জগন্নাথ দেবের অতি প্রিয় "ফেনী"

পুরী বলতেই চোখের সামনে ভাসে সমুদ্র, জগন্নাথ মন্দির আর ফেনী। এই ‘ফেনী’ খাননি এমন মানুষ নেই। 'ফেনী' শুনে অচেনা লাগছে? যদি বলি খাজা! তাহলে? উড়িষ্যায় এই খাজার পরিচিতি ফেনী নামেই। আর এই খাজাই স্বয়ং জগন্নাথ দেব, উৎসর্গ করার আগে নিজেই গ্রহণ করেন। যদিও এই খাজার জন্মস্থল আদৌ কিন্তু উড়িষ্যা বা পুরী নয়। তাহলে সেই খাজা প্রভুর এত প্রিয় হল কী করে? বলব সেই অজানা কথাই।

প্রথমেই আসি এর জন্ম বৃত্তান্তে। মৌর্য সাম্রাজ্যের এক্কেবারে শুরুর দিকে মিথিলা ও নালন্দার মাঝে এক অপরিচিত গ্রাম শিলাও'-এ জন্ম এই খাজার। কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’-এ রাজার খাদ্য তালিকার অন্যতম এই শুকনো খাজা। কিন্তু কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, খাজার জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশে, যা একটু রসালো প্রকৃতির। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তাঁর ‘সি -ইউ –কি’ গ্রন্থে এই খাজার বর্ণনা করেন তুরস্কের ‘বাকলাভ’এর সাথে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর কল্যাণীর চালুক্য রাজ তৃতীয় সোমেশ্বরের ‘মানষোল্লাস’ গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। তবে পুরীর খাজার সাথে শিলাও'এর খাজার মিল আছে, সুতরাং বয়সের দিক থেকে বেশ প্রবীণ এই খাজা।

যাইহোক, কিন্তু এই খাজা পুরীতে এল কী করে? খাদ্য সংস্কৃতির আদানপ্রদান তো বটেই, কিন্তু এর সাথে আছে দৈব মাহাত্ম্যের সংযোগ। কথিত আছে, এক মুসলমান হালুইকারের শখ হয় যে তিনি জগন্নাথ দেবকে তার বানানো খাজা নিবেদন করবেন। কিন্তু ধর্মীয় বৈষ্যম্যের কারণে সে তো অসম্ভব। কিন্তু স্বয়ং জগন্নাথ স্বামী তাকে এক্কেবারে আলাদাভাবে খাজা বানানোর স্বপ্নাদেশ দেন এবং সন্ধ্যের ঠিক আগে তা মন্দিরে নিয়ে যেতে বলেন।

Feni1

হালুইকার প্রভুর কথামতো সেই খাজা বানিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে গেলে রক্ষী আর পুরোহিতদের সাথে বিস্তর গোল বাধে। ইতিমধ্যেই প্রায় সন্ধ্যার মুখে হঠাৎই এক কালো কুকুর ঝাঁপিয়ে একটা খাজা মুখে নিয়ে দৌড়ে মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করে, বিতন্ডা থামিয়ে সবাই তাকে ধাওয়া করলেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেই খাজা অর্ধভুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় জগন্নাথ স্বামীর সম্মুখে। তখনই গর্ভগৃহ থেকে প্রভুর দৈববাণী শোনা যায়, তিনি বলেন যে, তাঁর এই খাজা খাওয়ার ইচ্ছে হয়, কিন্তু সেই ইচ্ছে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় সে নিজেই কুকুর রূপ ধারণ করে তা গ্রহণ করলেন, সাথে নির্দেশ দিলেন এরপর থেকে যেন প্রতি সন্ধ্যেবেলা এই খাজা তাকে ভোগ দেওয়া হয়, তবে এই ভোগ তিনি নিবেদনের আগে নিজেই গ্রহণ করে নেবেন। সেই শুরু খাজা অর্থাৎ ফেনীর যাত্রা; আজও সন্ধ্যেবেলায় বড়শৃঙ্গার ধুপভোগে অর্থাৎ সন্ধ্যে ৬টার ভোগে নিবেদন করা হয় এই ফেনী।

আপনিও বাড়িতে বানাতে পারেন ছাপ্পান্ন ভোগের এমন শুকনো খাজা, রইল রেসিপি:

২ কাপ ময়দায় ৪ টেবিল চামচ ঘি ময়ান দিয়ে ভালো করে ৫ থেকে ৮মিনিট মিশিয়ে ১/২ কাপ জল দিয়ে মেখে ডোও বানিয়ে সাতটি লেচি কেটে নিতে হবে। পাশে ২ কাপ মিছরির গুঁড়ো, ১/২ কাপ জল দিয়ে হাইফ্লেমে দিয়ে একটু মোটা রস বানিয়ে এর মধ্যেই ১টা লেবুর রস দিলে চিনি ক্রিস্টালাইজড হবে না বা সাদা মিছরির লেয়ার পড়বে না।

এবার কেটে রাখা সাতটি লেচি এক্কেবারে পাতলা করে (১৫ সেন্টিমিটারের) বেলে নিতে হবে। এবার এক একটা রুটির উপর ভালো করে ঘি মাখিয়ে তার উপর চালের গুঁড়ো লাগিয়ে সাতটি রুটির লেয়ার বানিয়ে চেপে চেপে রোল করে শেষের দিকে জল দিয়ে আটকে দিতে হবে, তাহলে খুলবে না (না হলে ঘি’তে ভাজতে গেলেই লেয়ার খুলে যাবে)। এবার রোল ছুরি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে একটু চেপে লম্বালম্বি শুকনো ময়দা দিয়ে বেলে কড়াইয়ে মিডিয়াম ফ্লেমে গরম ঘি’তে খাজাগুলো লালচে করে ভেজে একটু ঠান্ডা করে রসে দিয়ে তুলে নিলেই তৈরী মচমচে ,চকচকে খাজা, হাই ফ্লেমে দিলে এক পিঠ পুড়ে যাবে,ভিতর থাকবে কাঁচা। তুলসী দিয়ে ভোগ নিবেদন করুন আর কৃপাধন্য হন আপনিও।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...