মারী বন্দি মানুষ ফিরছে বইয়ের কাছে

ইউরোপ জুড়ে করোনার দাপাদাপি। ব্রিটেনেও ছবিটা খুব আলদা নয়। ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের হার। মৃতের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। ঘর বন্দি মানুষ।
রোজকার চেনা দৌড় ঝাঁপের জীবনটা আচমকাই যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। ভয়ের গ্রাসে বাড়ছে বিপন্নতা। বাড়ছে অবসাদ।কী করবে ঘরবন্দি মানুষ। জরুরি পরিষেবা বাদে সব কিছু বন্ধ।অনেকটা এক ঘেঁয়েমির হাত থেকে বাঁচতেই যেন বইয়ের কাছে ফিরছে মানুষ। ফিরছে পড়ার অভ্যাস। কিন্তু বই সংগ্রহের উপায় কী।

বিশেষ করে যাদের লাইব্রেরি বা রিডিং হাউসে গিয়ে বই পড়ার অভ্যাস আছে। খাওয়া- ঘুমের মতোই জরুরি বইপড়া, এবং এখনও সড়গড় হয়ে উঠতে পারেননি ই- বুক টেকনোলজিতে, কীভাবে বই জোগাড় করবেন তাঁরা লকডাউনে?
করোনার দিনগুলোতে বইপ্রেমীদের সাহায্যের জন্য অভিনব উপায় বের করেছে লন্ডনের কিছু বইশপ। সাদা বাংলায় ‘বইয়ের দোকান’।

না, কোনও বড় প্রকাশনা সংস্থা বা বুক হাউস নয়, ব্রিটেনের কিছু স্বাধীন এবং ছোট বই ব্যবসায়ী। কিন্তু তারা পুরো দস্তুর সাহিত্য প্রেমী।
এই সব সংস্থা পায়ে হেঁটে বা বাইক সার্ভিসে বই পৌঁছে দিচ্ছেন পাঠকের দরজায়। করোনা সংক্রান্ত সমস্ত নিষেধাজ্ঞা এবং বিধি মেনেই। বইয়ের জন্য পাঠককে একটা টাকাও ব্যয় করতে হবে না।

শুরুটা করেছিলেন স্যাম ফিশার নামে এক বই প্রেমী। লন্ডনে তাঁর নিজের বুক শপ আছে একটি। করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর হঠাৎ একদিন নিছক খেয়ালের বশেই সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং সাইটে একটি পোস্ট দেন। কেউ যদি বই পড়তে উৎসাহী হয়, তাহলে পছন্দের বইয়ের নাম জানাতে পারেন। বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে।

বেশ সাড়া পান পোস্টটিতে। অনেক মানুষ আগ্রহ দেখান বই চেয়ে। পরবর্তী সময়ে পায়ে হেঁটে পৌঁছে দেওয়ার বদলে বাইক ব্যবহারের পরিকল্পনা আসে। তৈরি হয় একটি টিমও। এই মুহুর্তে গোটা ব্রিটেন জুড়ে কাজ করে চলেছে ফিশারের বই প্রেমি দলটি। তাঁরা চাইছেন বই পড়ার পুরনো অভ্যাস ফিরে আসুক মানুষের মধ্যে।

তবে করোনার ছায়া যেভাবে দীর্ঘ হচ্ছে তাতে কতদিন এই পরিষেবা চলবে তাতে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ফিশার জানিয়েছেন, ‘ প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। কিছুই আন্দাজ করা যাচ্ছে না। কতদিন বই বহনের অনুমতি মিলবে তাও অনিশ্চিত। যদি লম্বা সফর চালানো যায় তাহলে সেটা তাঁর এবং টিমের জন্য দারুণ ব্যাপার হবে।

কিছুটা ভয়ে ভয়ে শুরু করেছিলেন ফিশার। অতিমারীতে বিপর্যস্ত জন জীবন। মানুষ আতঙ্কে। সাড়া কী আর মিলবে?
অভূতপূর্ব ভাবে সাড়া দিচ্ছেন মানুষ। বাড়ির বাইরে পা রাখা অসম্ভব। তাই বাড়ি তে বসে হাতে বই পাওয়ার সুযোগ কেউ ছাড়তে চায় না। ফিশারের দল জানিয়েছে, মানুষ চাইলে ঝুঁকি নিয়েও তারা কাজ চালিয়ে যাবে।

কেমন বই বেছে নিচ্ছে মানুষ?
ফিশার জানিয়েছেন, অনেক সময় ধরে পড়া যাবে এমন বই চাইছে মানুষ। বড় গল্প, উপন্যাস, কবিতা। পাঠকদের বই পছন্দের ধরন দেখে মনে হচ্ছে বই আঁকড়ে ভয়াবহতা থেকে ‘ রিলিফ’ পেতে চাইছে তারা। এমন বই যা অন্য জগতে নিয়ে যাবে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও। আশাবাদের সন্ধান দেবে বইয়ের পাতায় লেখা শব্দগুলো।

স্যাম ফিশার একা নন। এভাবে আরও প্রায় ১ ডজন সংস্থা এগিয়ে এসেছে করোনায় ঘরে আটকে থাকা মানুষদের কাছে বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা ইমেল করে বইয়ের কথা জানালেই হল। বই নিয়ে পাঠকের দরজায় রেখে আসছেন তাঁরা।

লেখকদের কেও নিয়ে আসা হচ্ছে পাঠকদের দরবারে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা। বই আর নতুন লেখা নিয়ে নিয়মিত কথোপথন চলছে লেখক এবং পাঠকদের মধ্যে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...