লর্ডসে মিলে গেল ঝুলন আর সৌরভ

লর্ডস মিলিয়ে দিলো ঝুলন গোস্বামী আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ঝুলনের ২০ বছরের কেরিয়ার থামল লর্ডসে। ইংল্যান্ডকে তাদের মাটিতেই এক দিনের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নজির গড়ে তার বিদায়ী সিরিজকে স্মরণীয় করে রাখল সতীর্থরা।  

একজনের শুরু আরেকজনের শেষ, মিলে গেল লর্ডসে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন দুজনেই। দুজনেই বাংলার গর্ব। লর্ডসেই টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ভরতের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বর্তমান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আর লর্ডসেই নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের শেষ ইনিংস খেললেন ঝুলন গোস্বামী।

এক দিনের ক্রিকেটে ঝুলনের ঝুলিতে রয়েছে ২৫২টি উইকেট। টেস্টে রয়েছে ৪৪টি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিয়েছেন ৫৬টি উইকেট। বাংলার দলে মেন্টরের দায়িত্ব আছেন। বাংলার ক্রিকেট 'দাদা' সৌরভের পর পেয়েছে 'দিদি' ঝুলনকে। মেয়েরাও যে ১৩৫ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারেন, তা শিখিয়েছেন ঝুলনই। সেরা সময়ের ঝুলনের বোলিং বিপদে ফেলত পারত যে কোনও ব্যাটারকে। ঝুলনের কথায়, ''পাড়ার ক্রিকেটে আমাকে দাদারা কখনও বল করতে দিত না। ওরা বলত, তোর বল খুব 'স্লো'।'' এ কথাই তাঁকে তাতিয়ে দিয়েছিল। জোরে বল করার 'সাধনা'র শুরু সেখানেই। একটা সময়ে মহিলাদের ক্রিকেটে দ্রুততম বোলার ছিলেন ঝুলনই।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচই যে তাঁর শেষ ম্যাচ, এটা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঝুলন কখনও বলেননি ঠিকই কিন্তু, তবু বোর্ড, সতীর্থ ক্রিকেটারদের তরফে বলে দেওয়া হয়, শনিবারই ঝুলনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বস্তুত, নিজের অবসর নিয়ে ঝুলন কখনওই মুখ খোলেননি। ম্যাচের পরের দিন ঝুলন আনুষ্ঠানিক ভাবে অবসর ঘোষণা করলেন।

অবসরের আগেই অবশ্য নতুন দায়িত্ব পেয়ে গিয়েছেন। অনেক মেয়ের কাছে ঝুলন ক্রিকেটার হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা। শুধু ভারতীয় দলের জার্সিটা আর পরা হবে না। তবে এ বার থাকবেন প্রশিক্ষকের দায়িত্বে। বাংলার দলে তিনি এখন মেন্টরের দায়িত্বে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক ম্যাচ খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচেও ঝুলন খেললেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এক সাক্ষাৎকারে ঝুলন বলেন, ''আমার যে বয়স হচ্ছে তা ফিল্ডিং করতে গিয়ে বুঝতে পারছি। তবে আমার মনে হয় ফিট থাকার আসলে কোনও বয়স হয় না। সুস্থ-সবল থাকতে চাওয়ার ইচ্ছেটাই বড় কথা। এবং সেই ইচ্ছেকে বাস্তবায়িত করতে যা যা করা প্রয়োজন, ধারাবাহিক ভাবে তা মেনে চলা উচিত।''

ঝুলনের ২০ বছরের কেরিয়ার থামল লর্ডসে। বিশ্বকাপ না পাওয়ার দুঃখ নিয়েই অবসর নিলেন নদিয়ার চাকদহের মেয়ে। এখানেও যেন একটা মিল রয়ে গেল সবুজ ঘাসে ইতিহাস সৃষ্টি করা দুই বাঙালির। আরেকটা অদ্ভুত মিল আছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ঝুলনেরও প্রথম ভালবাসা ছিল ফুটবল। ১৯৮২ সালের ২৫ নভেম্বর নদিয়ার চাকদহ পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড লালপুরে জন্ম ঝুলন গোস্বামীর। বাড়ির সবাই ডাকেন বাবুল নামে। বাবা নিশীথ গোস্বামী ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার এক জন ক্যান্টিন কর্মী। থাকতেন ছোট্ট বাড়িতে। '৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিবেশীর টিভিতে দেখতে বসেই ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ জন্মায় ঝুলনের। সেই শুরু। কিন্তু পাড়া ক্রিকেটে খুশি ছিলেন না। চাইতেন আরও বেশি ক্রিকেট খেলতে। আরও বেশি শিখতে। কিন্তু কাছেপিঠে কোচিংয়ের সুযোগ নেই যে! অগত্যা গন্তব্য কলকাতা। বিবেকানন্দ পার্কে স্বপন সাধুর কাছে প্রশিক্ষণ শুরু ঝুলনের। ইচ্ছেশক্তি, নিংড়ে দেওয়া মেহনত অন্যদের থেকে ঝুলনকে আলাদা করে দিয়েছে। ছোটবেলায় কোচ বলতেন, ''অনেক মেয়েকে ক্রিকেট শিখিয়েছি। কিন্তু তোমার মতো 'হাই-আর্ম' বোলিং অ্যাকশন কারও দেখিনি। তার পর যদি তোমাকে না সাহায্য করি, সেটা হবে প্রতিভার প্রতি অবিচার।''

লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না। লোকাল ট্রেনে কয়েক ঘণ্টার যাতায়াত, ভিড়ে ক্রিকেট কিট কাঁধে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে দেখে কারও টিপ্পনী কিংবা শুধু খেলার জন্য বাড়ির লোকের বকুনি— 'চাকদহ এক্সপ্রেস' হতে লেগেছে বিস্তর পরিশ্রম আর অনেকখানি ত্যাগ। ঝুলন বলেন তিনি কী পেয়েছেন বা কী পাননি তার হিসাব রাখতে ভালবাসেন না। কোনও কিছুর জন্য খেদও নেই তাঁর। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। নিজেকে প্রমাণ করতে করতে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আইসিসির বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটারের সম্মান, পদ্মশ্রী, অর্জুন— সরকারি, বেসরকারি অজস্র সম্মান ও খেতাব পেয়েছেন ৩৯ বছরের পেসার।

রবিবার ভোরে বাঙালির রেডিওতে মহালয়া শোনার আগের দিন শনিবার রাতে টিভিতে দেখা গেল ঝুলনের বিদায়ী ম্যাচ। শেষ হওয়া ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ জিতে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ঝুলন। রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টের সাহায্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজের অবসরের কথা ঘোষণা করলেন ঝুলন।

পোস্টে ঝুলন লিখেছেন, 'অবশেষে সেই দিনটা চলেই এল। সব যাত্রা যে ভাবে শেষ হয়, আমার ২০ বছরের ক্রিকেট যাত্রারও সে ভাবেই শেষ হল। সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আজ অবসর ঘোষণা করছি।' তিনি আরও লিখেছেন, 'খুব তৃপ্তিদায়ক যাত্রা ছিল। একইসঙ্গে খুব উত্তেজক। নিজের সর্বস্ব দিয়ে ২০ বছর ভারতের জার্সি পরে থাকতে পারা গর্বের ব্যাপার। ম্যাচের আগে প্রতি বার জাতীয় সঙ্গীত শোনার সময় গর্ব অনুভব করতাম।'

ঝুলন নিজের পোস্টে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিসিসিআই, সিএবি, জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি এবং এয়ার ইন্ডিয়াকে। আলাদা করে কারওর নাম তিনি নেননি। পাশাপাশি লিখেছেন, 'ক্রিকেটার হিসেবে বরাবর সৎ থাকতে চেয়েছিলাম। আশা করি ভারত এবং গোটা বিশ্বে মেয়েদের ক্রিকেটে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরেছি। আমাকে দেখে আরও মেয়ে ক্রিকেট খেলতে এগিয়ে আসবে, এটাই আমার আশা।'

ঝুলন গোস্বামীর বিদায়ী সিরিজকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁর সতীর্থরা। ইংল্যান্ডকে তাদের মাটিতেই এক দিনের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নজির গড়লেন হরমনপ্রীত কউররা। শনিবার সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ১৬ রানে জিতল ভারত। হরমনদের ১৬৯ রানের জবাবে ইংল্যান্ড করল ১৫৩ রান।

ঝুলনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁকে নিয়েই টস করতে যান হরমনপ্রীত। ৩৯ বছরের জোরে বোলারকেই কয়েন টস করতে দেন তিনি। শেষ ম্যাচের শুরুতেই প্রাক্তন অধিনায়ককে এ ভাবে সম্মানিত করলেন অধিনায়ক। টস অবশ্য জেতেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যামি জোনস। তিনি প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন। ইংল্যান্ডের বোলারদের দাপটে বড় রানের ইনিংস গড়তে পারল না ভারত। তাতেও অবশ্য জয় আটকাল না।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে নজির গড়ল ভারতীয় মহিলা দল। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের অপরাজিত ১৪৩ রানের সুবাদে পাঁচ উইকেটে ৩৩৩ রান তুলল ভারত। যা মহিলা দলের এক দিনের ক্রিকেটে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এক দিনের ক্রিকেটে ভারতীয় মহিলা দলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ২ উইকেটে ৩৫৮। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৫ মে ওই ইনিংস খেলে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। যে ম্যাচে দীপ্তি শর্মা ১৮৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। বুধবার হরমনপ্রীতের ১৪৩ রানের আগ্রাসী ইনিংসের সুবাদে এক দিনের ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলল ভারত।

