সপ্তপুরী পিঠে

বলব জগন্নাথ মন্দিরের ‘সপ্তপুরী পিঠের’ কথা, যার সাথে আছে পৌরাণিক সংযোগ। ভাদ্র মাসের ‘সপ্তপুরী অমাবস্যার’ দিন এই বিশেষ পিঠে নিবেদন করা হয় জগন্নাথ দেব ও আর এক দেবীকে, একই সাথে। কিন্তু এই মিষ্টির বিশেষত্বই বা কি? বলব, সাথে রেসিপিও।

সমগ্র উড়িষ্যায় এই দিনটি এক বিশেষভাবে পালিত হয়। পুরাণ মতে, এই দিনে পিতা ব্রহ্মার সাত মানস জন্মগ্রহণ করেন, যিনি 'সর্বদেব পিতা' হিসেবেই পূজিত হন। তাই এইদিনে পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে রত হন উড়িষ্যাবাসি। ভিন্ন মতানুযায়ী, রাবণ বধের আগে রামচন্দ্র এইদিনেই না কি মা দুর্গার পূজা করেন। তবে প্রথম মতটি জনমানসে বিশেষ গ্রহণযোগ্য ও প্রচলিত।

কালিদাসের মতে, অযোধ্যা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর মা সীতাকে এইদিনেই তাঁর আশ্রমে নিয়ে আসেন ঋষি বাল্মীকি। অনেক অঞ্চলে সীতা মায়ের উদ্দেশ্যেও মহিলারা উপাচার পালন করেন। কোরাপুটে এইদিন সাত রকমের পিঠে মা ষষ্ঠীকে নিবেদন করা হয় সন্তানের মঙ্গল কামনায়। গঞ্জামে মহিলারা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সাত রকমের সব্জি ভিক্ষা করে, রান্না করে বানিয়ে দেবীকে উৎসর্গ করেন।

এবার আসি পুরীতে। এই দিন জগন্নাথ মন্দির থেকে ‘সপ্তপুরী পিঠে’ কুমোরপাড়ার মা অলাম চন্ডীর মন্দিরে পাঠানো হয়, দেবীকে নিবেদনের উদ্দেশ্যে। এই অলাম চন্ডী হলেন সাত চন্ডীর এক চন্ডী, যিনি চার হাতের দূর্গা রূপে পূজিতা হন এবং প্রচলিত মতে, তিনিই শ্রীক্ষেত্রের রক্ষাকারী। পুরাণ মতে, স্বয়ং জগন্নাথদেব এই সপ্তপুরী পিঠে শক্তির আধার মা অলাম চণ্ডীকে নিবেদনের উদ্দেশ্যেই এক বিশেষ মাটির সরায় ঘন্টা, কাংশ, শংখধ্বনি, ছত্র, সেবক সহযোগে পাঠান এবং মা’ও প্রীত হয়ে তা গ্রহণ করেন। দুই মন্দিরে আজও রীতি, উপাচার মেনেই দ্বি-প্রহর ধুপভোগে অর্থাৎ দুপুর ২টোর ছত্রভোগে একই সাথে নিবেদন করা হয় এই মিষ্টি ওই বিশেষ দিনে।

SaptapuriPithe

এবার আসি এই বিশেষ মিষ্টি প্রসঙ্গে। আক্ষরিক অর্থে ‘সপ্তপুরী’র অর্থ হলো সাতটি পুরি সহযোগে বানানো মিষ্টি। রইলো রেসিপি, বানিয়ে ফেলুন এই মজাদার, অনবদ্য স্বাদের মিষ্টি।

উপকরণ: ২ কাপ আটা, ৪ টেবিল চামচ - ঘি, নারকেল কোরা- ১ কাপ, গুড় -৩/৪ কাপ, ছানা- ১ কাপ, দারচিনি- ১ চা-চামচ, সামান্য আদা কুচি, গোলমরিচ গুঁড়ো - ১চাচামচ, ২ চামচ আটা ও ২ চামচ জল দিয়ে বানানো পেস্ট।

প্রণালী: আটার মধ্যে ঘি ময়ান দিয়ে ভালো করে দু-হাত দিয়ে ঘষে ঘষে মিশিয়ে, অল্প অল্প জল দিয়ে একটু শক্ত করে মেখে মিনিট দশেক ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। এবার কড়াইতে গুড়, নারকেল কোরা, গোলমরিচ গুঁড়ো, ছানা, দারচিনি, আদা কুচি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পুর বানিয়ে নিতে হবে। এবার মেখে রাখা আটা থেকে ৭টি লেচি কেটে ২টো বড় রুটির আকারের পুরি, ২টি মাঝারি, ৩টি তার থেকে খানিক ছোট পুরি বানিয়ে অর্থাৎ মোট ৭টি পুরি বানিয়ে সবার আগে একটি বড়ো পুরি দিয়ে তারমধ্যে নারকেলের পুর দিয়ে, তার উপর মাঝারি পুরি দিয়ে চাপা দিয়ে তার উপর আবার নারকেলের পুর দিয়ে স্তরে স্তরে বানিয়ে শেষ স্তরে আবারো বড় পুরি দিয়ে ঢেকে ওই আটার পেস্ট দিয়ে সুন্দর নকশা করে চারিপাশ আটকে ঘি’তে হালকা আঁচে দু-পিঠ ভেজে নিলেই তৈরী সপ্তপুরী পিঠে। সুন্দরী এই পিঠে একবার খেলে স্বাদ ভুলবেন না, হলফ করে বলতে পারি। এবার তুলসী দিয়ে জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করুন বা বিশেষ অনুষ্ঠানে বানিয়ে ফেলুন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...