সরা-লক্ষ্মীর আখ্যান

মা দুর্গা কৈলাসের পথে রওনা হয়ে গেলেই ফাঁকা মনের দেউলে খুশির আমেজ বয়ে নিয়ে আসে কোজাগরী পূর্নিমা তিথি। বাঙালি ব্যস্ত হয়ে ওঠে ঘরের ঠাকুরের পুজোর আয়োজনে। ফি ‘বেস্পতিবার’ যাঁকে মিষ্টি নৈবেদ্য নিবেদন না করে জল খায় না গৃহী-ঘরনী শারদ পূর্নিমায় তাঁরই উৎসব। ভরা জ্যোৎস্নার রাতে ডাক দিয়ে যান তিনি, ‘কেউ কি জেগে আছে?’

জেগে থাকে ভক্তরা। তাঁর ডাকের আশায়। শ্রী-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক ঘর-দুয়ার। সন্তান দুধে-ভাতে থাকার অভিলাষ মনের মাঝে।

দেবী লক্ষ্মী সম্পদের দেবী। ধন, ঐশ্বর্যের পূর্ণতা দান করেন বরদারূপে। অন্য মতে তিনি কৃষির দেবীও। ধান-শস্য-ফসলে উর্বরতার দেবী। তাই দেবীর ঝাঁপিতে শস্যদানা। বাম-হাতে ধানের ছড়া। প্রাচীন সময়ে লক্ষ্মীকে নদীর দেবীও মনে করা হত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই ধারনা বদলে যায়। দেবী লক্ষ্মী বহুবিধ আচারে পূজিতা। অঞ্চলে ভেদেও এসেছে বৈচিত্র।      

এপার বাংলায় লক্ষ্মী-পুজো হয় প্রতিমায়। বাংলাদেশে পটে। মাটির সরায় লক্ষ্মী এঁকে পুজো করা হয়।

পরবর্তী সময়ে সরায় লক্ষ্মী বাংলার সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে ওঠে। লক্ষ্মী প্রতিমায় সেরকম বৈচিত্র বা ভাগ দেখা না গেলেও সরা কিন্তু বৈচিত্রে রঙিন।

sora

আগে ১৩ রকমের সরা তৈরি হত। তাদের নামও ছিল আলাদা। বাংলা দেশের ঢাকা এবং ফরিদপুর বিখ্যাত সরালক্ষ্মীর জন্য। ঢাকাই সরা, ফরিদপুরি, সুরেশ্বরী,গনকী- এই চার ধরনের সরা হয়। তবে মূলত বাংলাদেশেই মেলে।

 ঢাকাই সরা নানা রকমের হয়। জোড়া লক্ষ্মী থাকে, পাঁচ লক্ষ্মী, কোথাও কোথাও আবার সরায় লক্ষ্মীর সঙ্গে সখী।

 সরায় লক্ষ্মীর উদ্ভব সম্পর্কে মনে করা হয় সরা গর্ভবতী নারীর প্রতীক। ভূমি এবং উর্বরতার সঙ্গে যেহেতু লক্ষ্মীর দেবীমাহাত্ম্যের সংযোগ আছে তাই সরার পিঠেই দেবীর চিত্ররূপ ফুটিয়ে তুলতেন শিল্পীরা।

মাটির সরার ওপর সাদা রং করে নেওয়া হয় প্রথমে। তার ওপর মোটা রেখায়, উজ্জ্বল রঙে আঁকা হয় দেবী। সঙ্গে থাকে পেঁচা, ধানের শিষ, নৌকা।

এপার বাংলার নদীয়া, বর্ধমানের বিভিন্ন গ্রামে লক্ষ্মী সরা আঁকা হয়। কলকাতার কুমোরটুলিতেও লক্ষ্মী প্রতিমার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মীর সরা পাওয়া যায়।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...