প্রথম এক দিনের ম্যাচে ঝুলনের বোলিং বুঝিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় দলের এখনও অন্যতম সেরা পেসার তিনিই। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাত উইকেটে জিতল ভারত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২২৭ রানে। ঝুলন ১০ ওভার বল করে দেন মাত্র ২০ রান। নেন একটি উইকেট। ভারতের বাকি বোলারদের থেকে সব থেকে কম রান দেন ঝুলন। তিনি এবং মেঘনা সিংহের দাপটে প্রথম ১০ ওভারে সে ভাবে রানই তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড। মেঘনাও নেন একটি উইকেট। ভারতের হয়ে দু'টি উইকেট নেন দীপ্তি শর্মা। একটি করে উইকেট নেন রাজেশ্বরি গায়কোয়াড়, স্নেহ রানা এবং হারলিন দেওল। ইংল্যান্ডের হয়ে অর্ধশতরান করেন অ্যালিস রিচাবার্ডস। ৪৩ রান করেন ড্যানি ওয়াট।

সেইরান তাড়া করতে নেমে স্মৃতি মন্ধানার দাপটে সহজেই ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। স্মৃতি ৯১ রান করেন। মাত্র ন'রানের জন্য শতরান হাত ছাড়া ভারতীয় ওপেনারের। যষ্টিকা ভাটিয়া করেন ৫০ রান। মাত্র এক রান করে আউট হন শেফালি বর্মা। শেষ পর্যন্ত থেকে ভারতকে ম্যাচ জেতান অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। তিনি অপরাজিত থাকেন ৭৪ রানে।

ঝুলন গোস্বামীর বিদায়ী সিরিজকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁর সতীর্থরা। ইংল্যান্ডকে তাদের মাটিতেই এক দিনের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নজির গড়লেন হরমনপ্রীত কউররা। শনিবার সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ১৬ রানে জিতল ভারত। হরমনদের ১৬৯ রানের জবাবে ইংল্যান্ড করল ১৫৩ রান।

প্রথম দু'টি ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নেন হরমনরা। সে দিক থেকে শনিবারের ম্যাচ ছিল নিয়মরক্ষার। ম্যাচের ফল নয়, আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন ঝুলনই। ভারতীয় মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক কী করেন, সে দিকেই ছিল সকলের নজর। তিনি ব্যাট করতে নামার সময় 'গার্ড অফ অনার' দিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। আবার ভারত ফিল্ডিং করতে নামার সময় তাঁকে একই ভাবে 'গার্ড অফ অনার' দিলেন সতীর্থরা। শনিবারের লর্ডসে ভারত-ইংল্যান্ড এক দিনের ম্যাচের থেকে বেশিই চর্চায় ছিল ঝুলনের ক্রিকেট-জীবন। যা বারে বারে উঠে এসেছে ধারাভাষ্যকারদের কথায়। ইডেন থেকে লর্ডস— ঝুলনের দু'দশকের যাত্রা পথের নানা অলিগলিতে বিচরণ করেছেন তাঁরা। ঝুলন ব্যাট করতে যাওয়ার সময় বা নতুন বল হাতে আক্রমণ শুরুর সময় হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন উপস্থিত দর্শকরা। ঝুলন স্লিপে অনবদ্য ক্যাচ ধরে সোফি একলেস্টোনকে সাজঘরে ফেরাতেই উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে লর্ডসের গ্যালারিতে।

ঝুলন গোস্বামীর অবসরের ম্যাচে অবশ্য আলোচনার মুখ ঘুরে যায় ইংরেজদের শেষ উইকেট চার্লি ডিনের আউটের দিকে। বল করতে গিয়ে দীপ্তি শর্মা দেখেছিলেন ইংরেজ ব্যাটার নন স্ট্রাইকারের দিকের ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। উইকেট ভেঙে দেন দীপ্তি। শুরু হয় বিতর্ক। কদিন আগে চার্লির কাছেও একই সুযোগ এসেছিল। তিনি যদিও উইকেট ভাঙেননি। সতর্ক করে ছেড়ে দেন।

