জ্বর কমাতে এই ওষুধ সেবন করেন স্বয়ং জগন্নাথদেব

'জ্যেষ্ঠ পূর্ণিমায়' স্নানযাত্রার পর জগন্নাথ দেবের জ্বর হয়। এই সময় পুরীর মন্দিরে চলে ‘অনসর সেবা’, আর এই সেবায় প্রভুকে নিবেদন করা হয় নানা ঔষধি ভোগ। সেই সন্ধান দেব আর এই জ্বরের কারণই বা কি? দেব সেই তথ্য, সাথে রেসিপিও।

জ্বর হলে শুধু যে আপামর মনুষ্য জাতিকে বিস্বাদ ওষুধ খেতে হয় তা কিন্তু নয়। স্বয়ং ভগবানকেও রীতিমতো ওষুধ খাওয়ানো হয়, জ্বর কমাতে কপালে লাগানো হয় চন্দন বাটাও। তা ‘জ্যেষ্ঠ পূর্ণিমায়’ রোদের মধ্যে ১০৮ কলস জলে স্নান করে, আমের শরবত খেলে জ্বর হতে বাধ্য। আর এই কাণ্ডের পর জ্বরে পড়েন জগন্নাথ স্বামী, তবে একা নন,সেই জ্বরের ভাগীদার হন বলভদ্র ও সুভদ্রা মাও। এই সময় কোয়ারেন্টাইনে থাকেন তাঁরা। ‘কোয়ারেন্টাইন’ কথার অর্থ নিজেকে আবদ্ধ রাখা, তার জন্য করোনা হতে হবে এমন নয়। বিধি মতে এই সময় শ্রী মন্দিরের দেবদর্শন বন্ধ থাকে, আসেন রাজ বৈদ্য। আর এই পনেরো দিন ব্যাপী চলে প্রভুর ‘অনসর বা অনবসর’ সেবা।

এই 'জ্বর লীলার' কিন্তু বেশ কিছু প্রচলিত ব্যাখ্যা আছে। আমরা যেমন জ্বর হলে আপনজনের সেবা চাই, তেমনি জগন্নাথ স্বামী তাঁর অতি আপন শবরজাতির দ্বৈতাপতিদের থেকে সেবা পাওয়ার জন্যই এই লীলা করেন। দ্বৈতাপতিরা বিভিন্ন ঔষধি নিবেদন করেন প্রভুকে, যা ‘অনসর গুপ্তরীতি সেবা’ নামেই খ্যাত। প্রসংঙ্গত বলা ভালো, শ্রী মন্দিরের প্রত্যেকটি রীতি-বিধি বংশপরম্পরায় পালিত হয়। এই দ্বৈতাপতিরাও বংশপরম্পরায় এই সেবা করেন প্রভুকে। আর এই ঔষধি ভোগে থাকে অনসর পনা, সাথে ছেনা চকটা, বিভিন্ন ফলের রস।

MedicineBhog1

প্রভুর ‘জ্বর লীলার’ এক অন্য ব্যাখ্যাও প্রচলিত আছে। কথিত আছে, মাধব দাস নামে প্রভুর এক পরম ভক্তের রোগ প্রভু গ্রহণ করেন, আর তাই পনেরো দিন তিনি নিজেকে আবদ্ধ রাখেন। আর তার কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক সেবক বংশ পরম্পরায় তাঁর গুপ্তরীতি সেবায় নিযুক্ত থাকেন।

অষ্টমীর দিন থেকে জগন্নাথদেবের মৈলম লাগি সেবায় ‘ফুলোরি তেল’ লাগানো হয়। দশমীতে প্রভুর জ্বর এতটাই বেড়ে যায় যে ‘দশমুল পাঁচন’ নিবেদন করে জ্বর কমানো হয়। কী সেই পাঁচন সে প্রসঙ্গে আসবো পরে। আগে বলি 'অনসর পনা' কিন্তু স্বাস্থ্যকর এক পানীয়, যা বানিয়ে এই পনেরো দিন আপনিও প্রভুকে সেবা করতে পারেন। বানাবেন কি করে, রইল রেসিপি;

উপকরণ: ১টেবিল চামচ গোলমরিচ, ২ টুকরো দারচিনি, ১০টা লবঙ্গ, ২টো জৈত্রী, ১টা জায়ফল, ৩ টুকরো গোটা হলুদ, ১টা বড় এলাচ, ১টা ষ্টার আনিস বা চক্রফুল ভালো করে বেটে গুঁড়ো করে সাথে ১ চা-চামচ শা-মরিচ, শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করা ৪ চা-চামচ ধনে ভালো করে মিশিয়ে পাউডার বানিয়ে রাখতে হবে।

MedicineBhog2

প্রণালী: একটি পাত্রে ৪ কাপ জল হাইফ্লেমে দিয়ে ২ টেবিল-চামচ এই মশলার গুঁড়ো, ১০/১২ টা মঞ্জরীসহ তুলসী পাতা, ১ টুকরো থেঁতো করা আদা, ২ টুকরো তেজপাতা দিয়ে ফোটাতে হবে যতক্ষণ না ওই জল অর্ধেক হচ্ছে। ফুটে গেলে ১ টেবিল-চামচ মিছরি, ১/৪ চা–চামচ কেশর দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে ঠান্ডা করে সুতির কাপড় দিয়ে মাটির পাত্রে ছেঁকে তার মধ্যে দুধের মোটা স্বর, ২ টেবিল-চামচ ছানা, ১ টেবিল-চামচ ঘি, ১ টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে দিলেই তৈরী ‘অনসর পনা’ ঔষধি ভোগ। ছেনা চকটার সাথে একে নিবেদন করা হয়।

এই ছেনা চকটা বানানো আরো সহজ। ছানার মধ্যে চাঁপা কলা খন্ড খন্ড করে কেটে সামান্য কর্পূর, গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে নিবেদন করা হয়।

দশমীতে জ্বর বাড়লে ‘দশমুল পাঁচন’ দেওয়া হয়, যা নানা গাছের শিকড়ের মিশ্রণ। থাকে বৃহদ্পঞ্চমুল (বিল্ব,অগ্নিমন্থা,শৌনক, গাম্ভারী,পাটোলা) ও লঘুপঞ্চমুল (শুলপুর্নি, প্রিন্সিপর্ণী, বৃহতী, কান্তাকারী, গোক্ষুর) - এই পাঁচন খেয়ে যখন প্রভুর অরুচি ধরে তখন তিনি মায়ের কাছে আবদার করেন এক অভিনব পদের, আর সেই পদ 'কাখাড়া পিঠে', যার কথা আগেই হয়েছে। দিন পনেরো ধরে এমন সেবাই গ্রহণ করেন প্রভু, তারপর সুস্থ হয়ে কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হয়ে রথের দিন গুন্ডিচায় অর্থাৎ মাসির বাড়ি বেড়াতে যান, মা লক্ষ্মীর বানানো পিঠে খেতে খেতে। এখন চলছে প্রভুর সেই কোয়ারেন্টাইন পর্ব (শাস্ত্র মতে), আপনিও এই পনেরো দিন চাইলে ‘অনসর সেবা’ করে প্রভুর কৃপাধন্য হতে পারেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...