রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে আস্ত লাইব্রেরি

রাস্তার ধারের চায়ের দোকান। কাঠের নড়বড়ে কাঠামো। নীল পলিথিন শিট দিয়ে ঢাকা দোকানের চাল।

আর পাঁচটা সস্তার চায়ের দোকান থেকে কিছু মাত্র আলাদা নয়। আলাদা করে নজর কাড়তে পারে এমন কোনও বিশেষত্বও নেই। কিন্তু তবু কেরলের প্রত্যন্ত গ্রামের আপাত অখ্যাত এই চায়ের দোকানটাই দক্ষিণ ভারতের সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছে বড় আদরের, বড় কাছের স্থান।

কেরল থেকে ৩৫ কিমি দূরে কান্নুর গ্রাম। সেখানেই আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে একটি চায়ের দোকান শুরু করেন সুকুর পেদানগোদে। নাম দেন ‘ভারান্দা’।

কিছুদিন যেতে না যেতেই ‘ভারান্দা’ তার অন্যরকম পরিচয় তৈরি করে। শুধু চা বা চায়ের সঙ্গে আড্ডা নয়। চায়ের দোকানের মধ্যেই একটা আস্ত লাইব্রেরি। যেখানে পড়াশোনা বা বই চর্চা করার জন্য টাকা ব্যয় করতে হয় না।

‘ভারান্দা’ শুধু চায়ের দোকান নয়, বৌদ্ধিক চর্চার কেন্দ্র।  

রাস্তার ধারে, নদীর বাঁকে এক চিলতে দোকান। দক্ষিণের অন্যতম নাম করা সাহিত্য সম্মেলনের মঞ্চ এটাই। এই চায়ের দকানেই একটা আস্ত লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন তিনি। মানুষ আসে। চা খায়। বই পড়েন। বই নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে চর্চা চলে।

কান্নুরের স্কুলে তিনি সাহিত্য উৎসবের আয়োজনও করেন। স্থানীয় কলেজে সাহিত্য সভা এবং অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত আমন্ত্রিত থাকেন।

প্রায় পঞ্চাশ ছোঁয়া পেদানগোদে আদ্যন্ত বইপ্রেমী মানুষ। কিন্তু তাঁর জীবনের শুরুটা হয়েছিল একেবারেই ছকভাঙ্গা পথে।

নিজে স্কুলের গন্ডিতে বাধা পড়েননি। প্রথাগত শিক্ষাকে বলা যায় একপ্রকার অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তা বলে থেমে থাকেনি বৌদ্ধিক চর্চা।  

শুধু কেরালা নয়, দক্ষিণের বহু বিখ্যাত লেখক নিয়মিত আসতেন সেখানে।

গত চার বছর ধরে প্রতি মাসে এই আয়োজন করে আসছেন তিনি

ইস্কুলছুট পেদানগোদে নিজে পরিচালনা করেন আলোচনা সভা। বহু বিখ্যাত কবি লেখক ভারান্দার সাহিত্য সম্মেলন এসেছেন।

পেদানগোদে জানান, প্রতিটি অনুষ্ঠান তিনি ফেসবুক পেজে জানিয়ে দেন। বিয়ের উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠক-লেখক ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ’ সেশনের ব্যবস্থাও থাকে।

ছোটবেলায় স্কুল ফাঁকির হাজার এক বাহানা খুঁজে বের করতেন। বেজায় ভয় পেতেন অঙ্কে। মাঝে মাঝেই ক্লাস পালানো। শেষ পর্যন্ত একদিন বন্ধ করে দিলেন স্কুল যাওয়া। কিন্তু তা বলে পড়ায় ফাঁকি নেই।  লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ঠোঙ্গা, পথ চলতি ছেঁড়াপাতা হাতে যা আসত কোনটাই না পড়ে ফেলে দিতেন না।

বাড়িতে বারোটি ভাইবোন। সংসারের সুবিধার জন্য বাজারে মাছ বিক্রি করতেন। সেই টাকা দিয়ে বই কিনতেন।

পেদানগোদের এক বন্ধুর প্রেস ছিল। সেখানে নিয়মিত যেতেন তিনি। পেদানগোদে প্রেসের বাতিল কাগজ নিয়ে আসতেন সেখান থেকে। কবিতা লেখার জন্য।

ছোটবেলায় বই কেনার জন্য নানা রকম কৌশল বের করতেন তিনি। অবস্থাপন্ন বন্ধুদের বেনামে কবিতা লিখে দিতেন। বিনিময়ে তাঁকে বই দিতে হতো তাদের।

নিজের কবিতার সংকলন প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। একটি উপন্যাসও লিখেছিলেন তিনি। তাঁর চায়ের দোকানের নামেই।

তিনি বলেন সাধারন মানুষের মধ্যে পড়ার অভ্যাস যাতে বাড়ে, বিশেষ করে আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে তার জন্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই।

অনেক প্রকাশনা সংস্থাই তাদের প্রকাশিত বই পেদানগোদেকে  দিয়ে যান।  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...