১৯৯১ সাল। ভেঙে পড়ছে যুগোস্লাভিয়া। তার বলকান অঞ্চলে শুরু হয় নির্মম গৃহযুদ্ধ। সেই সময় জাদার শহরে ফুটবলপ্রেম নিয়ে বেড়ে উঠছে একটি ছেলে। কে জানত সে হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ল্যান্ডমাইনের সঙ্গে ড্রিবলিং করতেই করতেই বড় হয়ে ওঠা। তিনি লুকা মদ্রিচ।
দেশ যখন ভাঙল লুকা তখন ক্রোয়েশিয়ার বাসিন্দা। জাদারের রাস্তায় ফুটবল নিয়ে খেলার সময় আর দশটা শিশুর মতো মদ্রিচকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হত। এই বুঝি হামলা চালায় সার্বিয়ার বিমান। বিমানের শব্দ পেলেই দে দৌড়। জীবনের গোলটা ওই প্রত্যেকটা দৌড়ে খুঁজে পেয়েছিল লুকা। সার্বিয়ান সৈন্যরা তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। তারা মদ্রিচের দাদাকেও হত্যা করেছিল। মদ্রিচের দাদাকে যখন সার্বিয়ান সৈন্যরা আটক করে, ছোট্ট মদ্রিচও সে সময় আটক হয়েছিলেন সৈন্যদের হাতে। মদ্রিচ ছাড়া পেলেও তার দাদাকে যুদ্ধ গ্রাস করে নেয়।
অন্য শিশুদের মতো তাকেও সবসময় সাবধান করা হতো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে যেন সে দূরে না যায়। কিন্তু ফুটবল পাগল ছেলেকে কে বোঝায় যে সে মাইনভর্তি মাঠে বল নিয়ে ড্রিবল করতে যাচ্ছে। যুদ্ধ তাঁর জীবন যুদ্ধকে শক্ত করেছে মদ্রিচকে। তিনি নিজেই বলেছেন,"যুদ্ধ আমাকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু আমি সারাজীবন এ নিয়ে ভাবতে চাই না। কিন্তু আমি তা একবারে ভুলে যেতেও চাই না।"
এনকে জাদারের হয়ে বয়সভিত্তিক ফুটবল খেলতেন মদ্রিচ। এই ক্লাবের হয়ে খেলার সময় তার পরিচয় হয় তোমিস্লাভ বাসিচের সাথে। এই বাসিচ মদ্রিচের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেন। এনকে জাদারের পরে মদ্রিচ ক্রোয়েশিয়ার আরেক ক্লাব হাদজুক স্পিল্টের সাথে চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাসিচের পরামর্শে তিনি পরিকল্পনা পাল্টে ফেলেন।
পরবর্তীতে বাসিচ ডায়নামো জাগরেবের সাথে মদ্রিচের চুক্তি করাতে সফল হন। তারা ১৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে ১০ বছরের চুক্তিতে তাদের যুব দলে নেয়। তরুণ মদ্রিচ পরবর্তীতে এই ক্লাবের হয়ে যখন নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করেন, চোখে পড়ে যান টটেনহাম হটস্পার ক্লাবের। খুব তাড়াতাড়ি সুযোগ এসে পড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর।
এখান থেকে টটেনহাম হটস্পারে হয়ে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউরোতে ২০১২ সালে এই ক্রোট মিডফিল্ডারকে কিনে নেয় স্পেনের বিখ্যাত ফুটনল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। সে সময়ে এই অর্থের বিনিময়ে দল-বদল বিশাল কিছু ছিলো। ইংল্যান্ডের মতোই স্পেনের খেলার ধরন, নতুন সতীর্থদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছিল মদ্রিচের। তেমন সফল হননি। খেলা খোলে দ্বিতীয় মরসুমে।
আর দেশ। কে ভেবেছিল ২০১৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল খেলবে। ৯৯ -এর দাভর সুকেরের ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনাল খেলা আর ২০১৮ সালে ক্রোয়েশিয়ার ফাইনাল খেলার অনেক তফাৎ রয়েছে। কারণ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে একজন মদ্রিচ ছিল না। আর মেসি রোনাল্ডো হইচইয়ের মাঝে ব্যালন ডি অরটা ছিনিয়ে নেওয়া সোজা কথা নয় কিন্তু। সেটা করে দেখিয়েছিলেন লুকা। জীবন যুদ্ধটা যে ওভাবেই ড্রিবল করে জিতে উঠেছেন।