মিষ্টি প্রীতি যে শুধু মনুষ্য কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়, তার মহিমা দেবকুলকেও যে কি সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত করেছে তা অন্তত জগন্নাথ দেবের ভোগের তালিকা না দেখলে বিশ্বাস হবে না। আজ ছাপান্ন ভোগের এমন এক পদের কথা বলব যা শুধুমাত্র জগন্নাথ দেবের প্রিয় এমনটা নয়, স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের অতি প্রিয় এই পদ। ধবলেশ্বর মন্দিরে মহা শিবরাত্রির দিন দ্বিপ্রহরে অর্থাৎ দুপুর ১২ টা'র পর এই ভোগ মহাদেবকে নিবেদন করা হয়, যদিও জগন্নাথদেবের নিত্য ভোগের এক বিশেষ পদ এই মিষ্টি।
শ্রীমন্দিরে সারা বছরই জগন্নাথ দেবের নানা উৎসব পালিত হয়, তার মধ্যে অন্যতম ‘চন্দন যাত্রা’। এই চন্দন যাত্রা দিয়ে সূচনা হয় রথ যাত্রার রথ নির্মাণ পর্ব। যদিও এই পুরো উৎসবের সূচনা হয় অক্ষয় তৃতীয়ার সময় থেকেই। যাইহোক, এই চন্দন যাত্রার আচার অনুষ্ঠানের পর জগন্নাথ দেব, বলভদ্র ও সুভদ্রা মহারানীকে নিবেদন করা হয় এই ‘মান্ডুয়া পিঠে’। আর এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক ধাঁধার উত্তর ।
স্কন্দপুরান মতে, চন্দন যাত্রায় যাওয়ার আগে জগন্নাথ স্বামী খানিক মজার ছলেই মা লক্ষ্মীকে বলেন, যে ফিরে এসেই তাঁর প্রবল ক্ষিদে পাবে এবং তখন যেন মা এমন এক মিষ্টি পদ প্রস্তুত করেন, যাতে থাকবে এক সুগন্ধ আর শরীর থাকবে ঠান্ডা। তবে মায়ের এমন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার অভ্যাস তো বহুদিনের, তাও প্রভুর শর্ত সাপেক্ষে আর কী বানানো যায় ভেবে পড়লেন চিন্তায়! অনুচরদের নিয়ে গেলেন পাকশালায়, কিন্তু সেই চেনা চেনা উপকরণ, এ দিয়ে আর কি অভিনবত্ব আনা যায়! অবশেষে শর্ত সাপেক্ষে যা বানালেন তার স্বাদ, গন্ধে জগন্নাথ স্বামী তো বটেই স্বয়ং মহাদেবও মজলেন, আর তাই এই মান্ডুয়া পিঠে। আপনিও বানিয়ে ভোগ নিবেদন করতে পারেন জগন্নাথদেব ও মহাদেবকে। রইলো রেসিপি।
উপকরণ: চালের গুঁড়ো- ২ কাপ, ১ কাপ - গুড়, ১/২কাপ ছানা, ১/২ টেবিল চামচ -মৌরি গুঁড়ো (না পেলে মৌরি গুঁড়ো করে নেওয়া যাবে), ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো, ১/২ টেবিল চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো, নারকেল কোরা।
প্রণালী: কড়াইয়ে গুড় সামান্য জল দিয়ে গরম করে তরল করে তার মধ্যে একে একে এলাচ গুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো, ছানা, মৌরি গুঁড়ো, নারকেল কোরা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে চালের গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে পাক দিয়ে গ্যাস অফ করে ঠান্ডা করে হাত দিয়ে ভালো করে ঠেসে মেখে ছোট ছোট গোলা করে হাতের তালু দিয়ে একটু চ্যাপ্টা করে ডুবো ঘি’তে লো বা মিডিয়াম আঁচে লালচে করে ভেজে তেল ছেঁকে তুলে নিলেই তৈরি জগন্নাথ স্বামীর প্রিয় মান্ডুয়া পিঠে। স্বয়ং মা লক্ষ্মীর বানানো এই পিঠের নরম, অতুলনীয় স্বাদ আর গন্ধে মহাদেবও তুষ্ট হন, তাই সময় করে বানিয়ে ফেলুন আর কৃপাধন্য হন আপনিও।