রাঁচির সাধারণ ছেলে থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয়। গোলকিপার থেকে ভারতের সেরা উইকেটকিপার। অতি সাধারণ পরিবারের ছেলে মাহি আজ ভারতের প্রিয় এম.এস.ডি। নাম-যশ-অর্থ কিছুই বাকি নেই পাওয়ার। এত কিছুর পরেও এই চল্লিশ বছরে এসেও এক বিশেষ বন্ধুর ধার আজও মেটাতে পারেননি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কোনওদিন হয়তো পারবেনও না।
অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটারের সিগনেচার স্টাইল থাকে। যেমন সচিনের স্ট্রেট ড্রাইভ, কোহলির কভার ড্রাইভ, রোহিতের পুল, মালিঙ্গার ইয়র্কার, হরভজনের দুসরা, সেওয়াগের আপার কাট, দিলশানের স্কুপ কিংবা পিটারসেনের সুইচ হিট কিংবা সেই ডগলাস মেরিলিয়ারের 'মেরিলিয়ার শট'। তেমনই কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির 'থাপ্পড় শট', যা তিনি 'ধার' নিয়েছিলেন বন্ধুর থেকে। যা ঝাড়খণ্ডে শিখে লঞ্চ করেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সেই ধার আর ফেরত দেওয়া হয়নি।
বুঝতে পারলেন না? ভাবছেন আবার কোন শট! তাহলে আর কেমন ধোনি ফ্যান হলেন! আরে হেলিকপ্টার শট। যে শটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জন্মদাতা ধোনি হলেও আদতে এই শটের আবিষ্কারক তো ধোনির বন্ধু সন্তোষ লাল।
ছোটবেলায় ধোনির ক্রিকেট পার্টনার ছিলেন সন্তোষ। টেনিসে খেপ খেলতে দুজনেই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতেন। সেরকমই এক টুর্নামেন্টে প্রথম এই শট খেলেন সন্তোষ। চমকে যান ধোনি। দেখেন একদম সোজা ইয়র্কার লেন্থের বল অনায়াসে সন্তোষের ব্যাটের থাপ্পড়ে চলে যাচ্ছে মাঠের বাইরে। বন্ধুরাই এর নাম দিয়েছিল থাপ্পড় শট। ধোনিকে এই শট হাতে করে শেখান সন্তোষ।
থাপ্পড় শট ধোনির ব্যাট থেকে বেরোতেই তার রিস্ট ঘোরানো দেখে নাম হয়ে যায় 'হেলিকপ্টার শট', যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের হেলিপ্যাডে লঞ্চ করেছিল ২০০৫-০৬ সালের ইংল্যান্ডের ভারত সফরে। ইংরেজ পেস কিংবদন্তী এন্ডারসনকে সেই শট মেরে ছক্কা হাঁকান ধোনি। সন্তোষের লোকাল সিগনেচার শট ধোনির হাত থেকে বেরিয়ে পায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন শটের তকমা। হয়ে যায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সিগনেচার শট, যা তিনি ধার করেছিলেন ক্রিকেট পার্টনার সন্তোষের থেকে।
এই ধার আর ফেরানো হয়নি ভারতের সফলতম ক্রিকেট অধিনায়কের। কী করেই বা করবেন? সন্তোষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেননি। ঝাড়খণ্ডের হয়ে রঞ্জি খেলতেন। কিন্তু তাঁকে পেয়ে বসেছিল মদের নেশা। প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাত্র ৩০ বছর বয়সেই। চেষ্টা করেছিলেন ধোনি। যদি শটের ধার জীবন বাঁচিয়ে শোধ করা যায়। রাঁচি থেকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে বন্ধুর চিকিৎসা করান। কিন্তু কিছু করা যায়নি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে মারা যান থাপ্পড় থুড়ি হেলিকপ্টার শটের আসল জন্মদাতা।