মা লক্ষ্মীর এক্সপেরিমেন্টাল কাখড়া পিঠে

জ্বর হলে শুধু মানুষের রুচি কমে, তাদেরই শুধু স্বাদ বদলের প্রয়োজন হয় এমনটা নয়। স্বয়ং ভগবানেরও এমনটা হয়। তাও আবার স্বয়ং জগন্নাথ দেবের। আর সেই স্বাদের বদল ঘটাতেই মা লক্ষ্মীও কিন্তু রীতিমতো এক্সপেরিমেন্টাল রান্না করেন। আর সেই সবই ছাপ্পান ভোগের অংশ। তবে মায়ের এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে মানবজাতির খাবার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট প্রবণতা বেড়েছে কিনা জানা নেই, কিন্তু স্কন্দপুরান মতে, ভোজন রসিক জগন্নাথ দেবকে তুষ্ট করতে মা লক্ষ্মীর রান্নায় যে কিছু অভিনবত্ব থাকবে না সে কি হয়! আজ বলবো তেমনি এক অভিনব মজাদার স্বাদের পিঠের কথা।

স্নানযাত্রার পর জগন্নাথ দেব তো পড়েন জ্বরে। আর তখন রুচি ফেরানোর তোড়জোড়ে সামিল হন মাও। স্কন্দপুরান মতে, জ্বরে অস্থির জগন্নাথ স্বামী ক্রমাগত তার পরিচিত খাবার প্রত্যাখানের পর মা লক্ষ্মীর কাছে আবদার করেন এক্কেবারে অভিনব এক পদের, যদিও ভোজন রসিক প্রভুর এহেন আব্দারের সাথে মা'এর পরিচিতি বহু দিনের। আর সেই অভিনবত্বের সন্ধানে মা তার প্রিয় অনুচরদের নিয়ে সুজি, নারকেল, গোলমরিচ আর গুড় সহযোগে বানালেন এক অদ্ভুত পিঠে- ‘কাকরা’ বা 'কাখড়া'। গুড় আর গোলমরিচের স্বাদে রুচি তো ফিরলই সাথে প্রভু যারপর নাই হলেন প্রীত। আর সেই থেকেই আজও শ্রী মন্দিরে প্রতিদিন মধ্যাহ্নধুপ ভোগে অর্থাৎ দুপুর ১২.৩০ থেকে ১.০০ টার মধ্যেই নিবেদন করা হয় এই পিঠে। পুরান মতে, প্রভু রথযাত্রার সময় গুন্ডিচাতে অর্থাৎ মাসির বাড়ি হাওয়া বদলে এই কাকরা পিঠে খেতে খেতে যান,আবার সাথে করে নিয়েও যান দু'সরা। সামনেই আসছে রথ, সাম্যান্য উপকরণে বানানো এই পিঠে নিবেদন করে প্রভুর কৃপাধন্য হতে পারেন আপনিও। রইলো রেসিপি।

Kakhara1

উপকরণ: দেড় কাপ গ্রেট করা নারকেল, ২০০গ্রাম গুড়, ১ কাপ ছানা, ২ টেবিল চামচ ভাঙা কাজু, ১/২ টেবিল চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো, ১ চা-চামচ ছোট এলাচ গুঁড়ো, ৪০০ গ্রাম সুজি, ঘি।

প্রণালী: কড়াইয়ে আগে জল দিয়ে মিডিয়াম আঁচে ২০০ গ্রাম গুড় ভালো করে গলিয়ে কোরানো নয়, দেড় কাপ লম্বা করে গ্রেট করা নারকেল ওই গুড়ের সাথে ভালো করে মিশিয়ে তার মধ্যেই ১ কাপ ছানা, ভাঙা কাজু, গোলমরিচ গুঁড়ো, ১ চা-চামচ ছোট এলাচ গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে কড়াই থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে।

এবার বড় পাত্রে দেড় লিটার জল দিয়ে নুন (সামান্য), ২ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে ভালো করে হাই ফ্লেমে ফুটিয়ে তাতে ৪০০ গ্রাম সুজি দিয়ে মিডিয়াম থেকে লো ফ্লেমে ঘন করে ডো বানানোর অবস্থায় এনে ঠান্ডা করে ভালো করে হাত দিয়ে ঠেসে মেখে একটু বড় লেচি করে তার মধ্যেই নারকেলের পুর দিয়ে গোল করে ডুবো ঘি'তে লালচে করে ভাজলেই তৈরী নরম নরম কাকরা পিঠে। এবার তুলসী দিয়ে রথের দিন ভোগ নিবেদন করুন। নারকেল, ছানা আর গোলমরিচের মিশেলে এর স্বাদ যে অসাধারণ তা বলাই বাহুল্য। তাই দেরি না করে সময় করে বানিয়ে ফেলুন জগন্নাথ স্বামীর প্রিয় এই পিঠে - মন্দ লাগবে না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...