শিব সৃষ্ট জলাশয়ে ভগবান বিষ্ণুর ভাসমান মূর্তি ভক্তদের টান

ভগবান বিষ্ণু পূজিত হন নেপালের বুদ্ধানীলকন্ঠ মন্দিরে। এই মন্দিরে জলাশয়ের উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে একটি বিষ্ণু মূর্তি। ভক্তদের বিশ্বাস, প্রায় ১৪০০ বছর আগে এই মূর্তিটি খোদাই করা হয়েছিল। দৈর্ঘ্যের পাঁচ মিটার লম্বা মূর্তিটি যে জলাশয়ের উপর ভাসছে সেটা গোশাইকুন্ড হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়েছিল। পুরাণ কাহিনি অনুযায়ী, সমুদ্র মন্থনের সময় যখন মন্দির পর্বত স্থল থেকে কালকূট হলাহল উঠে এসেছিল। ভয়ঙ্কর সেই বিষ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য ভগবান শিব নিজে সেই বিষ কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। বিষের জ্বালায় পান গলা জ্বলতে শুরু করেছিল তার। তাই জল পান করার জন্য উত্তরে চলে এসেছিলেন তিনি। এক স্থানে ত্রিশূলের আঘাতে একটি জলাশয় সৃষ্টি করেন তিনি। সেই জলাশয় থেকে জল পান করেছিলেন। পরবর্তীকালে সেই জলাশয়ের নাম দেওয়া হয় গোশাইকুন্ড।

প্রতিবছর আগস্ট মাসে শিব উৎসবের সময় এই হ্রদের জলে ভগবান শিবের একটা প্রতিছবি দেখতে পাওয়া যায়। যার কারণ আজও জানা সম্ভব হয়নি। হিন্দু পুরাণ মতে, গৌতম বুদ্ধ হলেন ভগবান বিষ্ণুর নবম অবতার। তাই  বুদ্ধানীলকন্ঠ মন্দিরের ভগবান বিষ্ণুর মূর্তির সঙ্গে গৌতম বুদ্ধের মুখের মিল রয়েছে। এই কারণে হিন্দুদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এই মন্দির খুব গুরুত্বপূর্ণ। মন্দির বিষ্ণু মূর্তিটি সম্পূর্ণ ব্যাসল্ট পাথর দ্বারা নির্মিত। মূর্তিটি কুন্ডুলি পাকানো শেস নাগের উপর শুয়ে রয়েছে। মূর্তির চার হাতে রয়েছে চক্র, গদা, শঙ্খ, পদ্ম ফুল। এই প্রতিটি জিনিসের একটা মানে রয়েছে। চক্র বিষ্ণুর মনকে বোঝায়, শঙ্খ চারটি উপাদানের প্রতিনিধিত্ব করে, পদ্ম ফুল যা চলমান মহাবিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং গদা প্রাচীন জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে।

নেপালের রাজাদের ভগবান বিষ্ণুর অবতার বলে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও অভিশাপের জন্য নেপালের রাজ পরিবার এই মন্দির পরিদর্শন করতে পারবে না।  কথিত আছে যে রাজা প্রতাপ মল্ল একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন, এই মন্দিরে প্রবেশ করলে তার প্রাণ যাবে। তাই তিনি কখনও এই মন্দিরে প্রবেশ করেননি। তার কথা শুনে নেপালের রাজাদের কেউই এই মন্দিরে যাননি। হরিশায়নী এবং হরোবিধিনী চলাকালীন এই মন্দিরে হাজার হাজার তীর্থযাত্রীর একটি বিশাল ভিড়। হরিশায়নীর সময় ভগবান বিষ্ণু ঘুমোতে যান। প্রায় চার মাস ধরে চলে হরিশায়নী উৎসব। তারপর হরোবিধিনীর সময় আবার ঘুম থেকে জাগানো হয় ভগবানকে।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে প্রাচীন এই মন্দিরটির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। তাই কাঠমান্ডু থেকে খুব সহজেই আসা যায় এই মন্দিরে। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...