জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথ দেবের এক বিশেষ স্নান যাত্রা ।
স্কন্ধ পুরাণের কাহিনী অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন জগন্নাথদেবের দারু বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকেই এই স্নান যাত্রা উৎসব শুরু। এই দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি পালন করা হয়।
কীভাবে পালিত হয় জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা?
জৈষ্ঠ পূর্ণিমার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবী এবং সুদর্শন দেবকে বেদী থেকে স্নান মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়। মণ্ডপ সাজানো হয় ওড়িশার নিজস্ব শিল্প রীতিতে। থাকে তোরণ এবং পতাকা। জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ ফুলসাজে সাজানো হয়। পুজো- আরতি শেষ হলে সোনার তৈরি এক কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন । ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র জল দ্বারা পূর্ণ থাকে।এই জল দ্বারা অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়। জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে হাতি বেশে সাজানো হয়। এই সময় সুভদ্রা দেবীকে পদ্ম সাজে সাজানো হয়।
স্নান যাত্রা উৎসবের পর দারুদেব সাধারণের দর্শনের বাইরে থাকেন। মন্দিরে কোনও অনুষ্ঠান হয় না। বলা হয় জগন্নাথ দেবের জ্বর হয়েছে। তাই তিনি বিশ্রামে। এই সময় ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাদেবীকে রতন বেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা হয়। এই সময়কে বলা হয় অনাবাসর কাল মানে পূজা করার জন্য অযোগ্য সময়। স্নান করানোর ফলে বিগ্রহ সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়। এই ১৫ দিনে জগন্নাথ দেবকে আগের সাজে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৬ তম দিনে জগন্নাথ দেবকে আবার সবার দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।১৬ তম দিনেই রথ যাত্রা।
স্নান যাত্রা নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত আছে।
জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভু মনুর যজ্ঞের প্রভাবে জগন্নাথ দেব আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসেবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মনু। সেই জন্মদিন উপলক্ষ্যেই এই বিশেষ স্নান উৎসব পালিত হয়।
তবে এ বছর অবশ্য পরিস্থিতি আলাদা। জগন্নাথ মন্দিরের ৬২৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম, গর্ভগৃহে স্নান করলেন জগন্নাথ। খুব অল্প সংখ্যক সেবাইতের উপস্থিতিতে। গত বছর ফনি, এবছর করোনা সংক্রমণ এবং টানা লকডাউনের জেরে বিপর্যস্ত অবস্থা। জমায়েতেও নিষেধাজ্ঞা। তাই এভাবেই প্রায় ভক্তদের উপস্থিতি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হল স্নান যাত্রা উৎসব।