দীপ্তি বল করতে এসে নন স্ট্রাইকার চার্লিকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখে উইকেট ভেঙে দেওয়া মেনে নিতে পারেননি অনেকে। ঘটনার পর দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে মতবিরোধ চলছেই। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা এই ভাবে উইকেট নেওয়ার বিপক্ষে। ভারতীয়রা যদিও বলছেন যে, এটা তো আইসিসির নিয়মের মধ্যেই রয়েছে। দীপ্তি পাশে পেয়েছিলেন তাঁর অধিনায়ক হরমনপ্রীত কউরকেও। তিনি বলেন, "এটা খেলার অংশ। কোনও ভুল দেখছি না। আমরা নতুন কিছু করিনি। এই আউট প্রমাণ করে আমরা কতটা সতর্ক এবং ব্যাটাররা কী করছে। আমি দলের মেয়েদের পাশে আছি। নিয়মের বাইরে দীপ্তি কিছু করেনি।"

মাঠের ঝুলন গোস্বামীকে অভিনন্দন জানালেন পর্দার ঝুলন। শনিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে তাকে অভিনন্দন জানালেন ঝুলনের বায়োপিকে অভিনয় করা অনুষ্কা শর্মা। ঝুলনের জীবন গল্পের মতো। সেখানে ওঠা-পড়া আছে, আছে ঘাত-প্রতিঘাত। তবে দিনের শেষে আছে জিতে যাওয়ার হাসি। এমন এক জনকে নিয়ে সিনেমা হবে না, তাই হয় নাকি। ছবির নাম চাকদহ এক্সপ্রেস।

চলচ্চিত্রে ঝুলনের চরিত্রে অভিনয় করার সময় থেকেই আলাপ। ঝুলনের চরিত্র নিখুঁত ভাবে খুটিয়ে তুলতে অনুষ্কা ছিলেন ভীষণ আন্তরিক। বিভিন্ন সময় ঝুলনের কাছে নানা পরামর্শ নিয়েছেন। সিনেমাটি অবশ্য এখনও মুক্তি পায়নি। তার আগেই প্রাক্তন হয়ে গেলেন ঝুলন। সমাজমাধ্যমে ঝুলনের বায়োপিক 'চাকদহ এক্সপ্রেস'-র নানা অংশের ছবিও দিয়েছেন অনুষ্কা। কয়েক দিন আগে সিনেমার একটি দৃশ্যের ছবি দিয়ে অনুষ্কা লিখেছিলেন, 'ওর জুতোয় পা গলিয়ে যাত্রাটাকে পুননির্মাণ করছি।' কয়েক সপ্তাহ আগেও 'চাকদহ এক্সপ্রেস'-র একটি স্থির চিত্র সমাজমাধ্যমে অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন তিনি। ঝুলনের জীবনচিত্রের ছোট্ট একটি অংশের ভিডিয়োয় সমাজমাধ্যমে দিয়েছিলেন কোহলির স্ত্রী।

শনিবার ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই সমাজমাধ্যমে ঝুলনকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্কা লিখেছেন, 'এক অনুপ্রেরণা। এক জন আদর্শ। এক জন কিংবদন্তি। ইতিহাসে আপনার নাম চির দিন লেখা থাকবে। ধন্যবাদ ঝুলন গোস্বামী। আপনি ভারতের মহিলা ক্রিকেটের রং বদলে দিয়েছেন।' ঝুলনকে নিয়ে অনুষ্কার মন্তব্য, ''যে সময়ে ঝুলন ক্রিকেটার হতে চেয়েছেন, এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রিকেটার হিসাবে নিজেকে মেলে ধরেছেন, তখনও খুব বেশি মহিলা ক্রিকেটকে পেশা করার কথা ভাবতে পারেননি।'' এমন এক জনের জীবন নিয়ে ছবি করতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত বলে জানান অনুষ্কা।

বাংলার ক্রিকেট সংস্থার (সিএবি) তরফে জানানো হয়েছে ইডেনের স্ট্যান্ডে থাকবে ঝুলন গোস্বামীর নাম। প্রাক্তন ক্রিকেটার ও বর্তমান সিএবি সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "ঝুলন কিংবদন্তি। মেয়েদের ক্রিকেট এবং পেস বোলিংকে বদলে দিয়েছে ঝুলন। বাংলার মহিলা ক্রিকেট দলের মেন্টর করা হয়েছে ওকে। মেয়েদের ক্রিকেটে উন্নতি করতে ঝুলনকে কাজে লাগানো হবে। আমরা চাই বাংলার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ও খেলুক।" 

 

নিবন্ধকারঃ ঋদ্ধি রিত

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...