৮ জুলাই ৫০ ছুঁয়েছেন সৌরভ। বাঙালির গর্ব মহারাজের গোটা জীবনজুড়ে ক্রিকেটের পাশাপাশি যে সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে রয়েছে তিনি হলেন সৌরভজায়া ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। বাস্তব জীবনে আদ্যোপান্ত প্রেমিক মানুষ প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। তাঁর প্রেমকাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। সৌরভের কৈশোরের প্রেম ডোনা। একেবারে পাশের বাড়ির প্রতিবেশী ছিলেন তাঁরা কিন্তু গাঙ্গুলি আর রায় পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক কোনও কালেই মধুর ছিল না। পরিবারের থেকে লুকিয়ে ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসেই আইনি বিয়ে সেরে ফেলেছিলেন দুজনে। এক বছর পর সামাজিক রীতি মেনে চারহাত এক হয় দুজনের।
২২ গজের সৌরভ সকলের চেনা। ২২ গজের বাইরে জীবনের মঞ্চেও ছক্কা হাঁকান সৌরভ। মহারাজের প্রেমের মঞ্চে সাফল্য ধরা দিয়েছিল। প্রেমজীবন থেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসার রাস্তাটা কেমন করে পেরিয়েছিলেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট।
কাহিনী না সিনেমার চিত্রনাট্য ধরতে পারবেন না। তবে রোমান্টিক সিনেমার প্লটকেও হার মানাবে সৌরভ-ডোনার প্রেম। সৌরভের পাশের বাড়ির মেয়ে ছিলেন ডোনা। প্রতিবেশীকেই ভালবেসে ফেলেন দাদা। দুই পরিবারের মধ্যের সম্পর্ক কিন্তু সৌরভ-ডোনার প্রেমে বাধা তৈরি করতে পারেনি।
একটা সময় স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ডোনাকে ফলো করতেন সৌরভ। সৌরভ ব্যাডমিন্টন খেলতেন। খেলার সময় শাটলকক ডোনাদের বাড়িতে ঢুকে যেত। শাটল কক ডোনাদের বাড়িতে এসে পড়লে তিনি সেটা সৌরভকে দেওয়ার সুযোগ পেতেন। প্রতিবেশী ডোনার প্রেমে পড়েছিলেন সৌরভ, প্রথম ইঙ্গিত ছিল তাঁর দিক থেকেই। যদিও সৌরভকে মনে মনে ভাল লেগেছিল ডোনার। প্রেম শুরু সেই সময়ে কলকাতার এক রেস্তরাঁয় প্রথম ডেটে গিয়েছিলেন তাঁরা। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করলেও সৌরভ-ডোনার ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে।
বাড়ির কাউকে না জানিয়েই ১৯৯৬ সালের ১২ অগস্ট আইনি বিয়ে সেরে ফেলেন সৌরভ-ডোনা। লুকিয়ে বিয়ে করার পরএর দিন শ্রীলঙ্কায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ খেলতে চলে যান সৌরভ। ডোনা আগের মতোই তাঁর বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু লুকিয়ে বিয়ে করার পরেও সংবাদমাধ্যম তাঁদের বিয়ের খবর পেয়ে যায়। ব্যস সৌরভের বাড়িতে বাবার কানে পৌঁছে যায় সেই খবর। এই খবর শোনামাত্র সৌরভের কাছে ফোন। দাদা জানান, বাড়ি ফিরে কথা হবে। তাঁর বাবা ফোন করে বললেন, "এটা কী খবর?" পরেরদিন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খেলা ছিল, প্রথম বলেই আউট। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভালো খেলেন সৌরভ। বাবার ফোন এল। খেলার প্রশংসা করার পর আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, "এটা ঠিক কি ভুল?" তাঁর জবাব ছিল, "কলকাতায় ফিরে কথা হবে।" তবে শেষপর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই হয়ে যায়। আদপে সৌরভের অভিভাবকেরা প্রথম থেকেই এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিলেন। নয়ের দশকে সেটাই স্বাভাবিক। তবে পরে তা মেনে নেন। এদিকে ডোনার বাবা কিছুতেই রাজি ছিলেন না। এত বাধার পরেও কিন্তু একে অপরকে ছেড়ে যাননি সৌরভ। তাঁরা লুকিয়ে বিয়েও সেরে ফেলেছিলেন।
পরবর্তীকালে দুই পরিবারই তাঁদের বিয়ে মেনে নেয়। ১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই পরিবারের উপস্থিতিতে সমস্ত নিয়ম মেনে বিয়ে হয় সৌরভ-ডোনার। তারপরের দিনেও খেলতে উড়ে যান সৌরভ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ক্যারিবিয়ান দ্বীপে উড়ে গিয়েছিলেন সদ্যবিবাহিত সৌরভ। সেই সফরে নতুন বউকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সালটা ১৯৯৭। তখনও ডোনাদির মাথায় সিঁদুর ওঠেনি। ওটা দু'মাসের সফর ছিল। তাই ওদের হানিমুন তখন হয়নি। তবে ১৯৯৭-এর মে মাসে তারা সুইৎজারল্যান্ডে হানিমুনে যান। একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন শোতে সৌরভ নিজেই একথা জানিয়েছিলেন।
২০০১ সালের ৩ নভেম্বর তাঁদের একমাত্র সন্তান সানার জন্ম হয়। দেখতে দেখতে বিয়ের পঁচিশটা বছর কাটিয়ে ফেলেছেন সৌরভ-ডোনা। কৈশোরে আমরা কোন মানুষের প্রতি আকর্ষিত হই, প্রেমে পড়ি। শোনা যায় কৈশোরের প্রেম নাকি পরিপূর্ণতা পায় না। এই কথাকে মিথকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছেন সৌরভ ও ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের কৈশোরের প্রেম। ছেলেবেলার প্রেম যে পূর্ণতা পায়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলেন সৌরভ-ডোনা। রূপকথার গল্পে যেমন রাজকুমারী-রাজপুত্রের সুখী জীবনের কথা শুনি, ঠিক সেরকমই সৌরভ ও ডোনার প্রেমকাহিনী।